West Bengal News

ভাঙড়ে অবরুদ্ধ বিভিন্ন রাস্তা, দিনভর থানা থেকে বেরলোই না পুলিশ

গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যুর পর পুলিশশূন্য প্রায় গোটা ভাঙড়। দিনভর থানার বাইরে কোথাও দেখা মিলল না পুলিশের। পদ্মপুকুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধ হঠানোর কোনও চেষ্টা প্রশাসনের তরফে হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ১৮:৪৬
Share:

ভাঙড়ের পথে এখনও গাছের গুঁড়ি। পুলিশের দেখা নেই। ছবি: সংগৃহীত।

গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যুর পর পুলিশশূন্য প্রায় গোটা ভাঙড়। দিনভর থানার বাইরে কোথাও দেখা মিলল না পুলিশের। পদ্মপুকুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধ হঠানোর কোনও চেষ্টা প্রশাসনের তরফে হয়নি। তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস— তিন দলের নেতৃবৃন্দই এ দিন ভাঙড়ে গিয়েছিলেন। তবে সন্ত্রস্ত এলাকায় অধিকাংশ গ্রামবাসীই এ দিন নিজেদের গৃহবন্দি রেখেছেন।

Advertisement

২৪ ঘণ্টা আগেই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গিয়েছে আরাবুল-রেজ্জাক-কাইজারদের খাসতালুকে। পাওয়ার গ্রিডের বিরোধিতায় বিক্ষোভরত জনতার সঙ্গে পুলিশের প্রবল সংঘর্ষ হয়েছে। বাঁশ, লাঠি, ইট-পাটকেল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের মুখোমুখি হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশি বাহিনী নামানো হয়। পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। গুলিও চলে। তাতে দুই গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। এক জন জখম অবস্থায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মঙ্গলবার পরিস্থিতি কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। পুলিশের অনেকগুলি গাড়িতে ভাঙচুর চলে, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একাধিক গাড়ি জলে ফেলে দেওয়া হয়। অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পুলিশ বাধ্য হয়। বুধবারও ছবিটা সে রকমই। অর্থাৎ ভাঙড়ের কোথাও এ দিন পুলিশি টহল চোখে পড়েনি। খামারআইট, গাজিপুর, নতুনহাট, শ্যামনগর-সহ বিভিন্ন গ্রামে রাস্তাঘাট জনশূন্য। গ্রামবাসীরা কেউ বাড়ি থেকে বেরননি। মঙ্গলবারের মতো এ দিন আগুন জ্বলছে না। কিন্তু পরিস্থিতি যে অস্বাভাবিক, তা স্পষ্ট। পদ্মপুকুরে রাস্তার উপর গাছের গুঁড়ি ফেলে সকাল থেকেই অবরোধ শুরু হয়েছে। হাড়োয়া-লাউহাটি সড়কও অবরোধ করে রাখা হয়েছে। পুলিশ থানা থেকে না বেরনোয় অবরোধকারীদের হঠানোর চেষ্টাও কেউ করেননি।

Advertisement

মঙ্গলবার ভাঙড়ের রাস্তায় এ ভাবেই জ্বলছিল পুলিশের গাড়ি। —ফাইল চিত্র।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন ভাঙড়ে গিয়েছিলেন। গোটা পরিস্থিতির জন্য তিনি রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছেন। অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সন্ত্রস্ত মানুষ, আক্রান্ত মানুষের পাশে থাকতেই আমরা ভাঙড়ে এসেছি। কথায় কথায় যিনি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে ছুটে যেতেন, তিনি কেন ভাঙড়ে আসতে পারলেন না জবাব দিতে হবে।’’ বিধানসভায় সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও এ দিন ভাঙড়ে যান, এলাকার মানুষের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সল্টলেকের এক জনসভায় এ দিন ভাঙড় প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সূর্যকান্ত বলেছেন, ‘‘পুলিশের মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয়, ভাঙড়ের মানুষ তা দেখিয়ে দিয়েছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এ বার নবান্ন অভিযানের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’’

আরও পড়ুন: পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে চলল গুলি, অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে হত ২

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের হুঁশিয়ারিকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। যিনি নিজে ভোটে জিততে পারেন না, তাঁর মুখে এ সব কথা মানায় না বলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন। বামেদের তীব্র সমালোচনা করে পার্থবাবু বলেছেন, ‘‘ভাঙড়ের মানুষ তৃণমূলের পাশেই রয়েছেন। সিপিএম এখন উস্কানি দিয়ে ভেসে থাকার চেষ্টা করছে।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায় এ দিন দলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে ভাঙড়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ না চাইলে যে জমি নেওয়া হবে না, সে কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছেন। তাই আন্দোলন হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’ বহিরাগতরা ভাঙড়ে এসে গোলমাল পাকিয়েছে বলে তাঁর ইঙ্গিত। গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যু প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেছেন, ‘‘পুলিশ গুলি চালায়নি। বহিরাগতরাই গুলি চালিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পুলিশ যে ভাবে কালকে নির্যাতিত হয়েছে, সেটা বাম আমলে হলে অনেক বড় ঘটনা ঘটে যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন