কলেজের দখল নিতে দরকারে গোলমাল পাকানোর পরামর্শ দিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বিকেলে কাটোয়া কলেজের নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “কাটোয়া কলেজ আমাদের যে কোনও মূল্যে পেতে হবে। সব রকম সাহায্য করব। কলেজের ভিতরে ছাত্র পরিষদ যদি গণ্ডগোল করে, তা হলে বাইরে আমাদেরও গণ্ডগোল করতে হবে।”
বর্ধমানের কাটোয়া কলেজের ছাত্র সংসদ ১৯৮৩ থেকেই ছাত্র পরিষদের দখলে। গত বছর সব আসনে প্রার্থী দিয়েও আসন পায়নি টিএমসিপি। ভোটের দিন কাটোয়া পুরসভা মোড়ে বসে ছিলেন স্বপনবাবু। লাভ হয়নি। জানুয়ারির প্রথমে কলেজে ভোটের সম্ভাবনা। এ বার যাতে লজ্জাজনক হারের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপনবাবু। কাটোয়া শহর তৃণমূলের দফতরে তিনি বলেন, “আমাদের সব আসনে প্রার্থী দিতে হবে। ভোট একটা যুদ্ধ। সব রকম অস্ত্র নিয়ে লড়াই করতে হবে।”
এর পরেই গণ্ডগোল পাকানোর পরামর্শ দেন মন্ত্রী। যা শুনে চমকে গিয়েছেন দলের কিছু নেতাও। কেননা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাপস পাল বা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো তৃণমূল নেতাদের মুখে বিভিন্ন সময়ে কুকথা ও হুমকি শোনা গেলেও স্বভাবশান্ত স্বপনবাবুর থেকে তা শুনতে অভ্যস্ত নন নেতা-কর্মীরা। তাই বৈঠকের পর উপস্থিত কিছু নেতা বলাবলি করতে থাকেন, গোষ্ঠী রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন স্বপনবাবু। নম্বর বাড়াতে স্বভাব-বিরোধী উগ্র কথাবার্তা বলছেন।
তাঁর বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক হতে পারে তা বুঝেছেন স্বপনবাবু। সন্ধ্যায় তিনি দাবি করেন, “আমি বলেছি, ছাত্র পরিষদ কলেজের ভিতর গোলমাল করলে বাইরে তার প্রতিরোধ করতে হবে।” কিন্তু কলেজে গোলমাল হলে প্রতিরোধ হবে বাইরে? মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “খারাপ কথা বলতে চাইনি। ছাত্রদের সাহস জোগাতে চেয়েছি শুধু।” টিএমসিপির কাটোয়া শহর সভাপতি স্বাগত চট্টোপাধ্যায়ও মন্ত্রীর পরামর্শে বিতর্ক দেখছেন না। তাঁর কথায়, “কী ভাবে ছাত্র সংসদ দখল করতে হবে, তার দিশা দিয়েছেন মন্ত্রী।”
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অনিল দত্তের অভিযোগ, “নির্বাচনের আগে ছাত্রদের উত্তপ্ত করতে চাইছেন তৃণমূলের মন্ত্রী।” এ দিনই টিএমসিপি কাটোয়ার চন্দ্রপুর কলেজে তাদের তিন সমর্থককে ছাত্র সংসদের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সাধারণ সম্পাদক শুভ্র চট্টোপাধ্যায়। এসএফআইয়ের বর্ধমান জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র দাবি, “কাটোয়া কলেজের পড়ুয়ারা টিএমসিপির সঙ্গে নেই। তাই মন্ত্রী হুমকি দিয়ে রাখলেন।” কাটোয়া মহকুমা ছাত্র পরিষদের নেতা শেখ সোলেমান বলেন, “৩০ বছরের বেশি কাটোয়া কলেজে ছাত্র সংসদে থাকলেও হিংসার রাজনীতি করিনি, করবও না।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই কলেজে পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য আমরা সব রকম চেষ্টা করব।”