লেলিহান: ভাঙড়ে জ্বলছে আগুন। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে পঞ্চায়েত ভোটে ২০১৩-র মতো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটলে তার দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের। দায় থাকবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনেরও।
প্রশ্ন উঠেছে, সন্ত্রাসের সেই তুল্যমূল্য বিচারের মাপকাঠি কী হবে? কারণ, তথ্য বলছে, কোনও নির্বাচনেই হতাহতের সংখ্যা ও হিংসার ঘটনার পরিসংখ্যান সরকারি খাতায় যা ওঠে, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায় না। অভিযোগ, বরাবরই যখন যে সরকার থাকে হিংসার ঘটনা তারা কমিয়েই দেখায়।
শুক্রবারই কমিশনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পুলিশ রিপোর্ট অনুয়ায়ী এখনও পর্যন্ত ভোটে হিংসার বলি হয়েছেন চার জন। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তালিকা দিয়ে দাবি করেছেন, শুধু তৃণমূলেরই ১৪ জন এ পর্যন্ত খুন হয়েছেন। বিজেপি সাত জন এবং সিপিএম চার জন দলীয় কর্মীর খুন হওয়ার দাবি জানিয়েছে। পুলিশ রিপোর্টে যদিও তার কোনও প্রতিফলন নেই বলে কমিশনের কর্তারা জানান।
২০১৩ সালে পাঁচ দফায় প়ঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল। সংবাদপত্র প্রকাশিত রিপোর্চ অনুযায়ী, পুলিশ সূত্রে ভোটের দিন নিহতের সংখ্যা ছিল ১৫। বেসরকারি সমীক্ষকদের হিসাবে সংখ্যাটি ছিল ২৫। সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুয়ায়ী, ২০০৮-এর বাম আমলে তিন দফার ভোটে প্রাণ গিয়েছিল ২৩ জনের। আর বেসরকারি সমীক্ষকদের হিসাবও ছিল ২৩।
এ বার ভোট এক দিনের। মনোনয়ন পর্ব থেকেই সন্ত্রাসের অভিযোগ ব্যাপক। আদালত সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে ভোট শান্তিপূর্ণ করার কথা বলেছে। বিরোধীদেরও তেমন আশঙ্কা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আদালতের সমালোচনা করতে চাই না। কিন্তু ২০১৩ -এর কথায় কেন মনে এল? যে বার ১১৯ জন মারা গিয়েছিল, সেটা কেন মনে এল না?’’
শুক্রবার নির্বাচন কমিশনার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্যসহ শীর্ষ কর্তাদের ভোট-সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠান। কমিশনের হিসাব বলছে, ভোট হচ্ছে যে ৪৭ হাজার ৪৪২টি বুথে তার ৮৫%-ই সাধারণ বুথ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। বাকি ১0% বুথে থাকবে আঁটোসাটো নিরাপত্তা বাহিনী।
এ দিন বুথে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার নিয়েও প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার। প্রশাসনিক কর্তারা কমিশনারকে আশ্বস্ত করে জানান, যে সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা বেশি, সেগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিশেষ ব্যবহার করা হবে না। বহিরাগতদের এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিতেও বলেছেন।