BJP’S Worker’s Meet

কী পরিস্থিতি দলের অন্দরমহলে? সংগঠনের আসল চেহারা কেমন? সরাসরি জানতে শমীক বসবেন পদ্মে বেনজির ‘কর্মী দরবার’-এ

আগামী মাস থেকেই মুরলীধর সেন লেনের দফতরে সপ্তাহে এক দিন করে রাজ‍্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বসতে পারেন। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন সোমবারকেই তার জন‍্য নির্দিষ্ট রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ১২:৫০
Share:

বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে ‘দরবার’ চালু করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বিজেপির ভাষায় যে কর্মসূচির নাম ‘কার্যকর্তা বন্ধুদের দরবার’।

Advertisement

রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও বিজেপি কর্মীর অভাব-অভিযোগ বা পরামর্শের কথা সরাসরি শুনতে সভাপতির ‘দরবার’ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে এর আগে হয়নি। এমন প্রয়াস এই প্রথম। দরবার শুরুর তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তবে আগামী মাস থেকেই মুরলীধর সেন লেনের দফতরে সপ্তাহে এক দিন করে রাজ‍্য বিজেপির সভাপতি বসতে পারেন। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন সোমবারকেই তার জন‍্য নির্দিষ্ট রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।

বঙ্গ বিজেপিতে কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসা নতুন নয়। নতুন কমিটি বা বিভিন্ন স্তরে নতুন নেতৃত্বের তালিকা প্রকাশিত হলেই বিজেপির অভ‍্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। চলতি বছরেও জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষিত হওয়ার পরে একাধিক জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি আক্রান্তও হয়েছেন কর্মীদের একাংশের হাতে। পক্ষান্তরে, নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কর্মীদের কোনও কোনও অংশকে কোণঠাসা করার অভিযোগও ওঠে। কিন্তু কর্মীদের ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’ করার অভিযোগ রাজ‍্য নেতৃত্বের কাছে জেলা বা মণ্ডলের নেতারা যত সহজে পৌঁছে দিতে পারেন, নেতাদের ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগ কর্মীরা তত সহজে উপরের স্তরে জানাতে পারেন না। শমীক সেই পরম্পরায় ছেদ টানতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যে কোনও কর্মী যাতে চাইলেই সরাসরি সভাপতিকে তাঁর বক্তব‍্য জানাতে পারেন, তিনি সেই ব‍্যবস্থাই করতে চাইছেন।

Advertisement

কেন এমন উদ্যোগ, সে ব‍্যাখ‍্যা কেউ প্রকাশ্যে দিচ্ছেন না। তবে বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, এত দিন একতরফা বয়ানের ভিত্তিতে দল চালানো হত। শুধু নেতাদের কথার ভিত্তিতে সব কিছুর মূল্যায়ন হত। কর্মীদের কথা সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মন দিয়ে শুনতেন না। এ বার থেকে রাজ‍্য সভাপতি দু’রকম বয়ানই শুনবেন। বিজেপির ওই সূত্রের দাবি, এর ফলে দলের অন্দরে নিজের নিজের ‘গোষ্ঠী’কে প্রাধান‍্য দেওয়ার চেষ্টা যেমন বাধা পাবে, তেমনই রাজ্যের কোথায় সাংগঠনিক পরিস্থিতি কেমন, তার স্পষ্ট চিত্রও সভাপতির কাছে থাকবে।

বিজেপি সূত্রে প্রথমে জানা গিয়েছিল, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকেই শমীকের এই ‘কর্মী দরবার’ শুরু হয়ে যাবে। দলের অনেক কর্মী সমাজমাধ‍্যমে সে কথা পোস্টও করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরে কেউ কেউ পোস্টটি সরিয়ে দেন। কারণ, এই কর্মসূচি চালু করার বিষয়ে সভাপতি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেললেও ‘যাত্রা শুরুর’ দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত নয়। শমীকের বক্তব্য, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করব। সপ্তাহে এক দিন করে মুরলীধর সেন লেনের অফিসে বসব। কবে থেকে শুরু হচ্ছে, সময়মতো সকলে জানতে পারবেন।’’

বিজেপি সূত্রের খবর, বিলম্ব হতে পারে দু’টি কারণে। প্রথমত, দলের রাজ‍্য সভাপতি হওয়ার পরে শমীক এখনও নিজের ‘টিম’ হাতে পাননি। এখনও পর্যন্ত পুরনো রাজ‍্য কমিটিকে সঙ্গে নিয়েই তিনি কাজ চালাচ্ছেন। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নতুন রাজ‍্য সভাপতি নতুন কমিটি গড়বেন। এবং নতুন পদাধিকারীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেবেন। সেই কমিটি ঘোষিত হওয়ার আগে পর্যন্ত দলের অন্দরে নানা সমীকরণের বিন‍্যাস ভাঙছে-গড়ছে। সে সব সামলে কমিটি ঘোষণার দিকে এগোতে হচ্ছে শমীককে। অতএব দফায় দফায় বৈঠক এবং নানা স্তরের সমন্বয়কারী আলোচনায় দিনভর তিনি ব‍্যস্ত থাকছেন। সেই পর্ব না মেটা পর্যন্ত ‘কর্মী দরবার’ শুরু করেও খুব একটা লাভ হবে না বলে শমীকের ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য। তাঁর এক ঘনিষ্ঠের বক্তব্য, ‘‘কর্মীরা মূলত নানা সাংগঠনিক সমস‍্যার সমাধানের আশা নিয়ে আসবেন। তা করতে হলে পুরো টিমকে সঙ্গে চাই। কারণ, এক একটা বিষয়ের দায়িত্ব এক এক জনের উপর থাকে। এক একটা এলাকার দেখভালের দায়িত্ব এক একজন নেতার উপরে থাকে। যত ক্ষণ না দায়দায়িত্ব বণ্টন চূড়ান্ত হচ্ছে, তত ক্ষণ এই দরবার শুরু করে লাভ নেই। কারণ, কাকে কোনটা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়।’’

বিজেপি সূত্রের খবর, এখনই ‘কর্মী দরবার’ শুরু করার ক্ষেত্রে আরও একটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। মুরলীধর সেন লেনের দফতরে এখন বড়সড় মেরামতি চলছে। বাড়িটিকে প্রায় ঢেলে সাজা হচ্ছে। সেই কাজ শেষ হতে বেশ কিছু সময় লাগবে। কাজের অগ্রগতি দেখে ‘কর্মী দরবার’ শুরুর দিনক্ষণ স্থির করা হবে।

এই দরবার শমীক সেক্টর ফাইভের দফতরে করছেন না কেন? দলের অন‍্যতম রাজ‍্য মুখপাত্র দেবজিৎ সরকারের কথায়, “বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা আসবেন। পাঁচ নম্বরের (সেক্টর ফাইভ) অফিসে পৌঁছোনো তাঁদের পক্ষে কঠিন। কারণ, সল্টলেকের রাস্তাঘাট সকলের পরিচিত নয়। গণপরিবহণ কম থাকায় যাতায়াতও একটা সমস্যা।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশন থেকে ছ’নম্বরের অফিস (৬, মুরলীধর সেন লেন) যাতায়াত খুব সহজ। দূরদূরান্তের কর্মীরাও চেনেন। ওই অফিস আমাদের কাছে একটা আবেগেরও জায়গা। কর্মীদের সঙ্গে সভাপতির সরাসরি আদানপ্রদানের জন‍্য ওটাই সেরা।’’

বিজেপি সূত্রের খবর, কর্মী-সমর্থকদের আবেগের কথা ভেবে ছ’নম্বরের অফিসে বিজেপি আরও একটি পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ছ’নম্বরের দফতরে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি গ্রিল এবং লোহার দরজার আচ্ছাদনে মুড়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন নেতৃত্বের একাংশ। লোহার দরজার মুখে নিরাপত্তারক্ষীও মোতায়েন করা হয়েছিল। যাতে যে কেউ এসে দলীয় দফতরের দোতলায় উঠতে না পারেন। তাতে বিজেপি কর্মীদের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কেউ কেউ রাজ‍্য দফতরে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শমীক লোহার গ্রিল-গেট সরিয়ে সেই বাধা উপড়ে ফেলার কথাও ভাবছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement