কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফিরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানালেন জিটিএ-র চিফ বিমল গুরুঙ্গ।
শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বাসভবনে গিয়ে গুরুঙ্গ এবং কার্শিয়াঙের বিধায়ক রোহিত শর্মা দেখা করেছেন। দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও গুরুঙ্গদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। গুরুঙ্গদের অভিযোগ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ‘বোর্ড’ তৈরি করে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিঙে বিভাজনের কৌশল নিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিকল্প প্রশাসন চালিয়েও জিটিএ-র স্বাধীনসত্ত্বাকে আটকে রাখা হয়েছে। মোর্চার দাবি, রাজ্য, কেন্দ্রের সঙ্গে সই হওয়া জিটিএ চুক্তিতে সংস্থাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। সে কারণেই বিভিন্ন সরকারি দফতর পরিচালনার ভার জিটিএ-কে হস্তান্তর করার কথা ছিল। তার সিংহভাগ দফতরই এখনও হস্তান্তর হয়নি বলে মোর্চা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিযোগ জানিয়েছে। গুরুঙ্গের অভিযোগ, যে দফতরগুলি হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলিকেও স্বাধীন ভাবে চালাতে রাজ্য বাধা দিচ্ছে।
চলতি মাস থেকেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফের সুর চড়িয়েছেন গুরুঙ্গ। গত জুন এবং অগস্ট মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় সফরের সময়ে গুরুঙ্গকে প্রশংসা করতেও শোনা গিয়েছিল। গত জুন মাসে রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে গুরুঙ্গ দাবি করেছিলেন, ‘‘এত ভাল বৈঠক আগে কখনও হয়নি। দুঃখের দিন আর নেই।’’ গত অগস্টেও মুখ্যমন্ত্রী ‘ক্লিন এন্ড গ্রিন’ দার্জিলিং প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন ম্যাল থেকে। সেই অনুষ্ঠান মঞ্চেও নিজে উপস্থিত থেকে গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। যদিও, মোর্চার অন্দরের খবর, চলতি মাসে দার্জিলিঙের একটি স্কুলের নির্মাণ নিয়ে রাজ্য সরকারের আপত্তি এবং বহুতল নিয়ে বিধি-নিষেধের মাপকাঠি নিয়েই সম্পর্কের ‘ছন্দপতন’ শুরু হয়। জিটিএ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ তোলেন গুরুঙ্গ। পাহাড়ে মোর্চার তিন বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলেও ঘোষণা করেন তিনি। গত সপ্তাহের মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরে দূরত্ব বজায় রাখেন গুরুঙ্গরা। স্কুলবাড়ি নির্মাণ নিয়ে রাজ্য কিছুটা সুর নরম করলেও, বিধায়কদের ইস্তফার চাপ বজায় রাখে মোর্চা।
শুক্রবারই কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী মোর্চা ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। কাছাকাছি সময়ে গুরুঙ্গ কার্শিয়াঙের বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে গুরুঙ্গ দিল্লিতে ছিলেন। বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। তবে এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জিটিএ-র কাজে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ এড়াতে দ্রুত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার জাবি জানিয়েছেন। এ দিন দিল্লি থেকে ফিরে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘জিটিএ উন্নয়ের কাজে যা অর্থ পেয়েছে, তার বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। জিটিএ-র তিন বছর হয়ে গেল, রাজ্য সরকার প্রতিপদে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে। সব অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। খুব ভাল বৈঠক হয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ‘ফেসবুকে’ নিজের ‘অফিশিয়াল পেজে’ দফতর হস্তান্তর না করা, বোর্ড তৈরি করে রাজ্যের বিভাজনের কৌশলের অভিযোগও জানিয়েছেন। সম্প্রতি ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর হস্তান্তরের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও তা কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ। পাহাড়ের জন্য পৃথক স্কুল সার্ভিস কমিশন, কর্মী নিয়োগ কমিশনও তৈরি হয়নি বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অভিযোগ জানিয়ে জিটিএ চুক্তি কার্যকর করার দাবি জানানো হয়েছে বলে গুরুঙ্গ জানিয়েছেন। পাহাড়ে ধসের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার ত্রাণের কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, রাজ্য সরকারের কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে কি না, তা-ও জিটিএ কর্তৃপক্ষ কিছুই জানতে পারছেন না বলে মোর্চা নেতৃত্বের অভিযোগ।
গুরুঙ্গের অভিযোগ প্রসঙ্গে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘গুরুঙ্গের মন্তব্য প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না।’’