বিস্তর বিতর্ক ও টানাপড়েনের পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ডাক্তারি পড়ার জন্য অভিন্ন সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা (নিট) চালু হয়েছে। কিন্তু প্রথম বছরের সেই ‘অভিন্ন’ পরীক্ষাতেই ভিন্ন ভিন্ন ভাষার প্রশ্নপত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠল। শুধু তা-ই নয়, ইংরেজি ও হিন্দি প্রশ্নপত্রের তুলনায় বাংলা ভাষার প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই।
বিষয়টিতে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে পার্থবাবুর দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, এটাও আসলে বাংলাকে বঞ্চনা করার জন্য কেন্দ্রের একটা কৌশল। সেই ছক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলার ছেলেমেয়েরা যাতে কম সুযোগ পায়, সেই জন্যই এটা করা হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে বাংলার মেধাকে আটকে রাখা যাবে না।’’
পার্থবাবু জানান, বাংলায় লেখা প্রশ্নপত্র অনেক বেশি কঠিন হয়েছে বলে অসংখ্য পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী খুবই ব্যথিত। বাংলার পড়ুয়াদের স্বার্থে রাজ্য সরকার এর প্রতিবাদ করবে। সিবিএসই (নিটের নিয়ন্ত্রক)-কে চিঠি দেবে। যত দূর যেতে হয়, তত দূর যাবে,’’ বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
চলতি বছরে নিট নেওয়া হয়েছে ১০টি ভাষায়। সিবিএসই সূত্রের খবর, ১০টির মধ্যে একমাত্র বাংলা ও গুজরাতি ভাষার প্রশ্নপত্র এক রকম হয়েছে। বাকি কোনও ভাষার সঙ্গে কোনও ভাষার প্রশ্নের মিল নেই। রবিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই বাংলার প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে বলে লাগাতার অভিযোগ উঠতে থাকে। মেডিক্যালের কোচিং চালায়, এমন একটি সংস্থার কর্তার কথায়, ‘‘ইংরেজি ও হিন্দির প্রশ্ন যথেষ্ট সহজ এসেছে। যারা বাংলায় পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অনেকেই অনেক প্রশ্নে দাঁত ফোটাতে পারেনি।’’ বাংলায় পরীক্ষা দিয়েছেন, এমন অনেক ছেলেমেয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অভিন্ন’ পরীক্ষায় বিভিন্ন ভাষার প্রশ্ন ভিন্ন হয় কী করে? ভিন্ন প্রশ্নে একই রকম মূল্যায়ন কী ভাবে সম্ভব?
সরাসরি জবাব দেওয়ার বদলে দায় ঠেলাঠেলির পালা চলছে কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে। প্রশ্ন তৈরি এবং পরীক্ষা নেওয়ার দায় তাদের নয় বলে দায় এড়িয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, ওই পরীক্ষা নেয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তারাই বলতে পারবে, ঠিক কী হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, নিট পরিচালনা করে সিবিএসই। তারাই যা বলার বলবে।
সিবিএসই-র এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক সর্বভারতীয় পরীক্ষায় কয়েক সেট প্রশ্ন রাখা হয়। কোনও প্রশ্নের সঙ্গে কোনও প্রশ্নের মিল থাকে না।’’
কিন্তু কোনও কোনও ভাষার প্রশ্ন সহজ আর কোনও কোনও ভাষার প্রশ্ন তুলনায় কঠিন হবে কেন, তার জবাব মিলছে না। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, ‘‘অভিন্ন প্রশ্নের নামে যা হল, তা মাথা নত করে মেনে নেওয়া হবে না। সিবিএসই বোর্ড কেন এটা করল, জানা দরকার। নিশ্চয়ই কারও একটা নির্দেশে এটা করা হয়েছে।’’
এই বিষয়ে রাজ্য সরকারকেও কটাক্ষ করেছে অল ইন্ডিয়া ডিএসও। তাদের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার এখন তো অনেক কিছু করার কথাই বলছে। কিন্তু মেডিক্যালে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তাব ওঠার সময়েই তারা বিরোধিতা করেনি কেন?
রাজ্য সরকার অবশ্য মোটেই বসে নেই। কয়েক জন বিশেষজ্ঞকে প্রশ্নপত্র খুঁটিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে, জানালেন রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হলেও মূল প্রশ্ন একই হওয়ার কথা। সিবিএসই ঠিক কেন এটা করেছে, এখনও তা স্পষ্ট নয়।’’