রিং রোড প্রকল্প বাতিল, দায় নিয়ে চাপানউতোর

প্রয়োজনীয় জমি মেলেনি। তাই দুর্গাপুরের রিং রোড প্রকল্প বাতিল করে কেন্দ্রে ফেরত পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। জমি পেতে সমস্যা হল কেন, এ বার সে নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রকল্প বাতিলের দায় পরস্পরের দিকে ঠেলতে লোকসভা ভোটের আগে আসরে নেমেছে সিপিএম এবং তৃণমূল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৪
Share:

প্রয়োজনীয় জমি মেলেনি। তাই দুর্গাপুরের রিং রোড প্রকল্প বাতিল করে কেন্দ্রে ফেরত পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। জমি পেতে সমস্যা হল কেন, এ বার সে নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রকল্প বাতিলের দায় পরস্পরের দিকে ঠেলতে লোকসভা ভোটের আগে আসরে নেমেছে সিপিএম এবং তৃণমূল।

Advertisement

তৃণমূলের দাবি, জমি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা না করেই বাম আমলে তড়িঘড়ি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় জমি না মেলায় শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দিতে হয়েছে প্রকল্পটি। সিপিএমের আবার দাবি, রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রকল্পটির গুরুত্ব মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল। তাই অনেকে জমি দিতে রাজি হননি।

কেন্দ্রীয় ‘জহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পে প্রায় একশো কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ কিলোমিটারের রাস্তাটি গড়ার দায়িত্ব পেয়েছিল আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। বাম আমলে ২০১০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। কাজ শুরু হয়। কিন্তু বছরখানেক পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, জমি দিতে রাজি হননি জমি মালিকদের একাংশ। প্রকল্পের বেশ কিছুটা যাওয়ার কথা ছিল বন দফতরের জমির উপর দিয়ে। প্রাথমিক ভাবে বন দফতরও জমি দিতে রাজি হয়নি। শেষে জমি মিলছে না জানিয়ে সম্প্রতি প্রকল্পটি রাজ্য ফেরত পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে।

Advertisement

এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়কে যানবাহন বেড়েছে আগের থেকে বহুগুণ। এ ছাড়া রয়েছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানার গাড়ি, যানবাহন, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরবাইক। ফলে, ও দিকে গোপালমাঠ থেকে এ দিকে মুচিপাড়া পর্যন্ত যানবাহনের সংখ্যা জাতীয় সড়কের অন্য অংশের থেকে অনেক বেশি। চাপ কমাতে ২০১০ সালে একটি বাইপাস রাস্তা গড়ার পরিকল্পনা হয়। দুর্গাপুরকে ঘিরে এই রাস্তার নাম দেওয়া হয় ‘রিং রোড’। অন্ডাল থানার দুবচুড়ুরিয়া থেকে দুর্গাপুর, কাঁকসার মলানদিঘি হয়ে রাস্তাটি গিয়ে ওঠার কথা ছিল কাঁকসার রঘুনাথপুরে পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়কে। এর ফলে যেমন জাতীয় সড়কে যানবাহনের চাপ কমত, তেমনই উন্নতি হত দুর্গাপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থারও। বীরভূমের দূরত্বও বেশ কিছুটা কমে যেত।

প্রথম পর্যায়ে রাস্তাটি রঘুনাথপুর থেকে মলানদিঘি পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। রাস্তায় মোট ২৯টি কালভার্ট থাকার কথা ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে হত মলানদিঘি থেকে দুবচুড়ুরিয়া পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। এই অংশে ৪৭টি কালভার্ট থাকার কথা ছিল। এ ছাড়া প্রথম পর্যায়ে আকন্দারা থেকে রাস্তার একটি অংশ বেরিয়ে জেমুয়া হয়ে ফুলঝোড় মোড় পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। এই অংশে কুনুর নদের উপরে একটি সেতু এবং ১৮টি কালভার্ট তৈরির কথা ছিল। সেতু নির্মাণের কাজও অনেকটা এগিয়েছিল। এ ছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ে নাচন, পাটশ্যাওড়া এবং আরতি গ্রামের বাইরে দিয়ে বাইপাস রাস্তা তৈরির কথাও ছিল প্রকল্পে। সব মিলিয়ে রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। প্রস্তাবিত রাস্তার অধিকাংশ জুড়ে একটি এক লেনের রাস্তা রয়েছে। প্রকল্পে সেই রাস্তাটিকেই ২১ ফুট চওড়া করে দু’লেনের এবং বাকি অংশে নতুন রাস্তা গড়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। সে জন্য বন দফতর ও জমি মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত জমি জোগাড় করার দরকার ছিল। জমি পাওয়া যায়নি বলে এডিডিএ সূত্রে খবর।

নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারলে বরাদ্দের উপরে রাজ্যকে সুদ গুণতে হয়। তা আটকাতে প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানান রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বন দফতরের কাছ থেকে হয়তো জমি মিলত। তবে অধিকাংশ জমি মালিকই বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে সেই সংস্থান নেই। বেশ কয়েক বার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু জট কাটেনি।”

এমন পরিস্থিতির জন্য পূর্বতন বাম সরকারকেই দায়ী করেন পুরমন্ত্রী। তাঁর দাবি, “বামফ্রন্ট সরকার জমি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা না করে তড়িঘড়ি প্রকল্প বানিয়েছিল। তারই খেসারত দিয়ে প্রকল্পটি ফেরত পাঠাতে হয়েছে।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ বলেন, “তখন সামনে বিধানসভা নির্বাচন ছিল। সে দিকে তাকিয়ে সিপিএম দ্রুত রাস্তার কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছিল। ওরা ভেবেছিল গায়ের জোরে জমি জোগাড় করবে। তা আর হয়নি।”

তৃণমূলের অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি সিপিএম। রিং রোডের একটি বড় অংশ যাওয়ার কথা ছিল আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র দিয়ে। সেই কেন্দ্রের এ বারের সিপিএম প্রার্থী তথা এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরীর পাল্টা দাবি, “তৃণমূল মিথ্যা অভিযোগ আনছে। আসলে ওরাই মানুষকে বোঝাতে পারেনি, তাই জমি মেলেনি। আমাদের সময়ে জমি পাওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পরিস্থিতি বদলায়। মানুষের দুর্ভাগ্য, এমন একটি প্রকল্প থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন