রণংদেহী: দুই মহারথী, অর্জুন ও মদন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
ভাটপাড়া বিধানসভা উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রকে এ বার সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহ।
তৃণমূলে মদনের একদা সতীর্থ অর্জুন মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, মদন বাইরে থেকে সমাজবিরোধীদের এনে ভাটপাড়াকে অশান্ত করার চেষ্টা করছেন। অর্জুন বলেন, ‘‘মদন মিত্র যে খেলা শুরু করেছেন, তার শেষ আমি করব।’’ পাল্টা মদনও অর্জুনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ভাটপাড়ায় অর্জুনের মাফিয়া রাজ খতম করাই আমাদের লক্ষ্য। অর্জুন সেই দেওয়াল লিখন পড়ে ফেলেছেন বলেই এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।’’
দুই নেতার এমন গরমা-গরম বক্তব্যে ভোটের আগেই তেতে উঠেছে এলাকা। দুই নেতার বক্তব্য নিমেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন দু’পক্ষের ভক্তেরা। তবে নেতাদের এমন রণংদেহি মেজাজে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। তাঁদের আশঙ্কা, ভোটের সময়ে এলাকায় গোলমাল হতে পারে। তাঁদের প্রশ্ন, নেতারা যদি এই ভাষায় কথা বলেন, তা হলে দলের কর্মী-সমর্থকেরা তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঝামেলা পাকাতে দ্বিধা করবেন কেন?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিন অর্জুন অভিযোগ করেন, দিকে দিকে পুলিশকে সামনে রেখে তৃণমূলের লোকজন বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধর করছে। তিনি জানান, সোমবার রাতে নৈহাটির জেঠিয়া বালিভাড়ায় শিবনাথ মাহাত নামে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। অভিযোগ, তাঁর দোকানের এক কর্মচারীকে ধরে তাঁকে দিয়ে ফোন করিয়ে শিবনাথকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে রড দিয়ে শিবনাথের মাথায় আঘাত করা হয়। তিনি বর্তমানে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার রাতে ব্যারাকপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও এক বিজেপি কর্মীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
অর্জুনের দাবি, মদন ভাটপাড়ার উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই অশান্তি বেড়েছে। তিনি বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের এনে এলাকা অশান্ত করছেন। ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থীর কথায়, ‘‘মদন মিত্র যে ভাষায় কথা বলেন, আমি এ বার সেই ভাষাতেই ওঁকে জবাব দেব। যে ধরনের কাজ ওরা বোঝে, আমি তা ওদের ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেব।’’
অর্জুনের সাংবাদিক সম্মেলন প্রসঙ্গে মদন বলেন, ‘‘ভাটপাড়া তথা ব্যারাকপুরকে দুষ্কৃতীমুক্ত করার ভার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতা-কর্মীদের দিয়েছেন। সেই কাজ শুরু হয়েছে। আর তাতেই অশনি সঙ্কেত পেয়েছেন অর্জুন সিংহ। বিনাশকালে তাঁর বুদ্ধিনাশ হয়েছে।’’
অর্জুন আরও অভিযোগ করেন, তৃণমূল অন্য লোকের নাম দিয়ে তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ করছে। যে লোকের নামে অভিযোগ করা হচ্ছে, তিনি জানেনই না যে এমন হয়েছে। একজন তো আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি থানায় কোনও অভিযোগ অর্জুনের নামে করেননি। এখন পুলিশ সামনে থেকে তৃণমূল নেতাদের সুযোগ করে দিচ্ছে, বিজেপি কর্মীদের মারধর করার জন্য। কিছু পুলিশকর্মীকে আধা-সামরিক জওয়ানদের পোশাক পরিয়ে এলাকায় ঘোরাচ্ছে তৃণমূল, এমনও অভিযোগ অর্জুনের। তারা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের শাসাচ্ছে। তাঁর দাবি, এ সব নির্বাচন কমিশনকে জানানো হলেও তারা পদক্ষেপ করছে না। পুলিশ অবশ্য অর্জুনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
অর্জুন সাংবাদিক সম্মেলন করার আগে আমডাঙার সভা থেকে মদন অর্জুনকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যারাকপুরে একজন প্রার্থী হয়েছেন। আমি তাঁর সম্বন্ধে বেশি কিছু বলব না। তবে একটা কথা বলব, ২৩ মে-র পরে ব্যারাকপুরে আর কোনও বাঘ-সিংহ থাকবে না। যে সব মাফিয়ারা ভোটে লড়ছেন, তাঁরা রাস্তায় নেমে গুলি চালাচ্ছেন। এই দাদাগিরি আর চলবে না।’’ এরপরেই মদন বলেন, ‘‘এ বার লড়াইটা হবে সরাসরি। দাদাতন্ত্র কায়েম রাখতে দেব না। সমাজবিরোধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করব না।’’
দু’পক্ষের গর্জনে দলের কর্মী-সমর্থকেরা যতই উদ্বুদ্ধ হোন না কেন, সাধারণ ভোটাররা কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।