অমরপুরে দামোদরের পাড়। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট আসে, চলেও যায়। নদীর পাড় ভাঙা থামে না।
গলসি ১ ব্লকের অমরপুর গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদীর পাড় ধসে একের পর এক চাষের জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। কোন দিন না ভিটেটুকুও হারাতে হয়। নদীর জল বাড়লেই রাতের ঘুম উড়ে যায় তাঁদের। এ বারের ভোটে সব প্রার্থীদের কাছে গ্রামবাসীদের তাই একটাই দাবি, ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
অমরপুরের ৫০ মিটারের মধ্যেই বইছে দামোদর। এখন যে দিকে নদীর গতিপথ এক সময় সেখানেই চাষের জমি ছিল বাসিন্দাদের। এখন সবই জলের তলায়। এলাকাবাসীদের দাবি, নদীর ওপাড়ে বাঁকুড়ায় বালির বাঁধ দেওয়ার ফলে দামোদর তার গতিপথ পাল্টেছে। এখন তা বইতে শুরু করেছে গলসী ১ নম্বর ব্লকের এই গ্রামের পাশ দিয়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন ভাঙন রোধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়াতেই তাঁদের এই দুর্ভোগ। অমরপুরের বাসিন্দা মলয় পাল জানান, গ্রাম থেকে নদীর দূরত্ব দিনের পর দিন কমছে। নদী এতটাই কাছে চলে এসেছে যে নদীর পাড় ভেঙে আস্তে আস্তে কৃষিজমিগুলি নদীর গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হলে বা জল ছাড়ার ফলেও নদীতে জল বেড়ে যায়। তখন নদী তাঁদের গ্রামের পাশে পাড় ভাঙতে শুরু করে। ফলে প্রতি বছরই জমি হারান বেশ কয়েকজন। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, যেটুকু বাকি আছে তা-ও হয়তো কোনদিন তলিয়ে যাবে। মলয়বাবু বলেন, “বর্ষার সময় গ্রামের অনেকেই রাত জেগে থাকেন। যাতে হঠাৎ করে নদীর পাড় ভেঙে গেলে প্রাণটুকু নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালাতে পারেন।”
এমনিতেই গ্রামের অধিকাংশ ঘরই চাষবাসের উপর নির্ভরশীল। নদীর পাড়ে জমি হওয়ায় চাষাবাদও ভালই হয়। ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের সব্জি চাষ করেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু নদীর পাড় ক্ষয়ে অনেক জমি নদীর তলে চলে যাওয়ায় অনেককেই জমিহারা হয়ে অন্যের জমিতে খাটতে হয়। বা বেছে নিতে হয় আর কোনও পেশা। অমরপুরের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা অনিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত দু’বছর ধরে এলাকার প্রায় দুশো বিঘে জমি নদীর জলে চলে গিয়েছে। জমিগুলি সবই দুফসলি বা তিনফসলি। অনিলবাবু বলেন, “আমাদের পরিবারেরও প্রায় সাত আট বিঘে জমি এই দু’বছরে নদীতে মিশে গিয়েছে। যেটুকু বাকি আছে তাও এ বছর হয়তো ভাঙনের কবলে পড়বে।” তাঁর আশঙ্কা, চাষের জমি জলে চলে গেলেই গ্রামের ভিতরেও নদী ঢুকে পড়বে। তবে সবথেকে খারাপ অবস্থা চোঙপাড়ার। ওই পাড়ার বাসিন্দা সুখনাথ বাগ্দি, তরণী বাগ্দিরা জানান, বর্ষার সময় ধুপধাপ করে পাড় ভাঙার শব্দ শোনা যায়। সবসময়ই আতঙ্কে থাকেন বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, “আমরা নদীর পাড়ে চাষ করে জীবন কাটাই। কিন্তু যেভাবে পাড় ভেঙে যাচ্ছে মনে হয় না আর বেশিদিন আমরা এখানে থাকতে পারব।”
মাস ছয়েক আগে বাঁধ গড়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়ও। তবে কিছুই না হওয়ায় গ্রামের মানুষের ভরসা এখন ভোট। গ্রামে প্রচারে যে দলই আসছে, গ্রামবাসীদের একটাই আর্জি, ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করুন। বাঁধ গড়ার ব্যবস্থা করুন। গ্রামবাসীদের আর্জির উত্তরে আশ্বাসও দিয়েছেন প্রার্থীরা। গলসী বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী গৌর মণ্ডল বলেন, “এলাকার বাসিন্দারা ভাঙন রোধের জন্য আমার কাছে দাবি করেছেন। জিতলে যথাসম্ভব চেষ্টা করব।” ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নন্দলাল পণ্ডিতও বলেন, “প্রচারে গিয়ে এই সমস্যা শুনেছি। আমি নির্বাচিত হলে আন্তরিক ভাবে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।” বিজেপির প্রার্থী সুন্দরলাল পাশোয়ানও বলেন, “জিতি বা হারি পরের কথা। সবসময়েই এলাকার বাঁধ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাব।”