পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে এ বার ‘অভূতপূর্ব’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু অনেকেরই যুক্তি, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সময়ে সন্ত্রাস ও অশান্তির বীজ বপন করে গিয়েছে বামেরাই। তাদের আমলে যে অন্যায় হয়েছিল, তা অস্বীকার না করেই এ বার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু পাল্টা যুক্তি দিলেন— সে সময়ের অন্যায়কারীদের আর দলে রাখা হয়নি। যথাসম্ভব তিরস্কারের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এখন অন্যায়ের কোনও তিরস্কার নেই।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে পঞ্চায়েত ভোট উপলক্ষে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমানবাবু কড়া নিন্দা করেছেন মনোনয়ন-পর্ব থেকেই সন্ত্রাস এবং খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের উপরে হামলার। তখনই প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের আমলেও তো এ সব হয়েছে! আরামবাগ, গোঘাট, গড়বেতা, কেশপুর সে সবের সাক্ষী! জবাবে বিমানবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে ২০০৩ ও ২০০৮ সালে আমাদের দলের যাঁরা অন্যায়ে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের জায়গা আর দলে হয়নি। রাঘব-বোয়ালদেরও বাদ দিইনি! শাস্তিদানের বিধান থাকলে তবেই এই ধরনের ঘটনা ঠেকানো সম্ভব। আমরা চেষ্টা করেছি তিরস্কার ও শাস্তিদানের।’’ বিমানবাবুর ইঙ্গিত ছিল অনিল বসু, লক্ষ্মণ শেঠদের দিকে। ফের প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের বিরুদ্ধে তো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে ব্যবস্থা হয়েছে? বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটা জায়গায় অভিযোগ পেয়ে একসঙ্গে ১৬ জনকে বার করে দেওয়া হয়েছে, এমন ঘটনাও আছে। মুশকিল হল, অন্যায়টা মনে করানো হয়। ব্যবস্থা নেওয়াটা আর মনে করানো হয় না!’’
সাংবাদিক নিগ্রহের কিছু ঘটনায় ব্যক্তিগত স্তরেও অভিযোগ পেয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন বিমানবাবু। ক্ষমতা হারানোর পরে এখন দলের সদস্যপদের ছাঁকনি আঁটোসাঁটো করতে গিয়ে রাজ্যে সিপিএমের কলেবর ১ লক্ষ ৯৬ হাজারে ঠেকেছে। বিমানবাবুর স্পষ্ট কথা, এই সংখ্যা তাঁরা আরও কমিয়ে ফেলবেন। ‘গোলমেলে’ লোক তাঁদের চাই না। নন্দীগ্রামে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটের দিন সিআরপি কর্তা অলোক রাজকে তৎকালীন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণবাবুর ফোনে ধমকানোর খবর পেয়ে আলিমুদ্দিন যে হস্তক্ষেপ করেছিল, সেই কথাও উঠেছে। সেই সঙ্গেই বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘এখন শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, কে এক নতুন কবি উঠেছে!’’