(বাঁ দিকে) অনাথবন্ধু, (ডান দিকে) গণেশ। নিজস্ব চিত্র
ফের গণনায় আসন হাতছাড়া হল বিজেপির। জিতলেন তৃণমূলের প্রার্থী। অবশ্য সেই গণনা দেখার জন্য বিরোধীদের কোনও এজেন্ট এ দিন কেন্দ্রে ছিলেন না।
প্রশাসন জানিয়েছে, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের জেলা পরিষদের ৩৮ নম্বর আসনে তৃণমূল প্রার্থী অনাথবন্ধু মাজি ১০২৯ ভোটে জিতেছেন। ওই আসনে বৃহস্পতিবার গণনায় জিতেছিলেন বিজেপির প্রার্থী গণেশকুমার সিংহ। তিনি ৪৫৬ ভোটে হারিয়েছিলেন অনাথবন্ধুকে। এ দিন জয়ের পরে অনাথবন্ধু বলেন, ‘‘আমার জয় নিশ্চিত ছিল বলেই ফের গননার আবেদন করেছিলাম।”
অন্য দিকে, রবিবার বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলার গণতন্ত্রের কলঙ্কজনক দিন হিসাবে এই দিনের গণনা লেখা থাকবে। তৃণমূলের চাপে যে ভাবে প্রশাসনের শীর্ষ মহল গণনায় কারচুপি করে শাসকদলের প্রার্থীকে জিতিয়েছে, সেটা কল্পনা করা যায় না।” তিনি জানান, আগের গননায় জেতার পরে তাঁদের প্রার্থীকে প্রশাসন শংসাপত্র দিয়েছিল। আপাতত দলের রাজ্য নেতৃত্বর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যাসাগর বলেন, ‘‘আমাদের জেতা প্রার্থী গণেশকুমার সিংহ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।’’ কবে গণেশবাবু আদালতে যাবেন সেই ব্যাপারে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি। জানিয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি দেখছেন।
বিজেপির করা অভিযোগের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়।
জেলাপরিষদের রঘুনাথপুর ১ ব্লকের ৩৮ নম্বর আসনটিতে ফের গণনা হয়েছে দু’টি কারনে। গণনার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টরা চাপ দিয়ে তাঁদের প্রার্থীকে জয়ের শংসাপত্র দিতে বাধ্য করেছিলেন, এই মর্মে বৃহস্পতিবার রাতে বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডল রঘুনাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি, ওই রাতেই বিডিওর কাছে ফের গণনার আবেদন জানান তৃণমূলের প্রার্থী অনাথবন্ধু। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির কর্মী ও কাউন্টিং এজেন্টরা গণনাকেন্দ্রে ভয় ও সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করায় তৃণমূলের এজেন্টরা থাকতেই পারেননি। সেই সুযোগ নিয়ে গণনা ‘প্রভাবিত’ করা হয়েছে। দু’টি অভিযোগ পাঠানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশনে। কমিশন জানায়, ফের ভোট হলে তাদের আপত্তি নেই। সেই মতো রবিবার গণনার দিন স্থির হয়।
রবিবারের গণনা হয়েছে বিরোধী এজেন্ট ছাড়াই। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘সমস্ত দলের প্রার্থীদের চিঠি দিয়ে পুনর্গণনার কথা জানানো হয়েছিল। কেউ না এলে প্রশাসনের কিছু করার নেই।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, এজেন্টকে বের করে দেওয়া এবং এজেন্টের না আসা মাত্রাগত ভাবে আলাদা। ফলে এ দিনের গণনায় অনৈতিক কিছু হয়নি।
বিজেপি আগেই এ দিনের গণনা বয়কটের কথা জানিয়েছিল। এ দিন তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, বিরোধীদের কয়েকজন এজেন্ট সেখানে ছিলেন। তবে কেন্দ্রে গিয়ে তেমন কাউকে দেখা যায়নি। তাঁদের তরফে কেউ এ দিন গণনাকেন্দ্রে যাননি বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘রবিবারের পুনর্গণনা আখেরে প্রহসনের মুকুটে আরেকটা পালক যোগ করল। আমাদের কর্মীরা স্বভাবতই সামিল হননি।”
এ দিন গণনাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গিয়েছে, টেবিলগুলির সামনে তৃণমূলের এজেন্টরা ভিড় করে রয়েছেন। প্রতিটি ব্যালট খুঁটিয়ে দেখার পরেই গণনা হচ্ছে। দলের নেতা কর্মীদের নিয়ে এ দিন গণনাকেন্দ্রের বাইরে মাঠে বসেছিলেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি।
এলাকায় আশান্তি ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় এ দিন গণনাকেন্দ্রে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ছিলেন রঘুনাথপুর, সাঁতুড়ি, পাড়া ও আদ্রা থানার ওসি, রঘুনাথপুর আর কাশীপুরের সার্কল ইনস্পেক্টর। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) অভিজিৎ চৌধুরীও ছিলেন সেখানে। সকাল ১০টা নাগাদ গণনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শুরু হতে হতে বেজে গিয়েছিল প্রায় সাড়ে ১১টা। প্রথম রাউন্ডের গণনা শেষে সাড়ে তিনশোর মত ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনা যত এগিয়েছে, বিজেপির প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান বাড়তে দেখা গিয়েছে।
প্রথম রাউন্ডের শেষেই অনাথবন্ধু দাবি করেছিলেন দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনার শেষে তিনিই জিতবেন। তাঁর ব্যাখ্যা, বিজেপি পঞ্চায়েতের যে এলাকায় জিতেছিল সেই এলাকায় প্রথম রাউন্ড গণনা হয়েছে। তাই পিছিয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় রাউন্ড গণনা হয়েছে তৃণমূলের জেতা এলাকায়। ওই এলাকায় বিজেপির প্রার্থীর চেয়ে অনেক ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি। তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন গণনায় বিজেপির প্রার্থীর পাওয়া বেশ কিছু ভোট বাতিল হয়েছে।
পুনর্গণনার এই ফল এখন জেলাবাসীর অন্যতম আলোচনার বিষয়। তবে জেলা পরিষদের সমীকরণে এতে কোনও বদল হচ্ছে না। এ দিনের গণনার পরে জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনের মধ্যে ২৬টি তৃণমূলের দখলে এসেছে। বিজেপির ৯টি আর কংগ্রেসের ৩টি আসন রয়েছে।