সেস না দিলে ইটভাটা বন্ধ, জানাল প্রশাসন

জেলার যত্রতত্র কৃষি জমি দখল করে গজিয়ে উঠছে ইটভাটা জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে এমনটাই উঠে এসেছে। সম্প্রতি বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রকাশ করা একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, জেলায় মোট ৭৮১টি ইটভাটা রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ১০৬টি বৈধ। বাকি ৪৬৯টি অবৈধ এবং ২০৬টির সঙ্গে মামলা চলছে সরকারের। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার বুকে অবৈধ ভাবে চলা ইটভাটাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭
Share:

খণ্ডঘোষের একটি ইটভাটায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

জেলার যত্রতত্র কৃষি জমি দখল করে গজিয়ে উঠছে ইটভাটা জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে এমনটাই উঠে এসেছে। সম্প্রতি বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রকাশ করা একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, জেলায় মোট ৭৮১টি ইটভাটা রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ১০৬টি বৈধ। বাকি ৪৬৯টি অবৈধ এবং ২০৬টির সঙ্গে মামলা চলছে সরকারের।

Advertisement

জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার বুকে অবৈধ ভাবে চলা ইটভাটাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, অবৈধ ইটভাটার সংখ্যায় বেশি।” এই ইটভাটাগুলি নিয়মিত সেস না দেওয়ায় জেলা পরিষদের আয় বাড়ানো যাচ্ছে না বলেও তাঁর দাবি। তিনি জানান, এই ভাটাগুলিকে অবিলম্বে সরকারের প্রাপ্য সেস মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে।তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেধে দেওয়া হবে। কিন্তু তারপরেও ভাটাগুলি প্রাপ্য না মিটিয়ে দিলে সেগুলির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে থানায় এফআইআর করে ইটভাটাগুলিকে বন্ধ করিয়ে দেওয়া হবে বলেও তাঁর দাবি।

এই ইটভাটাগুলি নিয়ে নানা অভিযোগও রয়েছে। যেমন, শিশুশ্রমিক দিয়ে কাজ করানো বা দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেওয়া। জেলা প্রশাসনও স্বীকার করছে এই অভিযোগের কথা। জানা গিয়েছে, বহু ইটভাটাতেই শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয়। তাছানা ঠিকমতো মজুরি না পাওয়া, দূষণ রোধে ব্যবস্থা না নেওয়া এ সমস্ত অভিযোগ তো রয়েইছে। এছাড়া ইটভাটার আশপাশের কৃষি জমি গায়ের জোরে দখল করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এই বেআইনি কারবার রুখতেই ভাটাগুলির বিরুদ্ধে এ বার কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে প্রশাসন।

Advertisement

জেলা পরিষদের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, কৃষি এলাকার চেয়ে অনেক বেশি অবৈধ ভাটা রয়েছে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর ও আসানসোলে। পাণ্ডবেশ্বর, অণ্ডাল, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, কাঁকসা ও গলসি ১ ব্লকে মোট ইটভাটার সংখ্যা ১১২টি। কিন্তু এর প্রতিটিই অবৈধ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া আসানসোল মহকুমার সালানপুর, জামুড়িয়া, আসানসোল, কুলটি, বারাবনি, রানিগঞ্জ ইত্যাদি ব্লকের মোট ৩২৮টি ইটভাটার মধ্যেও বৈধ মাত্র ৬টি। বাকি ১১৬টি অবৈধ ও ২০৬টি ইটভাটার সঙ্গে সরকারের মামলা চলছে সেস ও রয়্যালটি নিয়ে। আরও জানা গিয়েছে, বর্ধমান উত্তর মহকুমার ৭৯টি ইটভাটার মধ্যে ৬৭টি অবৈধ, বর্ধমান দক্ষিন মহকুমার ১০৯টি ভাটার ৮৪টি অবৈধ। কাটোয়ায় ৭৬টি ভাটার ২৪টি বৈধ, কালনায় ৭৭টি ইটভাটার ৬৬টি অবৈধ।

জেলা পরিষদ সূত্রে বলা হয়েছে, ২০১০-১১ সালে ৫৮০টি ইটভাটা থেকে রয়্যালটি ও সেস বাবদ আদায় হয়েছিল ৪ কোটি ৩০ লক্ষ ৭৫ হাজার ২১৯ টাকা। সে বছরই অবৈধ ভাটাগুলির কাছ থেকে মাটির রয়্যালটি বাবদ আদায় করা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৭৪ টাকা। ভূমি কর বাবদ আদায় হয়েছিল ২৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪০ টাকা। পরের বছর ২০১১-১২ সালে ৭০২টি ইটভাটা থেকে রয়্যালটি ও সেস বাবাদ আদায় হয় ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ ৫১ হাজার ১৭৫ টাকা। মাটির রয়্যালটি বাবদ আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ৭১ লক্ষ ৬০৭ টাকা। সে বার ভূমি কর হিসেবে আদায় হয় ২৬ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭০৫টি ভাটা থেকে রয়্যালটি ও সেস বাবদ আদায় হয়ে ৩ কোটি ১৮ লক্ষ ৮৬হাজার ৫০৫টাকা। মাটির দাম বাবাদ আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ৯২ লক্ষ ২১৭টাকা। ভূমি কর বাবাদ আদায় হয় ৩ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। অর্থাত্‌ জেলাপরিষদ তথা ভূমি সংস্কার দফতরের আয় যথেষ্ট বাড়তে পারে, যদি অবৈধ ভাটাগুলিকে রয়্যালটি ও সেস দিতে বাধ্য করানো সম্ভব হয়।

বর্ধমান জেলা ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারারস্ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শৈলকুমার মিত্র বলেন, “জেলায় আমাদের সদস্যের সংখ্যা ৩২৮। তাঁদের আমরা যথাসময়ে রয়্যালটি ও সেস জমা দিতে বলেছি। এই রয়্যালটি ও সেস মার্চ মাসে জমা দিতে হয়। কিন্তু তা জমা দেওয়ার পরেও পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র না থাকায় অনেক ভাটাকে প্রশাসন অবৈধ বলে ঘোষনা করছে। এই অবৈধ ভাটাগুলি যাতে বৈধ হতে পারে তার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আমরা সমস্ত সহযোগিতা করতে রাজি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন