শ্রেণিকক্ষে ব্যস্ত সুব্রতবাবু। নিজস্ব চিত্র।
চার বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলছুটদের বোঝানোই ছিল তাঁর কাজ। তার সঙ্গে শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া, স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতি করা এ সবই ছিল পূর্বস্থলীর চুপিচর এফ পি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত দাসের লক্ষ্য। এ ধরণের সামাজিক নানা অবদানের জন্যই এ বছর জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে রাষ্ট্রপতি ওই পুরস্কার তুলে দেবেন সুব্রতবাবুর হাতে।
পূর্বস্থলী রেল ষ্টেশন লাগোয়া বৈদিক পাড়ার বাসিন্দা ৫৭ বছরের সুব্রতবাবু ১৯৮৪ সাল থেকেই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। গোলাঘাটা ও পারুলিয়া এলাকার দুটি স্কুলে শিক্ষকতার পরে ২০০১ সালে তিনি চুপি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দেন। গ্রামবাসীরা জানান, সে সময় গ্রামের স্কুলটির দুর্দশা ছিল চরম। বসার জায়গা, পাঁচিল, খলার মাঠ কোনও কিছুই ছিল না। এমনকী মেঝেতে বসেই শিক্ষকেরা ক্লাস নিতেন। প্রথম দিন স্কুলে ঢুকেই নিজের পকেটের টাকায় ক্লাস রুমের শিক্ষকদের চেয়ার-টেবিল কেনেন সুব্রতবাবু। ধীরে ধীরে স্কুলের পরিকাঠামো উন্নতির জন্য গ্রামবাসীদের কাছে সাহায্য চান। প্রধান শিক্ষকের আবেদনে সাড়া দিয়ে স্কুলের বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা করে দেন গ্রামবাসীরা। ২০০৮ সালে পড়ুয়ারা নিজেদের খেলার মাঠ পায়। মাঠের জমি কিনতে সাহায্য করেন এলাকার কবিরাজ প্রশান্ত দাসগুপ্ত। স্কুলের পাঁচিল গড়ার ব্যাপারেও সাহায্য করেন তিনি।
তবে সুব্রতবাবুর সবচেয়ে বড় সাফল্য বোধহয় স্কুলছুটের সংখ্যা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার বছর ধরে কোনও স্কুলছুট নেই ওই স্কুলে। এলাকার মেয়ে-বউদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে বলেন তিনি। নিয়ম করে মেয়েদের নিয়ে স্কুল চত্বরে সভা করেন। শুধু নিজের স্কুলই নয়, শ্রেণিকক্ষে কিভাবে আধুনিক পদ্ধতি মেনে ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি পড়াতে হবে সে ব্যাপারে জেলার বহু শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেন। জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কারের জন্য সুব্রতবাবুর নাম মনোনীত হওয়ায় খুশি এলাকার মানুষ। তাঁদের মতে, যোগ্য ব্যক্তির হাতেই পুরস্কার গিয়েছে। তবে সুব্রতবাবু বলেন, “এ পুরস্কার আমার একার নয়। স্কুলের পরিচালন সমিতি ও অন্য শিক্ষকদেরও এতে অবদান রয়েছে।”