মাটির ডাম্পার চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ক্ষোভ

জমির চরিত্র বদলের অনুমতি ছাড়াই মাটি কাটা হচ্ছে। আর তাতে মদত দিচ্ছে পঞ্চায়েত ও ভূমি দফতরের একাংশ এমন অভিযোগ তুলে জেলাশাসকের কাছে চিঠি পাঠাল বিজেপি। তাদের দাবি, এর ফলে রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। দিনরাত মাটি বোঝাই ডাম্পার এলাকা দিয়ে চলাচলের ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বুদবুদ শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৬
Share:

ডাম্পার আটকে বিক্ষোভও হয় মাঝে-মধ্যে।—নিজস্ব চিত্র।

জমির চরিত্র বদলের অনুমতি ছাড়াই মাটি কাটা হচ্ছে। আর তাতে মদত দিচ্ছে পঞ্চায়েত ও ভূমি দফতরের একাংশ এমন অভিযোগ তুলে জেলাশাসকের কাছে চিঠি পাঠাল বিজেপি। তাদের দাবি, এর ফলে রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। দিনরাত মাটি বোঝাই ডাম্পার এলাকা দিয়ে চলাচলের ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি সরকারি প্রকল্প ও একটি বেসরকারি প্রকল্পের প্রয়োজনে আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের পণ্ডালি, সোঁয়াই ও বলরামপুর মৌজার বিভিন্ন জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। সে জন্য দিনের নানা সময়ে প্রচুর ডাম্পার কোটা গ্রামের পাশ দিয়ে যাতায়াত করছে। পণ্ডালি গ্রামের কাছে ডিভিসি-র ক্যানালের সেতু পেরিয়ে সেগুলি গন্তব্যে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রচুর মাটি বোঝাই ডাম্পার যাওয়া-আসা করায় রাস্তা খারাপ হচ্ছে। তা ছাড়া দুর্ঘটনায় পড়ছেন পথচারীরা।

বাসিন্দারা জানান, গত ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাটি বোঝাই একটি ডাম্পার পণ্ডালি গ্রামের এক বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে যায়। বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরের দিন সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা ডাম্পারগুলি আটকে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা দাবি করেন, সেই সময় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, দু’দিনের মধ্যে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করবে ডাম্পারগুলি। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার পরেও বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করে ডাম্পারগুলি যাতায়াত করছিল। মঙ্গলবার সকালেও কোটা গ্রামের এক বাসিন্দা ডাম্পারের ধাক্কায় জখম হন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকালে সাইকেলে চড়ে সার কারখানায় কাজ করতে যাচ্ছিলেন শান্ত লোহার। ডিভিসি ক্যানালের কাছে একটি ডাম্পার তাঁকে ধাক্কা মারে। তিনি ক্যানালে পড়ে গিয়ে আহত হন। সাইকেলটিও দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। এই ঘটনার পরেও এলাকার বাসিন্দারা ডাম্পারগুলি আটকে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভ থামায়। কোটার বাসিন্দা কিষান কর্মকার দাবি করেন, নানা পক্ষকে বারবার এ বিষয়ে জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, “রাতবিরেতে গাড়ির শব্দে বাড়িতে টেকা দায় হচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। প্রাণহানির সংশয় থেকে যাচ্ছে।” বাসিন্দারা আরও অভিযোগ করেন, মাত্রাতিরিক্ত মাটি পরিবহণের ফলে বেহাল হয়ে পড়া রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাও বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

ওই সব এলাকায় মাটি অবৈধ ভাবে কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে প্রায় ১০-১৫ ফুটের মতো। অথচ, কৃষিজমির চরিত্র পরিবর্তনের জন্য ভূমি দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়নি। বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য নরেশ কোনার অভিযোগ করেন, এ ভাবে মাটি কাটার ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। মাটি মাফিয়াদেরও দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিজেপির আরও অভিযোগ, এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী। সেখানে চাষের জমি কেটে পুকুরের মতো তৈরি করা হচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। নরেশবাবু বলেন, “অনুমতিবিহীন কৃষিজমির চরিত্র পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমরা জেলাশাসকের কাছে আবেদন করেছি। তাঁকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।”

আউশগ্রাম ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নিখিল ঘোষ বলেন, “ওখানে অনুমতি নিয়েই মাটি কাটা হচ্ছে।” জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। জেলা ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রেও জানানো হয়েছে, জমির চরিত্র বদলের অনুমতি ছাড়া মাটি কাটার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন