কার্শিয়াঙে একটি অনুষ্ঠানে গুরুঙ্গ। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
পাহাড় সফরে এসে দু’দিন আগে নতুন তিনটি বোর্ড গড়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে শহরে দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করেছিলেন তিনি, মঙ্গলবার সেই কার্শিয়াঙে এসেই পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেন বিমল গুরুঙ্গ। জানালেন, এই নতুন তিন বোর্ড ঘোষণার বিরুদ্ধেও সুপ্রিম কোর্টে যাবেন তাঁরা। জিটিএ-এর কাজে হস্তক্ষেপ, চুক্তি লঙ্ঘন-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে গত বছরই শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন গুরুঙ্গরা। সেই মামলায় এ বার এই নালিশও যোগ করবে মোর্চা।
গত রবিবার কার্শিয়াঙে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মমতা যখন গুরুঙ্গ, খাস এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণা করেন, তখন থেকেই পাহাড়বাসীর কৌতূহল ছিল— গুরুঙ্গ এ বার কী বলেন? কিন্তু মোর্চা নেতৃত্ব এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। দার্জিলিঙে মমতার অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েও তা এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
পাহাড়ের লোকজনের বক্তব্য, চলতি বছরে পাহাড়ে পুরসভা, পঞ্চায়েত ও জিটিএ ভোট হওয়ার কথা। তার আগে গুরুঙ্গদের নতুন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী মাসে তিনি ফের পাহাড়ে আসবেন। নতুন জেলা হবে কালিম্পং। ফেব্রুয়ারিতেই সেই সংক্রান্ত কাজ শুরুর কথা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাজির থেকে তার সূচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে আরও একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে রাজ্যকে কিছুটা হলেও চাপে রাখতেই গুরুঙ্গ আইনি পথে হাঁটার কৌশল নিচ্ছেন বলে পাহাড়বাসীর একাংশ মনে করছেন।
এ দিন পাহাড় সফর সেরে শিলিগুড়িতে নেমে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সুকনা বনবাংলোয় রয়েছেন তিনি। আজ, বুধবার বিকেলের উড়ানে তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। আর এই দিনই কার্শিয়াঙে একটি শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের কাছে যে সব বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য বোর্ড গঠনের বিষয়টিও রয়েছে। কাজেই এটি বিচারাধীন বিষয়। তাই মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে নতুন তিনটি বোর্ড ঘোষণা করতে পারেন না। আমরা সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে নালিশ জানাব।’’
মোর্চা প্রধানের অভিযোগ, সম্প্রদায়ভিত্তিক বোর্ড গড়ে পাহাড়বাসীর মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। গুরুঙ্গের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন বোর্ডগুলিকে তিনি ২৬৮ কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছেন। আসলে জিটিএ-র প্রাপ্য টাকা কেটে মুখ্যমন্ত্রী বোর্ডগুলিকে টাকা দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে সবই জানাতে হবে রাজ্যকে।’’
রাজ্যের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট নতুন বোর্ড গঠনের উপরে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। বোর্ড গঠন অবৈধ বলেও মন্তব্য করেনি শীর্ষ আদালত। কাজেই নতুন বোর্ড গঠনে কোনও বাধা নেই।
তৃণমূলের পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মার কটাক্ষ, ‘‘যে হেতু বোর্ড গঠনের সরাসরি বিরোধিতা করলে পাহাড়বাসী খেপে যাবে, তাই গুরুঙ্গরা মামলার কথা বলছেন। ক্ষমতা থাকলে তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করুন।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘জিটিএ কাজ করছে না বলেই বোর্ড গড়ছে রাজ্য সরকার।’’