জ্যোতিষীর পরামর্শ ছিল, পয়লা বৈশাখ বেলা ১২টা ৫৮ মিনিটের পরে মাহেন্দ্রক্ষণে মনোনয়নপত্র পেশ করলে ভাল হয়। প্রার্থী সে কথা শিরোধার্য করেছিলেন। কিন্তু জ্যোতিষীর হিসেবে একটু খাদ থেকে গিয়েছিল। ছুটির গেরোয় মনোনয়ন গ্রাহ্যই হল না। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ফের মনোনয়ন জমা দেবেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন।
মঙ্গলবার শুভদিনে শুভক্ষণে শোভাযাত্রা করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াটা জলে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল। পয়লা বৈশাখ সকাল সকাল কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রসাদী ফুল-মালা নিয়ে এসেছিলেন প্রাক্তন নকশাল নেত্রী। তার পর রবীন্দ্রভবনের সামনে বিএনআর এলাকা থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে ওই লোকসভা আসনের রিটার্নিং অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়নপত্র পেশ করেন তিনি।
কিন্তু বিধি, মানে কমিশনের বিধি বাম! গ্রহনক্ষত্রের সমাবেশের চেয়েও তার জোর বেশি। সেই বিধি বলছে যে, নববর্ষ ছুটির দিন। তাই ওই দিন মনোনয়নপত্র নেওয়া যায় না। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার দোলার মনোনয়ন নিয়েই নেন। অগত্যা বুধবার দোলাকে চিঠি পাঠিয়ে ওই মনোনয়নপত্র ফিরিয়ে নিয়ে নতুন করে তা দাখিলের অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন।
কেন এমন ভুল হল? কমিশনের এক কর্তা জানান, নেগোশিয়েবেল ইনস্ট্রুমেন্ট (এনআই) অ্যাক্ট-এ কোনও ছুটি ঘোষিত হলে, আইনত সে দিন মনোনয়ন জমা দেওয়া বা গ্রহণ করা যায় না। পয়লা বৈশাখ যে এনআই অ্যাক্ট-এ ছুটি ঘোষিত হয়েছে, তা সম্ভবত আসানসোল কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসারের জানা ছিল না। তাই মনোনয়ন নিয়ে নেন তিনি। কমিশন যখন নিয়মের কথা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে জানায়, ততক্ষণে মনোনয়ন পেশ করে ফিরে এসেছেন দোলা। কমিশনের ওই কর্তা জানান, রিটার্নিং অফিসার অনিচ্ছাকৃত ভাবে ভুল করেছেন। সংশ্লিষ্ট প্রার্থী আবার মনোনয়নপত্র জমা দিলে সমস্যা মিটে যাবে। দোলাদেবী এ ব্যাপারে কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন ওই কর্তাটি।
আসানসোল কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার অমিত দত্ত স্বীকার করছেন, “ভুলটা অনিচ্ছাকৃত । তৃণমূল প্রার্থীকে নতুন করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।” তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব প্রশাসনের এই ভূমিকায় বেশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, দোলাদেবীর মনোনয়নের জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছিল। ভোটের সময় কর্মীরা সবাই ব্যস্ত। ফের শোভাযাত্রার আয়োজন করা সহজ নয়।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থীর অন্যতম ভোট-সেনাপতি মলয় ঘটক বলেন, “মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে যে কোনও দিন তা জমা দেওয়া যায় বলেই জানতাম। পয়লা বৈশাখ ১২টা ৫৮ মিনিটের পরে সময় ভাল ছিল বলে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছিল। যদি ওই মনোনয়নপত্র গৃহীত না হয়, তবে নতুন করে পেশ করা ছাড়া উপায় কী?”
গোটা ব্যাপারটা কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে দলকে। দোলা সেন নিজে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল অস্বস্তি এড়াতে দাবি করেছে, দোলার মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে ‘সমস্যা’ হয়নি। সাধারণত প্রার্থীরা চার সেট কাগজপত্র জমা দেন। দোলা দিয়েছিলেন মাত্র এক সেট। সেই জন্য কমিশনেরতরফে তাঁকে বলা হয়েছে, অধিকন্তু ন দোষায়! সেই পরামর্শ মেনে দোলা আজ গুরুবারেই আর এক সেট কাগজপত্র দিয়ে আসবেন। আজ যাওয়া ছাড়া উপায়ও নেই, কারণ শুক্র-শনি-রবি ফের ছুটি।
কিন্তু এক কালের দাপুটে নকশাল নেত্রী পুজো-পাট পুণ্যতিথি ইত্যাদি মানতে শুরু করলেন কেন? দোলার মুখে কুলুপ। ঘনিষ্ঠেরা শুধু বলছেন, সবই ‘দিদি’র ইচ্ছে!