প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের নানা প্রান্তে নিরাপদে প্রচার করতে না পারার অভিযোগ তুলছেন বিরোধী প্রার্থীরা। আর লালগড়ে খোদ তৃণমূলের প্রার্থীই বলছেন, “নিজের দলের কিছু লোক এত সমস্যা করছেন যে শান্তিতে প্রচারটাও করতে পারছি না।’’
বিরোধী নয়, গোঁজ-নির্দলের ঠেলাতেই অতিষ্ঠ লালগড়ের দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী নমিতা মাহাতো। কখনও দেওয়ালে তাঁর নামের পাশে আঁকা ঘাসফুল মুছে দেওয়া হচ্ছে বলে নালিশ, কখনও আবার অনুগামীদের মারধরের অভিযোগ উঠছে। অবস্থা এমনই যে নমিতা যাতে নিরাপদে প্রচার সারতে পারেন, সে জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন তৃণমূলের বিনপুর-১ (লালগড়) ব্লক নেতৃত্ব।
নমিতার বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুরের বলরামপুর গ্রামে। বিনপুর-১ (লালগড়) পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তিনি। এ বার ওই আসনটি আদিবাসী মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর আসনে প্রার্থী হয়েছেন নমিতা। নমিতার স্বামী জগদীশ মাহাতো গত বছর ডিসেম্বরে খুন হন। রাজনৈতিক রেষারেষিতেই জগদীশ খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর থেকে নমিতার নিরাপত্তায় সর্বক্ষণের জন্য মোতায়েন রয়েছেন ছ’জন সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই পাহারার তোয়াক্কা না করে নমিতাকে দলেরই একাংশ হেনস্থা করছেন বলে অভিযোগ।
শুক্রবার রাতে নমিতার অনুগামীরা দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের একাংশের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হন তৃণমূলের বিনপুর-১ ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়। বনবিহারীবাবু বলেন, “নমিতার প্রচারে দলের কিছু লোকজন
সমস্যা তৈরি করছেন। দলীয় স্তরে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। নমিতা যাতে নির্ভয়ে প্রচার করতে পারেন সে জন্য পুলিশকেও বলেছি।” নমিতা নিজেও বলছেন, ‘‘ভোটারদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমার দলীয় প্রতীক মুছে নির্দল প্রার্থীর প্রতীক এঁকে দেওয়া হচ্ছে।” পুলিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে। জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ভোটের সময় যে কোনও প্রার্থীর সমস্যা হলেই নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হবে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, নমিতা ব্লক সভাপতির মনোনীত প্রার্থী। দলীয় প্রতীক না পেয়ে নমিতার বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়ছেন সলমা মুর্মু। সলমা ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার অনুগামী। এই কোন্দলেই নমিতার প্রচারে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সলমার
সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর স্বামী গুরুচরণ মুর্মু বলেন, ‘‘গোলমাল পাকানোর অভিযোগ মিথ্যা। জনতার রায় নিয়েই আমার স্ত্রী নির্দল দাঁড়িয়েছেন। বড় নেতৃত্বেরও সমর্থন আছে।’’ সুকুমারবাবু কি আপনাদের পাশে রয়েছেন? গুরুচরণের জবাব, ‘‘নিশ্চয়ই রয়েছেন।’’ যদিও সুকুমারবাবুর দাবি, ‘‘সলমা মুর্মুকে আমি চিনি না।”
লালগড়ের মতো একদা মাওবাদী ঘাঁটিতে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে সমস্যার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “দলের যাঁরা এ সব করছেন, তাঁরা সংযত না হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”