মহফুজের (ইনসেটে) আঁকা কার্টুনে টিনটিন পৌঁছল দার্জিলিঙে। নিজস্ব চিত্র
কমিকসের দুঁদে সাংবাদিকের সঙ্গে একরত্তি খুদের আলাপ হ্যারিকেনের আলোয়। বাংলার অজ পাড়াগাঁয়ে।
তিন দশক পার করে আসা সেই ছেলের হাত ধরেই বেলজিয়ামের সাংবাদিক টিনটিন ঘুরছেন বাংলায়! টিনটিনের সেই ‘বঙ্গপরিচয়’-কে স্বীকৃতি দিচ্ছে বেলজিয়ামও।
টিনটিনের এই বঙ্গভ্রমণের পিছনে রয়েছেন এক বাঙালি— মহফুজ আলি! পেশায় স্থপতি, তবে নেশায় কার্টুনিস্ট। নদিয়ার ছেলে, এখন কর্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ায়। ছোটবেলা থেকে টিনটিন-পাগল মহফুজ গত বার টিনটিনের জন্মদিনে এঁকেছিলেন কলকাতায় সদলবলে টিনটিনের কেক কাটার ছবি। তা শেয়ার করেছিল ভারতের বেলজিয়ান দূতাবাসের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ।
এ বার মহফুজ টিনটিনকে নিয়ে গিয়েছেন দার্জিলিঙে। টিনটিনের সদ্য পেরোনো জন্মদিনে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়েছে শুধু ভারতে থাকা বেলজিয়ামের দূতাবাস থেকে নয়, বেলজিয়াম থেকেও। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোনে মহফুজ বলেন, “এটা যেন একটা স্বীকৃতি। আমি খুশি।”
সেটা সম্ভবত ১৯৯০ সাল। তখন মহফুজেরা থাকতেন মায়াপুরের কাছে নিদয়া গ্রামে। তাঁর মনে পড়ে, “আমার বয়স তখন পাঁচও হয়নি। বাবা কৃষ্ণনগর থেকে আনন্দমেলা কিনে এনে দিয়েছিলেন। টিনটিনের কমিকস এত ভাল লেগে গিয়েছিল যে রাত জেগে কেরোসিনের আলোয় আনন্দমেলার ওই দু’পাতাই পড়তাম, আর পরের সংখ্যার জন্য অপেক্ষা করতাম। বাড়িতে একটা ভাঙা দেওয়াল ছিল। তাতেই টিনটিনের ছবি আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম।”
আঁকার নেশা ছোটবেলা থেকেই, কিন্তু সে ভাবে শেখা হয়নি কখনও মহফুজের। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের পাঠ শেষ করে স্থাপত্য নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন শিবপুরে। স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আঁকার ক্লাস হত। তাতেই যেটুকু শেখা। প্রচুর কমিকস পড়তেন আর এঁকে যেতেন। ২০১৭ সালে একটি প্রতিযোগিতায় সেরা কার্টুনিস্টের শিরোপা জয়ের পর তিনি ফেসবুকে পেজ বানিয়ে নিয়মিত কার্টুন আঁকা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: মোদীর হেলিপ্যাডের জন্য গাছ কাটার নালিশ
আর তার পরেই গত বছর টিনটিনকে তাঁর প্রথম বাংলায় আনা। গত বিশ্বকাপের সময়েও বেলজিয়ান দলের সঙ্গে টিনটিনকে এঁকেছেন। এ বছর টিনটিনের ৯০তম জন্মদিনে তাকে ফের বাংলায় আনার কথা ভেবেই রেখেছিলেন। দার্জিলিং কেন? মহফুজ বলেন, ‘‘দার্জিলিং তো বাঙালির খুব প্রিয়। তাই ভাবছিলাম, টিনটিন বাংলায় এলে নিশ্চয়ই দার্জিলিঙে যেত!’’
আসলে, আর পাঁচ জন বাঙালি পাঠকের মতো মহফুজও টিনটিনকে বাঙালি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারেন না। তাঁর মতে, “এটা সম্ভব হয়েছে অমন অনুবাদের গুণে। তার পিছনে যিনি ছিলেন সেই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রয়াণের খবর পেয়েও খুব মনখারাপ হয়েছিল।”
তবে কলকাতা আর দার্জিলিঙেই শেষ নয়। মহফুজ টিনটিনকে ঘোরাতে চান বাংলার নানা জায়গায়। যে যে জায়গা তাঁর প্রিয়, সেই সব জায়গায় টিনটিন-কুট্টুস-হ্যাডকদের নিয়ে যেতে চান তিনি। তার মধ্যে একটা অবশ্যই শান্তিনিকেতন। মহফুজ হেসে বলেন, “এর পর হয়তো টিনটিন-কুট্টুস কোনও চায়ের দোকানে ভাঁড় নিয়ে আড্ডা মারবে। গাঁয়ের পুকুরে মাছও ধরতে পারে!”