বৃহস্পতিবার রাতে বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। — ফাইল চিত্র।
বিকাশ ভবনের সামনে গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষক এবং পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে চাকরিহারাদের উপর লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ বার এই ঘটনায় চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হল বিধাননগর উত্তর থানায়। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ভাঙচুর, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধাদান-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। ১৭ জন শিক্ষককে নোটিস পাঠিয়ে ২১ মে থানায় হাজিরা দিতে বলেছে পুলিশ। হাজিরা না দিলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র নির্দিষ্ট ধারায় গ্রেফতার করা হবে বলেও জানানো হয়েছে নোটিসে। আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা।
অন্য দিকে, শনিবার বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষকদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীরাও। সঙ্গে ছিলেন তাদের অভিভাবকেরা। সেই নিয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পদক্ষেপ করল পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশন। তারা জানিয়েছে, শনিবারের ঘটনায় শিশু সুরক্ষা, জুভেনাইল জাস্টিস আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। এই বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে বিধাননগর কমিশনারেটের থেকে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার বিকাশভবনের সামনে আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনায় শুক্রবার বিধাননগর নর্থ থানায় মামলা দায়ের হয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এর পরেই ১৭ জন শিক্ষককে নোটিস পাঠিয়েছে পুলিশ। তাতে তারা জানিয়েছে, ওই শিক্ষকেরা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ভাঙচুর, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধাদান করেছেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। তাই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে নোটিসে। ২১ মে, আগামী বুধবার সকাল ১১টায় থানায় হাজির হতে হবে ওই শিক্ষকদের। উপস্থিত না হলে বিএনএসের ৩৫(৬) ধারায় তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় বিকাশ ভবনের সামনে। শিক্ষকেরা দাবি করেন, তাঁরা নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না। তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত ক্ষণ না এসে তাঁদের আশ্বস্ত করছেন, তত ক্ষণ বিকাশ ভবনের বাইরে অবস্থান চলবে। রাতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। সে কথা শুক্রবার মেনে নেয় পুলিশ। কেন লাঠিচার্জ করা হয়, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে তার ব্যাখ্যা দেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। সুপ্রতিম বলেন, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকেই সংযত ছিল। সাত ঘণ্টা পুলিশ আন্দোলনকারীদের কিছু বলেনি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা নষ্ট হলে পুলিশকে পদক্ষেপ করতেই হয়। তবে পুলিশ অনেক ধৈর্য ধরেছিল।’’
এ বার ওই ঘটনায় ১৭ জন শিক্ষককে নোটিস পাঠিয়ে থানায় তলব করল পুলিশ।
গত এপ্রিল মাসে জেলায় জেলায় ডিআই (স্কুল পরিদর্শক) অফিসে অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারারা। তখন কসবায় ডিআই অফিসের বাইরে জড়ো হন বেশ কয়েক জন। তৈরি হয় উত্তেজনা। পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার ডট কম যাচাই করেনি)-য় এক বিক্ষোভকারীকে লাথি মারতে দেখা গিয়েছিল এক পুলিশ আধিকারিককে। সেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এ বার বিকাশ ভবনের সামনে আবার পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি তৈরি হল।