সারা দিন বাস ধর্মঘটে ভোগান্তি শহরে

শহরে বাস ঢোকবার নিষেধাঞ্জার প্রশ্নে বাস মালিকদের চাপের মুখে পিছু হঠলো প্রশাসন। রবিবার ১৫ জুন থেকে শহরের বুকে বড় বাস ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০০:৪২
Share:

দিনভর বাস ধর্মঘটে শুনশান আলিসা বাসস্ট্যান্ড চত্বর।—নিজস্ব চিত্র।

শহরে বাস ঢোকবার নিষেধাঞ্জার প্রশ্নে বাস মালিকদের চাপের মুখে পিছু হঠলো প্রশাসন। রবিবার ১৫ জুন থেকে শহরের বুকে বড় বাস ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু শনিবার থেকে তিন দিনের বাস ধর্মঘট ডেকে বসে বাস মালিকেরা শহরের দক্ষিণ দামোদরের দিকে যাতায়াতকারী বাস ঢোকবার দাবি আদায় করলেন।

Advertisement

রবিবার বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা কনফারেন্স হলে সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত সংস্থার চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বর্ধমানের মধ্যে যাতায়াতকারী মানুষের সুবিধার জন্য, বর্ধমান শহরের বীরহাটা থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত কোনও বড় বাস ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে বাস মালিকদের দাবি মেনে আমরা শহরের কয়েকটি জায়গায় বাস ঢোকার অনুমতি দিয়েছি।’’ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত অন্যতম অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত জানান, শহরের অন্যান্য এলাকাগুলি, যেমন দক্ষিন দামোদরের রায়না, জামালপুর, খণ্ডঘোষ-সহ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হুগলির আরামবাগের মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলি শহরের সদরঘাট রোড হয়ে বীরহাটা ছঁুয়ে ডানদিকে বেঁকে আলিশা মৌজায় যাবে। অন্যদিকে দুর্গাপুর, আসানসোলের বাস নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড ছঁুয়ে জিটি রোড বাইপাস ধরে আলিশা বাসস্ট্যান্ডে যাবে। যে বাসগুলি কালনা ও কাটোয়া যাবে সেগুলি পুরনো জিটিরোড বরাবর এসে বাজেপ্রতাপপুর রেলওয়ে ওভারব্রিজ হয়ে দু’দিকে চলে যাবে ও একই ভাবে ফিরে আসবে। একই সঙ্গে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, গলসি, গুসকরা, মঙ্গলকোটের নতুনহাট রুটের বাসগুলি পুরনো জিটিরোড ধরে স্টেশনের ওভারব্রিজ পর্যন্ত চলাচল করবে।

গত ১২ মে, বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বর্ধমান শহরে যাত্রীবাহী বাস ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানিয়েছিলেন, শহরকে যানজটমুক্ত করতে প্রায় আট বছর আগে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তকেই বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। যদিও এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বাস মালিকদের সংগঠন। গত ১১ তারিখে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল যে শহরে বাস ঢোকা বন্ধ হলে, তারা রাস্তা থেকে বাসই তুলে নেবেন। পরে অবশ্য তারা জানায়, প্রশাসনের অনুরোধে ১৫ জুন থেকে বাস তুলে নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু শনিবার বিকেলে বাসমালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি ঘোষ জানান, ‘৬ বছর ধরে কোনও বাসভাড়া বাড়ানো হয়নি। এই অবস্থায় বর্ধমান শহরে বাস ঢুকতে না দিলে তাদের চরম আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই রবিবার থেকে পুরনো জিটিরোড দিয়ে বাস যাতাযাত করতে না দিলে, টানা তিন দিন ধরে বাস রাস্তায় নামবে না। যদিও রাতে জেলা তথ্য আধিকারিকের মোবাইল থেকে এসএমএস করে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, রবিবার থেকে কোনও বাসমালিক সংগঠনই ধর্মঘটে যাচ্ছে না। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে দেখা যায় অন্য চিত্র।

Advertisement

এ দিন প্রশাসনের তরফে শহরে বাস ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য শহরের সমস্ত জায়গায় মোতায়েন ছিল পুলিশ। সাত সকালেই পুরসভার চেয়ারম্যান স্বরূপ দত্ত, পুরপিতা পরিষদ সদস্য খোকন দাসকে সঙ্গে নিয়ে বাস চলাচলের তদারকি করতে যান। কিন্তু তাঁরা গিয়ে দেখেন, রাস্তায় প্রায় কোনও বাসই নেই। খোঁজ নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা জানতে পারেন, পুরনো সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার থেকে তিনদিনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বাস মালিকেরা। ফলে চুড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ। “কেন এমন হল?”--এই প্রশ্নের উত্তরে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘শনিবার আমাদের ধর্মঘটে যাবেন না জানিয়েও বাসমালিকেরা রবিবার রাস্তায় বাস নামাননি। কেন ওঁরা এমন করলেন, সেটা ওনারাই বলতে পারবেন।’’

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই রবিবার দুপুরে ফের বাসমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রবিরঞ্জনবাবু, পুরপিতা স্বরূপ দত্ত-সহ প্রশাসনের কর্তারা। এই বৈঠকেই বাস মালিকদের তোলা বিকল্প দাবি মেনে প্রশাসন শহরের কিছু এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ঢুকতে দেবার অনুমতি দিতে রাজি হয়। তবে রবিবার বিকেলে ফের বাসমালিক সমিতির সাধারণ সভার পরে তুষারবাবুরা জানান, তাঁরা নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বাস ঢোকার এই অনুমতি মেনে চলবেন। সাতদিনের পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা হবে। যদি দেখা যায়, বাস মালিকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে ফের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাসমালিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন