সিগারেট থেকে ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যতটা, বিড়ি থেকে ওই মারণ রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা তার চেয়ে কিছু কম নয়। তাই বিড়িও যে ক্ষতিকর, অবিলম্বে সরকারি ভাবে তা ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা। ক্ষতিকর দ্রব্যের তালিকায় বিড়িকে রাখার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও যাচ্ছেন তাঁরা।
পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি বা গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) কাউন্সিল জানিয়েছে, ‘ডিমেরিটস গুডস’ অর্থাৎ ক্ষতিকর দ্রব্যের কর বাড়ানো হবে। যেমন সিগারেট এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের উপরে করের হার বাড়িয়ে করা হবে প্রায় ২৮ শতাংশ। তার উপরে অতিরিক্ত করও বলবৎ হচ্ছে। কিন্তু বিড়ি ‘ডিমেরিটস গুডস’-এর তালিকায় না-থাকায় তার ক্ষেত্রে করের হার বেড়ে হবে মাত্র ১৮ শতাংশ। তবে পুরো বিষয়টিই এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
ন্যাশনাল ক্যানসার গ্রিড সূত্রের খবর, অঙ্কোলজি অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাবেন, ক্ষতিকর দ্রব্যের তালিকায় সিগারেটের মতো বিড়িকেও রাখা হোক। কারণ, তামাকজাত দ্রব্য হিসেবে দু’টিই সমান ক্ষতিকর।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বিড়ি খাওয়ার জেরে প্রায় ছ’লাখ মানুষের প্রাণ যায়। বিশ্বে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। ভারতের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ তামাক সেবন করেন। প্রতি বছর দশ লাখের বেশি মানুষ তামাক সংক্রান্ত রোগে ভুগে মারা যাচ্ছেন। তাই দাম বাড়লে আসক্তি কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ক্যানসার শল্যচিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদীর কথায়, ‘‘বিড়িকে ক্ষতিকর সামগ্রীর তালিকা থেকে বাদ রাখার পিছনে অর্থনৈতিক কারণ আছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে বিচার করলে বিড়িকে ছাড় দেওয়া ঠিক নয়।’’ বিড়ি ক্ষতিকর দ্রব্যের তালিকায় না-থাকায় চিন্তিত এ রাজ্যের চিকিৎসকেরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রামের গরিবদের একটি বড় অংশ বিড়িতে আসক্ত। তাঁদের স্বাস্থ্যরক্ষার খাতিরেই বিড়ির কর বাড়ানো জরুরি।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সোমনাথ সরকার মনে করেন, সচেতনতা প্রসারের পাশাপাশি কর বাড়ালে আসক্তি কমবে। ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিড়িতে আসক্ত হন গরিব মানুষেরা। সরকার কি তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত নয়? সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর মেনে নিয়ে ‘ডিমেরিটস গুডস’-এর আওতায় থাকলে বিড়ি থাকবে না,’’ প্রশ্ন তুলছেন মুখ ও গলার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সৌরভ দত্ত। একই প্রশ্ন তুলেছেন ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা বিড়িতে বেশি আসক্ত। চিকিৎসক হিসেবে মনে করি, ওই মানুষগুলোর সুস্থ জীবনের জন্য এই আসক্তি থেকে মুক্তি দরকার। তাই আমরা বিড়ির কর বৃদ্ধির দাবি সমর্থন করছি।’’