Local Politics

ফোনে হুমকি পেলাম, খবর করতে এলে ঠ্যাং ভেঙে দেব

জানতাম, আজ সকাল ১০টা থেকেই রঘুনাথগঞ্জের তিনটি মোড়ে তৃণমূল অবরোধ করবে। যাতে এসডিও অফিসে এসে মনোনয়ন জমা দিতে না পারেন বিরোধী প্রার্থীরা।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:০৮
Share:

হাতে বাঁশ, লাঠি নিয়ে অবরোধকারীরা। রঘুনাথগঞ্জে, সোমবার। -নিজস্ব চিত্র।

এত দিন সাংবাদিকতা করছি, কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। ফোনে যথেচ্ছ হুমকি, অশ্রাব্য গালাগালি। সাংবাদিক ও বিরোধী প্রার্থীদের মারধর। সঠিক সংবাদ পরিবেশন করাটা যেন সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় অপরাধ!

Advertisement

সামনে যেতেই দেওয়া হচ্ছে না আমাদের। মারধরের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও যাওয়ার চেষ্টা করলে কিল, চড়, ঘুষি খেতে হচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে আমরা সাংবাদিকরা দেখছি, এসডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে আসা বিরোধী প্রার্থী ও তাঁদের অনুগামীদের বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। যাঁরা অবরোধ করছেন তাঁদের হাতে বড় বড় বাঁশ, উইকেট। হাসপাতালে যাওয়ার মুখে মহিলাদেরও ভয় দেখিয়ে পথ আটকানো হচ্ছে।

জানতাম, আজ সকাল ১০টা থেকেই রঘুনাথগঞ্জের তিনটি মোড়ে তৃণমূল অবরোধ করবে। যাতে এসডিও অফিসে এসে মনোনয়ন জমা দিতে না পারেন বিরোধী প্রার্থীরা।

Advertisement

তাই খবর হবে ভেবে তৈরি হচ্ছিলাম। আর তখনই একের পর এক হুমকি ফোন আসতে লাগল আমার মোবাইলে। অন্য সাংবাদিকদের ফোনেও।

অপরিচিত গলায় আমাকে ফোনে হুমকি দেওয়া হল, ‘‘আজ দাদা, ভাই কাউকেই ছাড়ব না। ছবি তুলতে এলে ক্যামেরা ভেঙে দেব। আর খবর করতে এলে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেব।’’

আরও পড়ুন- গুলি-বোমা, পুলিশকেও মার! শেষ দিনেও তাণ্ডব জেলায় জেলায়​

আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত ভোটে হস্তক্ষেপ নয়, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট​

কারা ফোন করল বুঝতে পারলাম না। নাম জানতে চাইলেই ফোন কেটে দেওয়া হল।

কিন্তু সে সবের পরোয়া করিনি। খবর তো আমাকে করতেই হবে। রঘুনাথগঞ্জের এসডিও অফিসের কাছে যে তিনটি জায়গায় অবরোধ হচ্ছে, সেখানে পৌঁছে দেখলাম, অবরোধকারীরা কেউই পরিচিত নয়। বছর ২০/২২-এর ছেলেছোকরা। স্থানীয় নয় কেউই। আশপাশের এলাকা থেকে আসা সমাজবিরোধী।

আজ সকাল ১০টা থেকে অবরোধ শুরু হয় রঘুনাথগঞ্জের এসডিও অফিসের কাছাকাছি রেজিস্ট্রি মোড়, ডায়মন্ড ক্লাব চত্বর ও ফাঁসিতলায়। ২ এপ্রিল থেকেই চলছে তৃণমূলের এই অবরোধ। গত শুক্রবার রেজিস্ট্রি মোড়ে মনোনয়ন জমা দিতে আসা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের লক্ষ করে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ছোড়ে অবরোধকারীরা।

শনিবারই স্থানীয় সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় পুলিশকে বলেছিলেন, ‘‘কেউ আমাদের (কংগ্রেস) প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিলেই আমরা অবস্থান শুরু করব।’’ তার পর মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদের জনাপনেরো প্রার্থীকে নিয়ে এসডিও অফিসে ঢুকেছিলেন অভিজিৎ। তখন পুলিশই অবরোধকারীদের হঠিয়ে দিয়েছিল। তা দেখে ওই দিনই আশপাশের গ্রাম থেকে সিপিএম, এসইউসি (আই)-এর কর্মীরাও রঘুনাথগঞ্জের এসডিও অফিসে এসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের বাধা দেওয়া হয়।

সকালে তিনটি মোড়ে তৃণমূলের অবরোধ শুরু হবে বলে সকাল ৯টা নাগাদ সুতি-২ নম্বর ব্লকের জনাপনেরো কংগ্রেস প্রার্থীকে নিয়ে রেজিস্ট্রি মোড় দিয়ে এ দিন পুলিশকে সঙ্গে রেখে রঘুনাথগঞ্জে এসডিও অফিসে ঢোকেন স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ। প্রার্থীদের এসডিও অফিসে বসিয়ে অভিজিৎ অন্য একটা কাজে কান্দি রওনা হয়ে যান।

এর পর অবরোধ শুরু হলে এসডিও অফিস থেকে মারধর করে ওই কংগ্রেস প্রার্থীদের বের করে দেয় তৃণমূলের অবরোধকারীরা। তাদের হাতে ছিল বাঁশ, উইকেট। মুখ ঢাকা ছিল গামছায়। এসডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে আসা সিপিএম প্রার্থীরা ওই সময় ছিলেন তাঁদের দলীয় অফিসে। তাঁদের সবার সামনেই হুমকি দেওয়া হয়।

এসডিও অফিস থেকে এ দিন যে কংগ্রেস প্রার্থীদের মারধর করে বের করে দেয় তৃণমূলের অবরোধকারীরা, তাঁদের অন্যতম সুতি-২ নম্বর ব্লকের উমরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান গোলাম নাসের বলেন, ‘‘পুলিশের সামনেই ওরা আমাদের কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে মারতে মারতে বের করে দিল। গলা ধাক্কা দিল আমাদের। ওদের হাতে ছিল বাঁশ, উইকেট।’’

এর পর আমাদের সাংবাদিকের উপর চড়াও হয় অবরোধকারীরা। আমরা যাতে তিনটি অবরোধস্থলের ধারেকাছে পৌঁছতে না পারি, সে জন্য ১৫০ মিটার দূরে আমাদের একটি আমবাগানের মধ্যে আটকে রাখা হয়। তা সত্ত্বেও খবরের প্রয়োজনে লাল্টু দাস নামে এক স্থানীয় চিত্র সাংবাদিক রেজিস্ট্রি মোড়ে অবরোধস্থলের কাছে পৌছনোর চেষ্টা করলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলের অবরোধকারীরা। আর একটি পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক মুস্তাক আলিকে ফোনে হুমকি দেয় পুলিশই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন