BGBS 2022

BGBS 2022: আদানির মুখে ‘দিদি’, রাজ্যে আগামী ১০ বছরে ১০ হাজার কোটি লগ্নির প্রতিশ্রুতি

রাজ্য সম্পর্কে যে পরিমাণ ‘হোমওয়ার্ক’ এ দিন তাঁর বক্তৃতায় দেখা গেল, তাতে দীর্ঘ মেয়াদে বঙ্গে আরও অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে দেখা যাবে তাঁকে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৩৬
Share:

বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় শিল্পপতি গৌতম আদানির। পাশে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

ব্যবসার বহরে আর বিত্তে যে দুই ধনকুবের শিল্পপতির ‘টক্কর’ প্রায়শই সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে, তাঁদের এক জন এই প্রথম পা রাখলেন বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের (বিজিবিএস) মঞ্চে। বুধবার সেখান থেকেই আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির ঘোষণা, আগামী এক দশকে বাংলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তাঁর সংস্থা। তার হাত ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কাজের সুযোগ তৈরি হবে প্রায় ২৫ হাজার।

Advertisement

মঞ্চে না থেকেও শিল্পমহলের ঘরোয়া আড্ডায় বারবার উঠে এল অন্য জনের নামও। একে অপরকে জিজ্ঞাসা, ‘এ বার কেন এলেন না রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী?’ এর আগে অবশ্য এই শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

সংস্থার সম্পদ কিংবা বার্ষিক ব্যবসার অঙ্কে আদানি গোষ্ঠী এখন রিলায়্যান্স, টাটাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। বন্দর থেকে জাতীয় সড়ক— বিভিন্ন ‘মেগা’ পরিকাঠামো প্রকল্পে তারা যে বিপুল অঙ্ক লগ্নি করে, তার তুলনায় দশ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি চোখ কপালে তোলার মতো নয়। কিন্তু শিল্পমহলের অন্দরে গুঞ্জন, রাজ্য সম্পর্কে যে পরিমাণ ‘হোমওয়ার্ক’ এ দিন তাঁর বক্তৃতায় দেখা গেল, তাতে দীর্ঘ মেয়াদে বঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে কি আখেরে আরও অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে দেখা যাবে তাঁকে?

Advertisement

রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধীদের একাংশ প্রায়ই অভিযোগ করেন, আদানির এই রমরমার অন্যতম কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’। এক সময়ে এই অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলও। এ দিন অবশ্য শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে আদানি জানিয়েছেন, ‘‘পরিকাঠামোয় আমাদের বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে। কথা দিচ্ছি, প্রযুক্তি-দক্ষতা, মানুষের আশাপূরণের বিষয়ে। (এ রাজ্যে) ১০ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থান হবে ২৫ হাজার।’’

মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন, ‘‘গৌতম আদানি প্রথম বার এসেছেন। আপনার আগ্রহ আমাদের উৎসাহ বাড়াবে।’’ সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘তাজপুর সমুদ্র বন্দরে সব প্রস্তুত। তার অপেক্ষায় রয়েছি।’’

রাজ্যে আদানিদের বিনিয়োগের বহর কয়েক বছর ধরেই বেড়েছে। ভোজ্য তেল, বর্ধমানে চালকল, লজিস্টিক্স হাবে তাদের বিনিয়োগ রয়েইছে। হালে তাজপুর সমুদ্র বন্দর গড়তেও আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। রাজ্যে জাতীয় সড়কের একটি অংশের সম্প্রসারণের কাজেও এনএইচএআইয়ের ঘর থেকে বরাত পেয়েছে ওই গোষ্ঠী। এ দিন তাজপুর বন্দর তৈরিতে কারা দায়িত্ব পেল, তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ইঙ্গিত, সেই প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।

বাংলার জন্য যে তিনি ‘তৈরি হয়েই’ এসেছেন, তা স্পষ্ট আদানির বক্তৃতায়। সঙ্গে এনেছেন ছেলে করণ আদানিকে। আর বক্তৃতায় মমতাকে সম্বোধন করেছেন ‘দিদি’ বলে। গোপালকৃষ্ণ গোখেল থেকে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ হয়ে সরোজিনী নায়ডু— সকলের নাম উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের ভূমিকার উল্লেখ করতেও ভোলেননি। টেনে এনেছেন রাজ্যে মহিলা ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গও। সেই সূত্রে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে কন্যাশ্রী, উৎকর্ষ বাংলা, সবুজসাথীর মতো প্রকল্পের কথা। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সরাসরি বলেছেন, ‘‘আপনার ‘ক্যারিশমা’, জনপ্রিয়তা অতুলনীয়।’’

মুখ্যমন্ত্রী ও বাংলার বিনিয়োগ পরিবেশকে এ দিন প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন মঞ্চে উপস্থিত অন্য শিল্পপতিরাও। জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল বলেন, ‘‘এ রাজ্য সোনার পাখি।’’ আরপিজি-এসজি গোষ্ঠীর সঞ্জীব গোয়েন্‌কার কথায়, ‘‘গত এক দশকে অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। কারণ, বলিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসন।’’ উইপ্রোর ঋষাদ প্রেমজির বক্তব্য, ‘‘সামাজিক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ ইতিবাচক প্রতিফলন রাখছে।’’ প্রশংসা শোনা গিয়েছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের সঞ্জীব মেহতার মুখে। টাটা স্টিলের টি ভি নরেন্দ্রন বলেন, ‘‘খড়গপুরে কারখানার সম্প্রসারণ হচ্ছে, আরও হবে।’’ আইটিসি-র সঞ্জীব পুরী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক ক্ষেত্রে রাজ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। পর্যটনেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’’ শিল্পপতি নীরঞ্জন হীরানন্দানির কথায়, ‘‘আমার ছেলে দর্শন আমাকে বুঝিয়েছে, এই শহর বিনিয়োগের শহর।’’ শিক্ষা ক্ষেত্রে লগ্নির কথা পরে ঘোষণা করেছেন পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ও।

মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘শিল্প এবং কৃষি দুই বোন। দু’জনের উন্নয়ন হোক এবং তারা একসঙ্গে হাসুক।’’ প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, পরিকাঠামো থেকে কৃষি—সর্বত্রই আগ্রহ রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর।

যে কোনও শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে শিল্পপতিরা সেই রাজ্য ও তার প্রশাসনিক প্রধান সম্পর্কে ‘ভাল কথা’ বলবেন, সাধারণত সেটিই দস্তুর। শিল্পমহলের মধ্যে তাই গুঞ্জন, শেষমেশ বড় লগ্নি টানতে হলে জমি-জট কাটানো জরুরি। প্রয়োজন লগ্নিবান্ধব পরিবেশও। আগামী দিনে রাজ্যের সামনে সেগুলি বড় পরীক্ষা।

দিনের শেষে টুইটে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৪২টি দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তার মধ্যে ১৪টি সহযোগী দেশ। প্রত্যেকে রাজ্যের সম্পর্কে আস্থা রাখার কথা বলে বিপুল বিনিয়োগ ঘোষণা করেছেন। আগামী দিনে সেই লগ্নি রাজ্যের শিল্প-ছবি উজ্জ্বল করবে বলে আশাবাদী তাঁর প্রশাসনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন