Bikaner–Guwahati Express

Bikaner Express derailed: উল্টে যাওয়া কামরা থেকে আর্তদের উদ্ধার করে রাতারাতি ‘হিরো’ মৌয়াবাড়ির দুই তরুণ

রাতভর উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে ছুটোছুটি করে দুর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রীদের উদ্ধার করে মৌয়াবাড়ি গ্রামের ‘হিরো’ তকমা পেয়ে গেলেন জবেদুল আর তহিদুল।

Advertisement

রকি চৌধুরী

ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৫৬
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রীদের উদ্ধার করেছেন জবেদুল ইসলাম আর তহিদুল ইসলাম। নিজস্ব চিত্র।

তখন বিকেল প্রায় ৫টা। আর কিছু ক্ষণ পরেই অন্ধকার নামবে দক্ষিণ মৌয়াবাড়ি গ্রামে। রোজকার মতো। ওই সময় হঠাৎই বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল গোটা এলাকা। এমন আওয়াজ আগে কখনও শোনেনি দোহমনি। বড় কিছু যে ঘটেছে, তা আর বুঝতে বাকি ছিল না দুই বন্ধুর।

Advertisement

ওই শব্দ শুনেই রেললাইনের দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুট দিয়েছিলেন জবেদুল ইসলাম আর তহিদুল ইসলাম। তত ক্ষণে যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। খবরও রটে গিয়েছে আশপাশের এলাকায়— বিশাল ট্রেন দুর্ঘটনা! লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে গিয়েছে দশ-বারোটি বগি।

অকুস্থলে পৌঁছে দুই বন্ধু যা দেখেছে, তা তাঁরা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেননি। “চার দিক থেকে আর্তনাদ শুনে কিছু ক্ষণের জন্য দেহ, মন অসাড় হয়ে গিয়েছিল,’ —বলছেন জবেদুল। ঘোর ভাঙতেই তাঁরা বোঝেন, এখন আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবার সময় নেই। কাজে লেগে পড়তে হবে। তার পর থেকে রাতভর উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে ছুটোছুটি করে দুর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রীদের উদ্ধার করে মৌয়াবাড়ি গ্রামের ‘হিরো’ তকমা পেয়ে গেলেন জবেদুল আর তহিদুল।

Advertisement

তত ক্ষণে প্রায় গোটা গ্রামে ছুটে চলে এসেছিল সেখানে। ছুটে আসার সময় ওঁরাই বেশ কয়েক জনকে ডেকে এনেছিলেন। তাঁদের এক জন সঞ্জীব নট্ট বলছেন, ‘‘ধোঁয়ায় গোটা এলাকা ঢেকে গিয়েছিল। প্রথমে মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। ওই সময় ঘরেই ছিলাম। বাইরে বেরোতেই ওঁরা আমায় ডেকে নিয়ে গেল। জবেদুল আর তহিদুল যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তা অবিশ্বাস্য।’’

রফিক জানান, ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার নেমে এসেছিল মৌয়াবাড়িতে। জবেদুল আর তহিদুলই লাইটের ব্যবস্থা করে যাত্রী উদ্ধার করা শুরু করেন। জবেদুলও বললেন, ‘‘ক্লাবের লোকজনদের আমরাই খবর দিই। লাইট ছিল না এখানে। আমরাই বিভিন্ন জায়গা থেকে লাইটের ব্যবস্থা করি। এর পর শুরু হয় উদ্ধারকাজ। আমরা প্রায় কুড়ি-পঁচিশ জনকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি।’’

যাত্রীদের উদ্ধার করতে গিয়ে হাতের অনেকটা কেটেও গিয়েছে তহিদুলের। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক মানুষকে বার করে আনতে পেরেছি। আর একটু দেরি হলেই অনেকের হতে পারত।’’

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন শুক্রবার। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর অনেক পরে পেয়েছেন সরকারি আধিকারিকরা। ওই সময় গ্রামবাসীরা এগিয়ে না এলে অনেকের মৃত্যু হতে পারত। দুই বন্ধু যা করেছে, তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ওঁদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন