পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন-পর্বে একের পর এক সংঘর্ষের পিছনে ‘বহিরাগত’-দের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে শাসকদল। এ বার নবান্ন থেকেও সরকারি ভাবে সে কথাই বলা হল। নবান্নের শীর্ষমহলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া ঝাড়খণ্ড বিহার এবং অসম থেকে ‘পরিকল্পিত ভাবে’ বহিরাগতদের এ রাজ্যে ঢুকিয়ে অশান্তি পাকানোর চক্রান্ত চলছে। উল্লেখযোগ্য, ঝাড়খণ্ড এবং অসম বিজেপি-শাসিত। বিহারে সরকার এনডিএ শরিক জেডিইউ-এর।
এ দিনই বিজেপি নেতা মুকুল রায় পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল যাদের নিয়ে ঘুরছে, গুন্ডামি করছে, বোমা মারছে তারা কোন রাজ্য থেকে এসেছে! তারা কি চাঁদ থেকে এসেছে?’’
বহিরাগত-তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে শনিবার এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘মহম্মদবাজারে এ দিনের জমায়েতে প্রচুর লোক দুমকা থেকে এসেছে। সেই ভিডিয়ো আমাদের হাতে এসেছে। বিষয়টি দেখছি। বীরভূমের এসপি-কে দুমকার এসপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’’ এখনও পর্যন্ত কত জন বহিরাগতদের গ্রেফতার করা হয়েছে? এর উত্তরে অনুজ বলেন, ‘‘সংখ্যাটা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই।’’
অথচ পুলিশ আগেই দাবি করেছিল, বহিরাগতদের রুখতে প্রতিটি সীমান্তে উপযুক্ত নজরদারি রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের সেই প্রাথমিক কৌশল যে কাজে আসছে না, তা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিচ্ছেন নবান্নের কর্তারা।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় যত পুলিশ নাকাবন্দির কাজে নিযুক্ত, তার থেকে অনেক গুণ বেশি বহিরাগত ঢুকছে। সমস্যা হচ্ছে সেখানেই।’’ কিন্তু এই অনুমান কি আগে করতে পারেনি পুলিশ? সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘বিকল্প পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
ঘটনাচক্রে, এ দিনই বীরভূমের মহম্মদ বাজারে তীরের আঘাতে বিশ্বনাথ মাহারা নামে এক ব্যক্তি জখম হয়েছেন। তাঁকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ দিন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নির্দিষ্ট ধারার মামলা হয়েছে ১৯৯ জনের বিরুদ্ধে। ৪৭৫টি গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা হয়েছে। শান্তি বজায় রাখতে গ্রেফতার করা হয়েছে ১১৬৭ জনকে। আটটি বন্দুক, ন’রাউন্ড গুলি এবং ১৫টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশ অবশ্য এখনও দাবি করছে, ভোট সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ রাখতে রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট। কিন্তু কী ফর্মুলায় পুলিশ মোতায়েন করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নবান্ন সূত্রের আশা, সোমবার আদালত কোনও রায় দিলে হয়ত পুলিশ মোতায়েনের নকশা চূড়ান্ত হবে।