মাঠ দেখভালে উদাসীন প্রশাসন, নালিশ

শিল্পাঞ্চলের খেলার মাঠগুলির খারাপ অবস্থা এবং পরিচালন ব্যবস্থায় অনিয়মের কথা রাজ্যের ক্রীড়া দফতরকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে জানাল মহকুমা ক্রীড়া দফতর। এলাকার মাঠগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বা রক্ষণাবেক্ষণেও সরকার উদাসীন বলে অভিযোগ করলেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১১
Share:

রানিগঞ্জের সিহারসোল রাজ ময়দানের এই হাল।—নিজস্ব চিত্র।

শিল্পাঞ্চলের খেলার মাঠগুলির খারাপ অবস্থা এবং পরিচালন ব্যবস্থায় অনিয়মের কথা রাজ্যের ক্রীড়া দফতরকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে জানাল মহকুমা ক্রীড়া দফতর। এলাকার মাঠগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বা রক্ষণাবেক্ষণেও সরকার উদাসীন বলে অভিযোগ করলেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

অণ্ডালের উখড়ায় একটি বড় মাঠ রয়েছে। সেখানে সারা বছরই প্রায় ক্রিকেট, ফুটবল এবং অন্যান্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই মাঠেই প্রতি বছর ঝুলনের সময় সার্কাস বসে। দুর্গাপুজোর সময় আতসবাজির প্রদর্শনীও হয় এই মাঠেই। উখড়া স্পোটর্স অকাডেমির সদস্য কৃষ্ণ রায় জানান, এর ফলে মাঠটি গর্তে ভরে যায়। এর জেরে বর্ষায় কাদায় ভরে যায় সারা মাঠ। বক্তারনগর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জীবন মণ্ডল জানান, রানিগঞ্জ শহরে রাজবাড়ি মাঠটি বেশ বড়। কিন্তু ওই মাঠেও দুর্গাপুজো সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃষ্টির দিনে খেলা চালাতে অসুবিধা হয় বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা।

খান্দরা মাঠের মাটি কাঁকুরে হওয়ায় ঘাস হয় না। ওই এলাকার প্রাক্তন খেলোয়াড় ও স্থানীয় সবুজ সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অনুপ সিংহ জানান, মাঠে পড়ে গেলে খেলোয়াড়দের জখম হতে হয়। তিনি বলেন, “ডিভিসিকে অনেকবার ওদের ‘অ্যাস পন্ডে’র ছাই মাঠে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছি।’’ অনুপবাবু আরও জানান, ক্রীড়া দফতরের কাছে মাঠটিকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়াম তৈরির আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয় নি। এনইউসিএসি মাঠের মাটি আবার পাথুরে।

Advertisement

অণ্ডাল রেল শহরে আবার রাজ্য সরকারের নিজস্ব কোনও মাঠ নেই। ভরসা একমাত্র রেলের জিআর গ্রাউন্ড। ওই এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য চন্দ্রভানু দত্তের কথায়, “দীর্ঘদিন আবেদন করার পর রেল মাঠটিকে ঘিরে দিয়েছে। কিন্তু এখনও ছাউনি দেওয়া বসার জায়গা নেই। স্টেডিয়ামের কোনও কার্যালয়ও নেই। দুটো দরজায় ভাঙা। রক্ষণাবেক্ষণেরও অভাব রয়েছে।”

রানিগঞ্জের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় মূলত ৭টি মাঠে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মাঠ রবিন সেন স্টেডিয়াম। এছাড়া শহরের উপকন্ঠে রানিগঞ্জ ব্লকের বেঙ্গল পেপার মিল ও বক্তারনগর মাঠও খেলোয়াড়দের কাছে বেশ প্রিয়। কিন্তু বর্তমানে সিপিএম পরিচালিত রানিগঞ্জ পুরসভার সঙ্গে তৃণমূল প্রভাবিত রানিগঞ্জ জোনাল স্পোটর্স কমিটির মধ্যে বিবাদের জেরে বছর খানেক ধরে রবিন সেন স্টেডিয়ামে জোনাল স্তরের কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায় নি। চলছে শুধুমাত্র একটি প্রশিক্ষণ শিবির।

পেপার মিল মাঠেও নিয়মিত খেলা হয় না বলে জানান এলাকার প্রাক্তন খেলোয়াড় রামু সরকার। চলতি বছরে বহুদিনের পুরনো ফুটবল প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয় নি। রামুবাবুর দাবি, এই মাঠটিকে ব্লক পর্যায়ে স্টেডিয়াম হিসাবে গড়ে তোলা যেত। কিন্তু পেপার মিল এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাম বা ডান কোনও সরকারই এ নিয়ে বিশেষ কোন আগ্রহ দেখায় নি।

রানিগঞ্জের অশোক সঙ্ঘ, রেল মাঠে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ওই ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা মলয় রায় জানান, এই মাঠটি আয়তনে ছোট হওয়ায় ‘নাইন সাইটে’ খেলার আয়োজন করতে হয়। একই সমস্যা আসানসোলের কুমারপুরে ত্রিমূর্তি মাঠ, বার্নপুরের রাষ্ট্রহিন্দের মাঠেও। আসানসোলের ব্যারেট ক্লাবের মাঠে একসঙ্গে দশ জনের বেশি খেলতে পারে না। বার্নপুরের নববিকাশ মাঠ বা আসানসোল দক্ষিণের ডামরা হাটতলা মাঠে অল্প বৃষ্টি পড়লেই জল দাঁড়িয়ে থাকে। নববিকাশের কোষাধ্যক্ষ রূপক সরকার বলেন, “ মাঠের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হওয়ায় এই হাল।”

আসানসোল স্টেডিয়ামটি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আসানসোল ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমল সরকার আঙুল তুলেছেন মাঠের বিধি নিয়ন্ত্রণ না থাকার দিকে। তাঁর অভিযোগ, এখানে সারা বছর এলাকার বেশ কয়কটি ক্লাবের ছেলেরা অভ্যাস করতে আসে। ফলে কোনও প্রতিযোগিতার আগে প্রায় প্রতি বছরই নতুন করে ঘাস পুঁততে হয়। ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আগে মাটি কিনে এনে মাঠ সমতল করা হয়। আসানসোল স্টেডিয়ামে প্রবেশ অবাধ। শুধু তাই নয়, স্টেডিয়াম শুধুমাত্র তার দিয়ে ঘেরা থাকায় টিকিট বিক্রি করে খেলার ব্যবস্থা করতেও সমস্যায় পড়তে হয় উদ্যোক্তাদের।

বার্নস্ট্যান্ডার্ড স্টেডিয়ামে আবার বছর কয়েক আগে মাঠের যাবতীয় সরঞ্জাম চুরি যায়। তার ফলে দু’বছর কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায় নি। কুলটির বড় মাঠ, বুধা মাঠ, আসানসোল পলিটেকনিক কলেজের মাঠ সারা বছর পরচর্যার অভাবে বেহাল। পরিচর্যার অভাবে হীরাপুরের কালাঝরিয়া মাঠটি চোর কাঁটায় ভরেছে। মিঠানীর মাঠটি বেশ ঢালু হওয়ায় খেলা চালাতে অসুবিধা হয়। পুরোষোত্তমপুরে মাঠ ভাল থাকলেও এখানে খেলার দল না মেলায় মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারে না। অমলবাবু বলেন, “জামুড়িয়ায় বেশ কয়েকটি ভাল মাঠ থাকলেও ওই ব্লকের বেশিরভাগ দলই মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়। বহুবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ওই ব্লকের সব দলগুলোকে নিয়ে বসে ব্লক পর্যায়ের প্রতিযোগিতার আয়োজন করাতে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয় নি।” মহিশীলা মাঠটিকে আবার এলাকার মানুষ রাস্তা বানিয়ে ফেলায় মাঠটিতে খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। অমলবাবু জানান, আসানসোলে রেল স্টেডিয়াম ও সেল আইএসপির ফুটবল ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম খুব ভাল মাঠ, কিন্তু সেখানে সপ্তাহে দু’দিনের বেশি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাকে প্রতিযোগিতা আয়োজন করার অনুমতি মেলে না। কুলটির সাঁকতোড়িয়ায় ইসিএল-এর কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামে ৫০-এর দশকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক লেন হাটন ও করনেড হান্টে খেলে গিয়েছেন। কিন্তু এই মাঠটি সম্পর্কে ইসিএল-এর প্রাক্তন ফুটবল কোচ অশোক আচার্যের বলেন, “মাঠের ৩টি দরজা সবসময় খোলা থাকায় মাঠটি রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। চব্বিশ ঘন্টার কর্মী নিয়োগ করা দরকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন