রক্তে স্নান করল গণতন্ত্রের ভোট, নিহত ১৬

বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার রাত পর্যন্ত সরাসরি ভোটের বলি অন্তত ১৪। যদিও সন্ধ্যায় পুলিশের দাবি, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। তার মধ্যে তিন জন তৃণমূল, দু’জন সিপিএম এবং এক জন ঝাড়খণ্ড দলের। বাকিগুলির সঙ্গে ভোটের যোগ নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৪:১৮
Share:

ভোটচিত্র: (১) তখনও বেঁচে কুলতলির আরিফ আলি নস্কর। (২) জল থেকে ব্যালট বাক্স তোলা হচ্ছে লিলুয়ার একটি বুথের সামনে। (৩) নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের গোপালপুর গ্রামে হত দুই সিপিএম কর্মী। (৪) প্রাণভয়ে কাতর বৃদ্ধা। শান্তিপুরের বেলঘরিয়া ২ পঞ্চায়েতে গবারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে।

রক্তাক্ত হল পঞ্চায়েত নির্বাচন। সংঘর্ষ, প্রাণহানি, ব্যালট বাক্স জ্বালিয়ে দেওয়া, ব্যালট পেপার ছিঁড়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার মতো নানা ঘটনায় অভিযুক্ত হল শাসক তৃণমূল। অনেক ক্ষেত্রে একই অভিযোগ উঠল বিরোধীদের বিরুদ্ধেও। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার রাত পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা অন্তত ১৬। যদিও সন্ধ্যায় রাজ্য পুলিশের দাবি, নির্বাচন কেন্দ্র করে মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। তার মধ্যে তিনজন তৃণমূল, দু’জন সিপিএম এবং একজন ঝাড়খন্ড দলের। বাকিগুলির সঙ্গে ভোটের যোগ নেই। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিকালে তাঁর দলের ছয় জনের মৃত্যুর তালিকা দেন। রাতে তা আরও বাড়ে।

Advertisement

নির্বাচন কমিশন এদিনের ঘটনাবহুল ভোট নিয়ে কার্যত একটি কথাও বলেনি। আগে আদালতে কমিশন জানিয়েছিল, রাজ্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করছে তাতে তারা সন্তুষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং রবিবার আশ্বাস দিয়েছিলেন, সবাই নিরাপদে ভোট দিন। প্রশাসন পাশে আছে। কিন্তু এদিন এতগুলি প্রাণহানি এবং ভোটে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করেছে, কোথাও পুনর্নির্বাচন হবে কি না সে সবেরও কোনও জবাব কমিশনের পক্ষ থেকে আসেনি। বরং সরকারের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, সশস্ত্র পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মিলিয়ে লক্ষাধিক নিরাপত্তাকর্মী ছিল। ভোট হয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার বুথে। সে তুলনায় অশান্তির সংখ্যা ‘নগণ্য’।

আরও পড়ুন: কমিশন ভাল, দল সহিষ্ণু, বলল তৃণমূল

Advertisement

হিংসার গ্রাসে গণতান্ত্রিক অধিকার, দেখুন ভিডিয়ো:

বিরোধীরা যথারীতি বলছে, ভোট নিয়ে যে আশঙ্কা ছিল তা সত্যি হয়েছে। রাজ্য নিরাপত্তা দেয়নি এবং নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থেকেছে। এ নিয়ে ফের আদালতের যাওয়ার কথাও ভাবছে বিরোধী শিবির। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, নিহতদের অধিকাংশই তাদের দলের। একই সঙ্গে শাসকদলের যুক্তি, যারা ভোট চায়নি তারাই হামলা করেছে।

ইটের ঘায়ে মাটিতে পুলিশ। জ্যাংড়া গৌরাঙ্গনগরে নবীনচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এদিনের সব থেকে বড় ঘটনা নদিয়ার শান্তিপুরের বাবলা গ্রামে। সেখানে এমএ-এর ছাত্র এক যুবককে বুথের মধ্যে পিটিয়ে মারা হয়। অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থক ওই যুবক ছাপ্পা ভোট দেওয়ার সময় গ্রামবাসীদের রোষের শিকার হন। নন্দীগ্রামে গুলিতে খুন হন দুই সিপিএম কর্মী। জানা যায়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেখানে নির্দল হিসাবে ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। তাঁকে সমর্থন করছিল সিপিএম। অভিযোগ, তৃণমূলের বাইকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে এই ঘটনা। বিজেপির দাবি, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডিতে তাদের দুই সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। অন্য মৃত্যুর ঘটনাগুলি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর প্রভৃতি জেলায়।

উজ্জ্বল সুর হাবড়া (উত্তর চব্বিশ পরগনা)

সঞ্জয় সরকার তপন (দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা)

২০১৩ সালে পাঁচ দফার পঞ্চায়েত ভোটে মোট ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যদিও সরকারি হিসাবে সংখ্যা ছিল কম। বস্তুত দলমত নির্বিশেষে সব সরকারই সংঘর্ষের ঘটনা ‘কমিয়ে’ দেখায়। এবারেও সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ‘কম’ করে দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে মৃতের সংখ্যা নিয়ে চাপানউতোর যতই থাক, রাজ্য জুড়ে এদিন ভোটের যেসব ছবি দেখা গিয়েছে তা সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন বলে অনেকের অভিমত। এতগুলি প্রাণহানিকে ‘লঘু’ করে দেখানো হচ্ছে কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও। রাতে অফিস ছাড়ার আগে নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘যা বলার, কাল বলব।’’

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য, রণজিৎ নন্দী, সুমন বল্লভ এবং নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন