আরাবুলহীন ভাঙড়ে দাপাল তাঁর ‘ছায়ারা’

উত্তর ও দক্ষিণ গাজিপুর আরাবুলের ‘খাসতালুক’ হিসেবে পরিচিত। এ দিন ভোট শুরু হতেই ওই দুই এলাকার পাঁচটি বুথ আরাবুল অনুগামীরা দখল নেয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৭:০৫
Share:

জখম: ভাঙড়ে আহত জমি কমিটির প্রার্থী এন্তাজুল খান। নিজস্ব চিত্র

আরাবুল ইসলাম নেই। ভাবা হয়েছিল, ভাঙড়ে ভোট হবে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ। কিন্তু সোমবার ভাঙড়ে আরাবুলের খাসতালুকে দাপাল তাঁর ‘ছায়া’রা!

Advertisement

উত্তর ও দক্ষিণ গাজিপুর আরাবুলের ‘খাসতালুক’ হিসেবে পরিচিত। এ দিন ভোট শুরু হতেই ওই দুই এলাকার পাঁচটি বুথ আরাবুল অনুগামীরা দখল নেয় বলে অভিযোগ। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় জমি রক্ষা কমিটিও। সেই ‘দখল’ সরাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় কমিটির লোকজন। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় গুলি-বোমা-ইটের লড়াই। বোমার আঘাতে জখম দু’পক্ষের অন্তত ২০ জন। তার মধ্যে রয়েছেন জমি কমিটির প্রার্থী এন্তাজুল খান। পুলিশ গিয়ে শূন্যে প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলি চালিয়ে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে। ফের যাতে গোলমাল না-হয়, সে জন্য বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ এবং কলকাতা পুলিশের ডিসি রূপেশ কুমারের নেতৃত্বে টহল শুরু করে পুলিশ। গোলমালে আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যম। পুলিশ দু’পক্ষের চার জনকে গ্রেফতার করেছে।

দুপুরে উত্তর গাজিপুরের একটি বুথে ঢুকে দেখা যায় প্রিসাইডিং অফিসার ঘুমোচ্ছেন। ঘরে কোনও ভোটার নেই। পুলিশি মদতেই ওই পাঁচ বুথে তৃণমূল সমর্থকেরা অবাধে ছাপ্পা ভোট দেয় বলে অভিযোগ জমি রক্ষা কমিটির। দুপুরে ওই বুথগুলি থেকে নিজেদের এজেন্টদের প্রত্যাহার করে নেয় তারা। লাউহাটি-হাড়োয়া রোড অবরোধও করা হয়।

Advertisement

কমিটির নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ ও তৃণমূল একজোট হয়ে ভোট লুঠ করেছে। আমাদের এজেন্টদের অপহরণ, মারধর করা হয়েছে। পুলিশ কোনও অভিযোগ নেয়নি।’’ পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখে পুলিশ গিয়েছিল। এটাই স্বাভাবিক। এ সব অবাস্তব অভিযোগ।’’ ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উড়িয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

কিন্তু আরাবুলহীন ভাঙড়ে তাঁর অনুগামীরা কী ভাবে ফিরে এলেন? শুক্রবার নির্দল সমর্থক খুন হওয়ার পরেই যেখানে আরাবুলের বাড়ির উঠোনের দখল নিয়ে নেন জমি রক্ষা কমিটির লোকজনেরা?

স্থানীয় তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, রবিবার রাতে আরাবুলের বাড়িতে লুটপাট হয়েছিল। এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগও হয়। এর পরে ভোটে জিতে গেলে জমি রক্ষা কমিটির লোকজন তাঁদের বাড়িতেও লুটপাট চালাতে পারে, এই আশঙ্কা রয়েছে আরাবুল অনুগামীদের। তাই ওই রাতেই তারা একজোট হয়। বামনঘাটা-কাঁঠালিয়া থেকেও দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা আসেন। দক্ষিণ গাজিপুরের এক তৃণমূল সমর্থক বলেন, ‘‘রাতেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, সোমবার সকালে ওদের বুথের কাছে ঘেঁষতে দেব না। এটা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।’’

ওই এলাকা ছাড়া পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের অন্য এলাকায় ভোট হয় শান্তিপূর্ণ। তবে, এ দিন আর নিহত হাফিজুল মোল্লার স্ত্রী সাবিরা বিবি ভোট দিতে যাননি। তিনি বলেন, ‘‘যতদিন না স্বামীর খুনিদের শাস্তি হচ্ছে, ততদিন ভোট দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন