ছেঁড়া হল শংসাপত্র, উধাও ব্যালট-গোছা

ওই জেলারই করিমপুরের কানাইখালির স্কুলে ধুন্ধুমার বাধে বিজেপির প্রার্থীদের শংসাপত্র ছিনিয়ে ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে। বোমা, অবরোধ, সরকারি গাড়িতে আগুনের পরে পুলিশ সেখানে গুলি চালিয়েছে। হাতে গুলি লেগে জখম হয়েছেন এক পথচারী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

হিংসা এবং বেনিয়মের অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকল না পঞ্চায়েতের ভোট গণনাও।

Advertisement

ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। তার পর থেকেই দিনভর কোথাও বিরোধীদের উপরে হামলা, কোথাও গুলি চলার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বড় ঘটনা নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাজদিয়ার গণনা কেন্দ্রে। অভিযোগ, সেখানে গণনা কেন্দ্রের মধ্যে শাসক দলের পাশাপাশি গণনাকর্মীদের একাংশই ছাপ্পা দিয়েছেন! ওই জেলারই করিমপুরের কানাইখালির স্কুলে ধুন্ধুমার বাধে বিজেপির প্রার্থীদের শংসাপত্র ছিনিয়ে ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে। বোমা, অবরোধ, সরকারি গাড়িতে আগুনের পরে পুলিশ সেখানে গুলি চালিয়েছে। হাতে গুলি লেগে জখম হয়েছেন এক পথচারী।

করিমপুরের ওই স্কুলে গণনায় দেখা যায়, ২৪টি আসনের মধ্যে পর পর সাতটিতে বিজেপি জয়ী হয়েছে। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। তার পরেই বিজেপি প্রার্থীর শংসাপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মহাদেব সরকারের অভিযোগ, ‘‘আসলে সব আসনেই জিততে চেয়েছিল তৃণমূল। আমাদের সাত জন সদস্য পর পর জিতে যাওয়ায় গণনা বানচাল করতেই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে তৃণমূল। পুলিশও তাদের যথেচ্ছ মদত দিয়েছে।’’ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বক্তব্য, ‘‘মিথ্যে কথা! হেরে গিয়ে দোষ চাপানোটাই বিজেপির স্বভাব।’’

Advertisement

মুর্শিদাবাদের নওদায় সর্বাঙ্গপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী অপর্ণা বিশ্বাস ১৯ ভোটে জয়ী বলে ঘোষণা হওয়ার পরে এক দল লোক গিয়ে চেয়ার-টেবিল উল্টে দেয় বলে অভিযোগ। ছ়ড়িয়ে পড়া ব্যালট পেপার ফের গুছিয়ে তুলতে গিয়ে বদলে যায় হিসেব! সিপিএমের প্রার্থীর নামে ছাপ লাগানো এক বান্ডিল ব্যালট উধাও হয়ে যায়! সিপিএমের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যালটের হদিশ মেলেনি।

উত্তরবঙ্গে আবার বিতর্কে জড়িয়েছেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। কম ভোটে হারতে দেখলে তিনি বিরোধীদের গণনা কেন্দ্র থেকে বার করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি যাওয়ার পথে এ দিন সকালে আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকে সোনাপুর বিকে হাইস্কুল গণনা কেন্দ্রের লাগোয়া এলাকায় যান সৌরভ। তাঁকে আঙুল উচিয়ে দলের কর্মীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, কেউ গণনা কেন্দ্র থেকে বার হবেন না। যে সমস্ত আসনে বিজেপি কম ভোটে এগিয়ে আছে, সেখানে পুনর্গণনার দাবি তুলুন। গণনা ‘স্লো’ করে দিন। বিরোধীরা ঝামেলা করলে বার করে দিন।

পরে অবশ্য সৌরভ বলেন, “অধিকাংশ জায়গায় বিরোধীরা ছাপ্পা ভোট করেছে। একাধিক জায়গায় আমাদের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। আমি কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি,কর্মীরা যাতে গণনা সম্পূর্ণ করে হল থেকে বার হন।’’ বালুরঘাট কলেজের গণনা কেন্দ্র থেকেও গুলি ছুড়ে বিরোধীদের বার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরেও বিরোধীদের মারধর করে গণনা কেন্দ্র থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গণনাকেন্দ্রের কাছে কর্মীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুলিয়ার কাশীপুরের ব্লক কংগ্রেস সভাপতি কার্তিক মালাকার এবং বিজেপি নেতা অজিত সিং সর্দারকে মারধররের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘আমাদের কর্মীরা কেন বিরোধীদের মারধর করতে যাবেন? বরং সিপিএম ও বিজেপি এক হয়ে আমাদের এক কর্মীকে মারধর করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন