West Bengal News

৭ দিনে বিল ৭ লাখ, তার পরও মৃত্যু রোগীর, চরম হুঁশিয়ারি অ্যাপোলোকে

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতেও ফেরেনি হুঁশ। ফের কাঠগড়ায় অ্যাপোলো হাসপাতাল। মোটা অঙ্কের বিল নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীর পরিবারের মধ্যে টানাপড়েনের জেরে মৃত্যু হয়েছে রোগীর। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পূর্ব কলকাতার হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৫:৪০
Share:

মোবাইলেই অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে ধমক মদন মিত্রের। নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতেও ফেরেনি হুঁশ। ফের কাঠগড়ায় অ্যাপোলো হাসপাতাল। মোটা অঙ্কের বিল নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীর পরিবারের মধ্যে টানাপড়েনের জেরে মৃত্যু হয়েছে রোগীর। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পূর্ব কলকাতার হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর তৃণমূল নেতা মদন মিত্র শুক্রবার চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বিলের টাকা পুরোপুরি মকুব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হাসপাতালটি।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত ১৬ ফেব্রুয়ারি। হুগলি জেলার ডানকুনিতে বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন সঞ্জয় রায় নামে এক যুবক। তাঁকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুকে এবং পেটে সবচেয়ে গভীর চোট ছিল সঞ্জয়ের। সার্জেন শ্যামল সরকারের অধীনে তাঁকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি গুরুতর থাকায় অপারেশন করা যায়নি। সঞ্জয়ের বুকে বেশ কয়েকটি পাঁজর ভাঙা ছিল, শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ চলছিল। চিকিৎসকরা রোগীর পরিবারকে জানান, ধমনীতে যে দু’টি ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, অ্যাঞ্জিও এমবলিজম পদ্ধতিতে সেই দু’টি ক্ষতস্থানকে আপাতত বন্ধ করে তাঁকে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হচ্ছে।

মৃত্যু হয়েছে এই যুবকেরই। —নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

১৬ তারিখ থেকে টানা ভেন্টিলেশনে ছিলেন সঞ্জয় রায়। ১৮ তারিখ স্ক্যান করা হয়। অবস্থার কোনও উন্নতির আভাস তাতে মেলেনি। ২৩ তারিখ মেডিক্যাল বোর্ড বসায় অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হাসপাতালের বিল তত দিনে নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে রোগীর পরিজনদের দাবি। ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা বিল হয়েছে বলে সঞ্জয়ের পরিবারকে জানানো হয়। রোগীর পরিজনরা অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে জানান, এত খরচ সাপেক্ষ চিকিৎসা তাঁদের পক্ষে টানা আর সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা রোগীকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু বিল না মেটানো পর্যন্ত রোগীকে ছাড়া যাবে না বলে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ নাকি জানিয়ে দেয়। নগদ না থাকলে ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজপত্র, বাড়ির দলিল, গয়না ইত্যাদি জমা রেখে রোগীকে ছাড়াতে হবে, হাসপাতালের তরফে এমনই নাকি জানিয়ে দেওয়া হয়। টানাপড়েন শেষে রোগীকে শেষ পর্যন্ত এসএসকেএমে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিজনরা। কিন্তু ততক্ষণে রোগীর অবস্থার অনেকখানি অবনতি ঘটে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ২৩ তারিখ অর্থাৎ বুধবার রাতেই এসএসকেএমে সঞ্জয় রায়ের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: হাসপাতাল নিয়ে কড়া মমতা, অসৎ ব্যবসা চালু থাকলে লাইসেন্স রদ

রোগীর পরিজনদের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি জেনে আসরে নামেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালের জিএম রানা দাশগুপ্তকে ফোন করে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেন। মদনবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতাল চালাতে এসে শ্মশান তৈরি করেছেন। এ ভাবে চললে হাসপাতাল চালানোর দরকার নেই।’’ চিকিৎসার খরচ বাবদ সঞ্জয় রায়ের পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া সব টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এমন হুঁশিয়ারিও দেন মদন। কর্তৃপক্ষ জানায়, টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

তবে সঞ্জয় রায়ের পরিবারের কাছ থেকে বাড়ির দলিল জমা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে অ্যাপোলো। হাসপাতালের সিওও জয় বসু জানিয়েছেন, ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজপত্র জমা নেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু বাড়ির দলিল চাওয়া হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement