Intelligence report

গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, বোর্ড গঠনের সময় আরও রক্তপাত হবে

উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করার আগে সমস্যা আরও তীব্র আকার নেবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ১৯:৩৪
Share:

পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনার দিন এবং ফল ঘোষণার পর ব্যাপক হিংসা ও রক্তপাতের আশঙ্কা করছে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ। অবিলম্বে বিভিন্ন এলাকায় মজুত অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।

Advertisement

ভোটের দিন ঘটে যাওয়া হিংসার সবিস্তার রিপোর্ট রাজ্যের ২০টি জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকেরা আলাদা আলাদা করে নবান্নে পাঠিয়েছেন। সেই রিপোর্টেরই একটি অংশে ফলপ্রকাশ পরবর্তী সময়ের এই হিংসার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করার আগে সমস্যা আরও তীব্র আকার নেবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। এরই পাশাপাশি, এ বারের নির্বাচনে গোটা রাজ্যে পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে যে ভাবে অস্ত্র লুঠ হয়েছে তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছেন পুলিশকর্তারা।

মঙ্গলবার জমা পড়া এই রিপোর্টে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারেও ইঙ্গিত আছে। গোলমাল ঠেকাতে আরও বাহিনীর দাবি জানিয়েছেন একাধিক জেলার পুলিশ সুপার। কিন্তু তার আগেই বিভিন্ন জায়গায় পুলিশকর্মীদের মধ্যে এই অসন্তোষ প্রকাশ্যে চলে আসে। মঙ্গলবার রাতেই কোচবিহারের দিনহাটা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান পুলিশকর্মীরা। তাঁরা দাবি করেন, পুলিশকে পরিস্থিতি অনুযায়ী আক্রমণাত্মক হতে হবে। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। জখম হচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। জেলা পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে এই বিক্ষোভ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলার একাধিক আধিকারিক স্বীকার করেছেন যে অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক থাকার ফলে মার খাচ্ছে পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন
বুথ বাঁচানো দূর অস্ত্, মার খেয়েছে পুলিশই

নির্বাচনের দিন বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ১৫ জন পুলিশকর্মী গুরুতর আহত হন। কোথাও ভোট লুঠ রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, আবার কোথাও দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মাথা ফেটেছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাল্টা মারের রাস্তায় যেতে পারেনি পুলিশ। রাজ্য পুলিশের রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের এক জওয়ান ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “সোমবার হুগলিতে আমাদের এক সহকর্মী সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে চোখে গুরুতর আঘাত পায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া সত্ত্বেও সুপিরিয়র অফিসারেরা পাল্টা আক্রমণে যেতে মানা করেন। আর তার ফলেই আমাদের ওই সহকর্মী কার্যত দৃষ্টি হারাতে বসেছে।”

একই অভিযোগ বিধাননগর সিটি পুলিশের এক কর্মীর। তাঁদের ভোটের জন্য যেতে হয়েছিল ক্যানিং এব‌ং বাসন্তী এলাকায়। সেখানে তাঁদের এক সহকর্মীর মাথায় দুষ্কৃতীরা হাসুয়ার কোপ মারে, তিনি বুথ লুঠে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার পরেও সিনিয়র অফিসারেরা ভ্রুক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ।

দিনহাটার বিক্ষোভের রেশ কাটার আগেই অসন্তোষ আরও মারাত্মক আকার নেয় রায়গঞ্জে। সেখানে ভোটকর্মীরা মহকুমাশাসককে ঘিরে নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান, কার্যত মারধর করা হয় এসডিও-কে।

গোয়েন্দা রিপোর্টে স্পষ্ট, প্রতিটি জেলাতে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা-গুলি মজুত রয়েছে। “যে কোনও নির্বাচনের অন্তত এক মাস আগে থেকে অস্ত্র উদ্ধার এবং দাগী অপরাধীদের গ্রেফতার করা নিয়ম। কিন্তু এই নির্বাচনের আগে কোনও জেলাতেই সেই ভাবে এই অভিযান চালানো হয়নি, স্বীকার করেন এক শীর্ষ পুলিশকর্তা। মঙ্গলবার রাতে বাসন্তী থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর পরিমাণ ছররা গুলি, সঙ্গে ‘বুলেট প্রুফ জ্যাকেট’। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ক্যানেস্তারা টিন কেটে তার ওপর অ্যালুমিনিয়াম প্লেট বসিয়ে এখানকার দুষ্কৃতীরা দেশি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট বানিয়েছে। এই জ্যাকেট দিয়ে ছররা আটকানো যায়। এর থেকেই স্পষ্ট দুষ্কৃতীরা কতটা বেপরোয়া।”

কার্যত প্রশিক্ষণহীন হোমগার্ডদের হাতেও এ বার আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। গন্ডগোলের সময় সেই হোমগার্ড ও তাঁদের সঙ্গের অস্ত্র রক্ষা করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় অন্য পুলিশকর্মীদের কাছে। এ বারে বুথের সামনে থেকে এই হোমগার্ডদের অস্ত্র লুঠ হয়েছে অন্তত পাঁচ জায়গায়। গোয়েন্দা রিপোর্টেও এ ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেখানে যেখানে বোর্ড গঠনের জন্য নির্দল এবং বিরোধীদলের জয়ী প্রার্থীদের ওপর নির্ভর করতে হবে, সেখানে এই হিংসা ব্যাপক আকার নেবে। এই রক্তপাত রুখতে অতিরিক্ত বাহিনীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। রিপোর্ট দেখে এক পুলিশকর্তার দাবি, “বাহিনীর আকার বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান হওয়ার নয়। স্থানীয় থানাই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে। কিন্তু তার জন্য পুলিশকে খোলা হাতে কাজ করতে দিয়ে, তলানিতে থাকা মনোবল বাড়াতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement