State News

মমতার নির্দেশ সত্ত্বেও স্থগিত পুকুর সংস্কার

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গঙ্গাসাগর এলাকায় বিভিন্ন সরকারি পুকুরের পাড় বাঁধিয়ে চার দিকে আলো লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক ও প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১৮
Share:

ছবি: রয়টার্স।

গঙ্গাসাগরের সৌন্দর্যায়ন চাই। তারই অঙ্গ হিসেবে সেখানকার বিভিন্ন পুকুর সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই নির্দেশ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের (জিবিডিএ) চেয়ারম্যান তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থেই এ ভাবে সংস্কারের কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন চেয়ারম্যান। তবে বঙ্কিমবাবুর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার জন্যই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গঙ্গাসাগর এলাকায় বিভিন্ন সরকারি পুকুরের পাড় বাঁধিয়ে চার দিকে আলো লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে সেই সব পুকুরে মাছ চাষ, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা করতেও বলেছেন মমতা। জানুয়ারির গোড়ায় গঙ্গাসাগরে গিয়ে সৌন্দর্যায়ন সংক্রান্ত কিছু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই এলাকার পুকুরগুলি সংস্কারের উপরে জোর দিয়েছিলেন তিনি।

কয়েক মাস আগেই গঙ্গাসাগর এলাকার প্রায় ২৯টি পুকুর চিহ্নিত করা হয়। আটটি পুকুরে সংস্কারের কাজ চলছে। সাগরের কে-ওয়ান বাসস্ট্যান্ড ও চার নম্বর রাস্তার পাশে দু’টি পুকুরের সৌন্দর্যায়নের কাজ শেষ। কয়েক দিন আগে সেই দু’টি পুকুরের উদ্বোধনও হয়েছে। সেগুলির সংস্কারে খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, ওই দু’টি পুকুর ‘লিজ’ দেওয়া হয়েছে। সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণে লিজের টাকা ব্যবহার হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও প্রকল্প থেকে পর্ষদ পিছিয়ে এল কেন?

Advertisement

আরও পড়ুন: ডাক্তারকে চড়, থানায় ‘অনুতাপ’ অভিযুক্তের

সাময়িক ভাবে পুকুর সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখার জন্য আধিকারিকদের লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন জিবিডিএ-র চেয়ারম্যান বঙ্কিমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন ওই সব পুকুর দেখাশোনা করত গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েত। তা নিয়ে পঞ্চায়েতের সঙ্গে কিছু আলোচনার প্রয়োজন আছে।’’ সেই জন্যই ওই সব পুকুর সংস্কারের কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হল বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন চেয়ারম্যান।

পর্ষদের অনেকের মতে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন বোধগম্য নয়। কে-ওয়ান বাসস্ট্যান্ডের কাছে সংস্কারের পরে পুকুরের উদ্বোধন করেন বঙ্কিমবাবুই। তার পরেই অন্যান্য পুকুর সংস্কার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানান তিনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘পর্ষদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হবে। কেন পুকুর সংস্কার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হল, তা জানার চেষ্টা করা হবে।’’

সাগর ব্লকের বিজেপি সভাপতি শিবশঙ্কর কামলা বলেন, ‘‘ওই সব পুকুরের অধিকাংশই রয়েছে সরকারি জমিতে। শাসক দলের সমর্থকেরা সেখানে মাছ চাষ করছেন। বছরখানেক পরে বিধানসভা নির্বাচন। সাগরের সৌন্দর্যায়ন যতই মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন হোক না কেন, দলীয় কর্মীদের কোনও ভাবে বিরূপ করতে চাইছেন না বঙ্কিমবাবু। তিনি নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বদ্ধপরিকর।’’ প্রশাসনের অনেকের মতে, ওই পুকুরগুলি সরকারের হাতে এলে রাজস্ব আসবে, অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হলে সাগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। বঙ্কিমবাবু বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বহু পুকুর কেটেছে পঞ্চায়েত। তা ছাড়া পুকুরের দখল নিয়ে নথিপত্রের সমস্যা রয়েছে বলে আপাতত সংস্কার স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন