প্রতীকী ছবি।
আগের তিন বার— ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে শুধু ভোটের দিনেই নিহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৮, ১১ এবং ১৮। আর এ বার? শূন্য!
বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে হিংসার নিন্দায় যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত মুখ খুলেছেন, সে বার ডোমকলে আশ্চর্যের শান্তি! শুধু বোমা-বৃষ্টি আর রক্তস্নানের জন্য মুর্শিদাবাদ জেলার যে মহকুমা খবরের শিরোনামে থেকেছে যুগ যুগ ধরে, সেখানে এ বার অশান্তির খবর নেই। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা বলছেন, এ শান্তি উন্নয়নের। আর বিরোধী নেতারা বলছেন, শ্মশানের শান্তি!
কোন জাদুতে হিংসামুক্তি ঘটিয়ে ফেলল ডোমকল? উত্তর সহজ। ভোটটাই তুলে দিয়ে! ডোমকল মহকুমার ১০টি জেলা পরিষদ আসনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে তৃণমূল। যদিও তা নিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা আছে। ওই এলাকার একমাত্র জলঙ্গিতে কিছু আসন বাদে পঞ্চায়েত ভোট করতে হয়নি বলে শাসক দলের নেতারাই জানাচ্ছেন।
ইতিহাস বলছে, বাম আমলে ডোমকলে বোমা-গুলির লড়াই হত সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৩-র ভোটেও মৃত্যু হয়েছিল ১৮ জনের। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকে সেখানে বিরোধী কংগ্রেস ও বাম শিবির থেকে লোকজনকে দলে টেনে নিয়েছে তৃণমূল। নবগঠিত ডোমকল পুরসভাও তৃণমূলের হাতে। ডোমকল বিধানসভা আসন এখনও সিপিএমের ঠিকই কিন্তু এলাকার নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। সমীকরণ অতএব— বিরোধী নেই, লড়াই নেই, প্রাণহানিও নেই।
ডোমকল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০১১ সালে কংগ্রেস এবং ২০১৬-য় তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলেন যুব নেতা সৌমিক হোসেন। তাঁর দায়িত্বেই এখন ডোমকল পুরসভা। সৌমিক বলছেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী দিতে চাইলে আমরা বাধা দিতাম না। কিন্তু ওখানে গত কয়েক বছরে ১০৪টি রাস্তা-সহ উন্নয়নের যা কাজ হয়েছে, তাতে বিরোধীরাও আমাদের সঙ্গে সামিল হয়েছেন। এলাকার সঙ্গে সিপিএম বিধায়কের যোগ নেই।’’ মুর্শিদাবাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত, মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী যোগ করছেন, ‘‘বিরোধীদের সংগঠন দুর্বল হয়েছে। নানা সময়ে কংগ্রেস, সিপিএম ছেড়ে কর্মীরা আমাদের সঙ্গে এসেছেন। আমরা সব সময়েই শান্তির পক্ষে।’’
তৃণমূলের দাবি উড়িয়ে ডোমকলের সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান পাল্টা অভিযোগ করছেন, ‘‘বিডিও এবং মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়নের সময়ে পাখিও ঢুকতে দেয়নি! প্রার্থী দেওয়ার মতো পরিবেশই রাখা হয়নি এ বার। ভোটই নেই, তাই হিংসাও নেই!’’ একই সুর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। তাঁর কথায়, ‘‘আগে হামলা হলে তার পাল্টা হত, তাতে সংঘর্ষ বাধত। এ বার তো ভোটই করতে দেওয়া হয়নি। তার আগে ডোমকল পুরসভাতেও ভোট করতে দেয়নি তৃণমূল।’’
শাসক শিবিরেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, রানিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ফিরোজা বেগমের উপরে হামলার পরে কংগ্রেস আর ‘সাহস’ করেনি। ডোমকলে সিপিএমের এখনও কিছু লোকজন আছে কিন্তু তাদের ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দেওয়া গিয়েছে।
এমন অভিযানের ফল? শান্ত ডোমকল!