Panchayat Poll 2018

ভাঙড়-সন্ত্রাসে প্রশ্নের মুখে পুলিশও

প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালেও গমগম করছিল উত্তর গাজিপুরে আরাবুলের বাড়ি। উঠোনে শ’দেড়েক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। বাইরে গাড়ির সারি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০৩:৩৩
Share:

আরাবুলের বাড়ির পিছন থেকে পাওয়া বোমা। ছবি: সুমন বল্লভ

আরাবুল ধরা পড়তেই বদলে গেল ছবিটা!

Advertisement

প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালেও গমগম করছিল উত্তর গাজিপুরে আরাবুলের বাড়ি। উঠোনে শ’দেড়েক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। বাইরে গাড়ির সারি। আর শনিবার সকালে ওই বাড়িতে তালা! চার পাশে জমি রক্ষা কমিটির লোকজনের ভিড়। পাশের বাড়িটি আরাবুলের ভাই আজিজুর ওরফে খুদে-র। তালা সেখানেও। কোথায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক? কিছুটা দূরে মাঠে কয়েক জনকে ঘুরতে দেখা গেল। কিন্তু তাঁরা কথা বলতে নারাজ! দেখা মিলল না পুলিশেরও।

শুধু উত্তর গাজিপুরই নয়, শুক্রবার নির্দল সমর্থক হাফিজুল মোল্লা খুনের পরে রাতেই ভাঙড়ের পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা চলে যায় পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকারীদের দখলে। উত্তর গাজিপুর, শ্যামনগর, নতুনহাট, মাছিভাঙা, ডিবডিবে এলাকায় দাপিয়ে বেরিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা আরাবুল অনুগামীদের কিছু মোটরবাইক পুড়িয়ে দেন এবং দোকানপাট ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। যদিও আন্দোলনকারীরা সে অভিযোগ মানেননি। শনিবার সকালে উত্তর গাজিপুরের হাড়োয়া-লাউহাটি রোডের নানা জায়গায় দেখা গেল পোড়া মোটরবাইক পড়ে রয়েছে। ভাঙচুরের চিহ্ন দোকানপাটে। এমনকি, আরাবুল যে দলীয় কার্যালয়ে বসতেন, সেটিও ধূলিসাৎ। জমি রক্ষা কমিটির পক্ষে মির্জা হাসানের দাবি, ‘‘আমাদের কেউ ভাঙচুরে যুক্ত নন। এটা সাধারণ মানুষের রাগের বহিঃপ্রকাশ।’’

Advertisement

শুক্রবার গভীর রাতে আর জি কর হাসপাতাল থেকে হাফিজুলের মৃতদেহ এনে খুনে জড়িত সকলকে গ্রেফতারের দাবিতে ঘণ্টাতিনেক হাড়োয়া-লাউহাটি রো়ড অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। মাঝরাতে পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও সেখানে গিয়ে একই দাবি তোলেন। ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ মৃতদেহ স্থানীয় জিরেনগাছা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকেই পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়। এ দিন সকালেও ওই রাস্তায় অবরোধ করেন আন্দোলনকারী মহিলারা। খোলেনি অধিকাংশ দোকানপাট। থমথমে এলাকা। হামলার আশঙ্কায় মাছিভাঙা গ্রামের মহিলারা হাতে লাঠি নিয়ে পাহারায় নামেন।

শ্যামনগর ছাড়া কোথাও সকালে পুলিশি টহলদারি দেখা যায়নি। এমনকী, আরাবুলের বাড়ির পিছন থেকে এ দিন তাঁরা বিপুল পরিমাণ বোমার খোঁজ পেয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান আন্দোলনকারীরা। তাঁদের আরও দাবি, আরাবুলের বাড়ির পিছনের কয়েকটি ঝুপড়িতে বোমার মশলা এবং রাসায়নিক মজুত রয়েছে। কিন্তু সে সব উদ্ধার করতে পুলিশ আসেনি বলে অভিযোগ। বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘ভোটের কারণে বেশিরভাগ পুলিশকর্মীকে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নজরদারি চলছে। বোমা উদ্ধারের কথা পুলিশকে কেউ জানাননি।’’

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ এবং এসপিজি-র দুই অফিসার তল্লাশি চালিয়ে আরাবুলকে গ্রেফতার করেন। সেই সময় এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় সিংহ-সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা কাশীপুর থানায় আসেন। আরাবুলকে গ্রেফতারের পরে তাঁরা এলাকা ছাড়েন। শনিবার দেখা যায়, ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসার এবং র‌্যাফের কয়েক জন থানার সামনে মোতায়েন। পাওয়ার গ্রিড এলাকায় যে তিনটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে, সেগুলি ফাঁকা।

ময়নাতদন্তের পরে রাতে মাছিভাঙায় আসে হাফিজুলের দেহ। মাস পাঁচেক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর অকালমৃত্যুতে স্ত্রী সাবিরা আরাবুলদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন, ‘‘আমাকে সংসারটাই করতে দিল না ওরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন