স্কুলের গাড়ি চলে যাক! ধর্মঘটের দিন স্কুল গাড়িতে হামলার ‘ট্রমা’ কাটছে না হাসানের

সকাল থেকে কেঁদে চলেছে সে। স্কুল যাওয়ার সময় যত এগিয়ে এসেছে, ততই বেড়েছে তার বিরক্তি-ভয়। কেউ কিছু বলতে গেলেই বলেছে, ‘‘গুডমর্নিং ম্যাম যাব না। স্কুলের গাড়ি চলে যাক!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৪
Share:

মা শাবানার কোলে স্বস্তিতে মহম্মদ হাসান আলি। বুধবার, ধর্মঘটের দিনে রাজাবাজারে তার স্কুলের গাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকে কেঁদে চলেছে সে। স্কুল যাওয়ার সময় যত এগিয়ে এসেছে, ততই বেড়েছে তার বিরক্তি-ভয়। কেউ কিছু বলতে গেলেই বলেছে, ‘‘গুডমর্নিং ম্যাম যাব না। স্কুলের গাড়ি চলে যাক!’’

Advertisement

মহম্মদ হাসান আলিকে নিয়ে এখন জেরবার তার মা শাবানা আজমি। বুধবার যে গাড়িতে করে স্কুলে যাচ্ছিল বছর চারেকের ছেলেটি, রাজাবাজারে তার উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। শাবানা এ দিন জানান, কিছুতেই একরত্তি শিশুর ‘ট্রমা’ কাটছে না। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে কিছুতেই স্কুলে যেতে চাইছে না। কোনও মতে শান্ত করা হয়েছে। চোখের সামনে স্কুলের গাড়িতে হামলার কথা বারবার বলছে।’’ শাবানা আরও জানান, বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসার পরে হাসানকে এ দিন কাউন্সেলিংয়ে নিয়ে যেতে হয়। চিকিৎসকেরা তাকে আপাতত স্কুলে পাঠাতে মানা করেছেন। ফোন করে ছাত্রের খোঁজ নিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

ওই গাড়িতে হামলার অভিযোগে বুধবারই ধর্মঘট সমর্থনকারী ২১ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনকে এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ধৃত সিপিএম নেতারা বুধবার দাবি করেছিলেন, তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। ওই গাড়ি আদতে পুলকার নয়। মধ্য কলকাতার এক স্কুলের। যার পরিচালন সমিতির সভাপতি তৃণমূলের এক কাউন্সিলর। ঘটনার বিবরণে নানা অসঙ্গতির কথাও বলা হয়েছে দলের তরফে।

Advertisement

আরও পড়ুন: যৌনপল্লির অন্ধকার থেকে ক্যানিংয়ের নাবালিকাকে ফেরাল ফোন!

বুধবার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আক্রান্ত গাড়িটিতে ১৩-১৪ জন পুড়ুয়া ছিল। কিন্তু শাবানা এ দিন জানান, গাড়িতে তাঁর ছেলে ছাড়া অন্য কোনও পড়ুয়া ছিল না। তাঁর এই দাবির পরে পুলিশের মুখে কুলুপ। তবে পুলকার না-হলেও গাড়িতে স্কুলের পোশাকে শিশু রয়েছে দেখেও তার পথ আটাকানো, ভাঙচুর চালানো কতটা সমর্থনযোগ্য, সেই প্রশ্ন থাকছেই। সিপিএমের অবশ্য দাবি, তাঁদের কেউই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘ধর্মঘটের সময়ে সর্বত্র মানুষের প্রতিরোধ দেখে ভয় পেয়ে শাসক দল এবং পুলিশ বাচ্চা ছেলেদের নামে অভিযোগ সাজাতে হাত মিলিয়েছে। চক্রান্তের পর্দা খুলছে। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

হাসানের বাড়ি রাজাবাজার এলাকায়। তার বাবা মহম্মদ সফিকের কাগজের ব্যবসা। হাসানের এক দিদি রয়েছে। সে আমহার্স্ট স্ট্রিটের একটি স্কুলে পড়ে। সফিক জানান, প্রতিদিন ছেলে-মেয়েকে স্কুল দেওয়া-নেওয়ার জন্য মহম্মদ কামাল নামে এক ব্যক্তির গাড়ি ভাড়া করেন তাঁরা। ঘটনার সময়ে ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলেন শাবানা। শাবানার কথায়, ‘‘কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে মিছিল দেখে আমাদের গাড়ি রাস্তার এক দিক দিয়ে ধীরে এগোচ্ছিল। সেখানেই এক মহিলা হাত দেখিয়ে গাড়িটি সম্পূর্ণ দাঁড় করিয়ে দেন। তার পরেই কয়েকজন লোক এসে গাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। ছেলেকে কোনওমতে বুকে জড়িয়ে ধরে চেঁচাতে শুরু করি। কিন্তু ওরা থামেনি।’’

শাবানার চোখেমুখে এ দিনও আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘হাসানের সামনেই লাঠির ঘায়ে একের পর এক কাচ ভেঙে পড়ে। ওর গায়েও লাগে। দেখলাম আমাদের গাড়ির চালক কামালদা কোনওমতে হাসানকে আমার কোল থেকে টেনে নিল। তার পরে আর কিছু মনে নেই।’’ সফিকের দাবি শাবানা গাড়ির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মানুষকে সমস্যায় ফেলে ধর্মঘট করার কী মানে? আমার বাচ্চার তো আরও বড় কিছু হতে পারত।’’

আর হাসান তখন বলছে, ‘‘ইয়া বড় লাঠি দিয়ে মেরেছে। দমা দম। গুডমর্নিং ম্যাম, আর যাব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন