প্রতীকী ছবি।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সব থেকে কম ব্যবধানে তৃণমূলের হারা আসনে ফের গণনা হতে যাচ্ছে আজ, রবিবার। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় শনিবার জানান, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের জেলা পরিষদের ৩৮ নম্বর আসনে ফের ব্যালট গণনা করা হবে। এই সিদ্ধান্তে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। যদিও নতুন করে গণনা বিজেপি বয়কট করবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।
জেলা পরিষদের ওই আসনে বৃহস্পতিবার গণনায় তৃণমূলের প্রার্থী জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ অনাথবন্ধু মাজির থেকে প্রায় ৪৫৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী গণেশকুমার সিংহ। তাঁকে বিজয়ী হিসেবে শংসাপত্রও দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। কিন্তু, তারপরেও কেন পুনরায় গণনার সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতৃত্ব।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হচ্ছে, মূলত দু’টি কারণে এই আসনে ফের গণনা করা হচ্ছে। প্রথমত, বৃহস্পতিবার গণনার শেষ দিকে বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টরা গণনাকেন্দ্রর মধ্যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে তাদের এজেন্টদের বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে বলে বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। তিনি পুনরায় গণনার আবেদন জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, গণনার কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টরা বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডলের উপরে চাপ সৃষ্টি করে দলীয় প্রার্থীকে শংসাপত্র দিতে বাধ্য করেন বলে তিনি বৃহস্পতিবার রাতেই রঘুনাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রার্থীর আবেদন ও বিডিও-র অভিযোগ আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে এ ক্ষেত্রে কী করণীয় তা জানতে চেয়েছিলাম। কমিশন পুনরায় গণনার ক্ষেত্রে ‘নো-অবজেকশান’ দেওয়ার পরেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাপেই প্রশাসন মাথা নুইয়ে ফের গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারচুপি করে ওই আসনটিতে তৃণমূলকে জিতিয়ে দিতেই এই আয়োজন। প্রতিবাদ জানিয়ে গণনা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।” একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘গণনার ফল অন্যরকম হলে, আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’ প্রসঙ্গত, শনিবার প্রশাসন চিঠি দিয়ে সমস্ত দলের প্রার্থীদের গণনায় উপস্থিত থাকার জন্য জানিয়েছে। বিজেপির প্রার্থী গণেশবাবু বলেন, ‘‘মানুষের রায়ে আমি জিতেছি। তাই পুনরায় গণনার চিঠি নিইনি।’’
জেলা পরিষদের রঘুনাথপুরের এই আসনটি গত বার তৃণমূলের দখলেই গিয়েছিল। এ বার সেখানে প্রার্থী হয়েছিলেন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের শাসকদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী কৃষি কর্মাধ্যক্ষ অনাথবন্ধু মাজি। তাঁর বিপক্ষে ছিলেন বিজেপির রঘুনাথপুর ১ ব্লকের একটি মণ্ডলের সভাপতি গণেশকুমার সিংহ।
কিন্তু কেন ফের গণনার আবেদন করলেন অনাথবাবু? তাঁর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে জেতার পরেই বিজেপির এজেন্টরা আমাদের ঘিরে ভীতি প্রদর্শন করছিল। হুমকি দিচ্ছিল। ওই অবস্থায় আমাদের বাকি এজেন্টরাও গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমাদের আশঙ্কা বিজেপির এজেন্টরা চাপ দিয়ে গণনার ফল প্রভাবিত করছে। তাই রাতেই বিডিওর কাছে ফের গণনার আবেদন জানিয়েছিলাম।” তাঁর দাবি, মাত্র সাড়ে চারশো ভোটে হেরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সঠিক ভাবে গণনা হলে অন্তত একটি ভোটেও তিনি জিতবেন।’’
যা শুনে বিজেপির জেলা সভাপতির পাল্টা দাবি, ‘‘হাস্যকর অভিযোগ করছেন তৃণমূল প্রার্থী। গণনা কেন্দ্রের মধ্যে ছিলেন শাসকদলেরই পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন। তাঁদের সামনেই শাসকদলের প্রার্থী ও এজেন্টদের আমাদের লোকজন হুমকি দিচ্ছে, এই অভিযোগ শিশুও বিশ্বাস করবে না। অনাথবাবুরা মনে হয় ভুলে গিয়েছেন বিজেপি রাজ্যের বিরোধী দল।” বিডিওর তোলা অভিযোগ নিয়েও তাঁর একই দাবি।
তবে ঘটনা হল, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েতে হেরেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতিতেও শোচনীয় ফল হয়েছে। এই ব্লকের আর একটি জেলা পরিষদের আসনে সাড়ে চার হাজারের বেশি ভোটে হেরেছেন তৃণমূলের প্রার্থী। এই অবস্থায় পুনরায় গণনায় কী ফল হয়, সে দিকেই
নজর অনেকের।