পড়তে হবে বইটা, স্টলে বিক্রেতা বিমান

বহু বছর ধরেই কলকাতার পার্ক সার্কাস এবং আরও দক্ষিণের যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে মার্ক্সীয় সাহিত্যের স্টল পুজোর সময়ে উদ্বোধন করেন বিমানবাবু। এ বার অবশ্য পার্ক সার্কাসে পুলিশি অনুমতির ঝামেলায় স্টল উদ্বোধনের অনুষ্ঠান হয়নি। কিন্তু সেই সঙ্গেই তাঁর ডাক পড়েছিল বাগবাজারে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৭
Share:

ফাইল চিত্র।

পরিশ্রমে তাঁর জুড়ি নেই। এই পঁচাত্তর পেরোনো বয়সেও! দলের মিটিং-মিছিলে সদাহাজির তিনি। হাঁটতে পারেন অক্লান্ত। এ বার শারদীয়া পুস্তক বিপণিতে বই বিক্রি করেও কমরেডদের পাঠ দিলেন বিমান বসু।

Advertisement

বহু বছর ধরেই কলকাতার পার্ক সার্কাস এবং আরও দক্ষিণের যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে মার্ক্সীয় সাহিত্যের স্টল পুজোর সময়ে উদ্বোধন করেন বিমানবাবু। এ বার অবশ্য পার্ক সার্কাসে পুলিশি অনুমতির ঝামেলায় স্টল উদ্বোধনের অনুষ্ঠান হয়নি। কিন্তু সেই সঙ্গেই তাঁর ডাক পড়েছিল বাগবাজারে। উত্তর কলকাতার সাবেক ওই পুজোয় গিয়ে শুধু স্টল উদ্বোধন করেই ক্ষান্ত হননি প্রবীণ সিপিএম নেতা। স্টলে বসে বই বিক্রি করেছেন। স্কুল পড়ুয়াদের পেয়ে নিজের হাতে বই বেছেও দিয়েছেন।

কয়েক দিন আগেই প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে দলের এক আলোচনাচক্রের আসরে কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন বিমানবাবু। উত্তরে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কমিউনিস্ট পার্টিতে সাধারণ সদস্য হিসাবেও কাজ করা যায়। কাজ করার ইচ্ছা থাকলে কোনও কমিটির সদস্য হওয়া অপরিহার্য নয়। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ বার দলের একটি পুজোসংখ্যাতেও একই কথা বলেছেন তিনি। আক্ষেপ করেছেন যে, দলের কর্মীদের কোনও মোহ বা প্রত্যাশা না রেখে কাজ করার সেই পুরনো মানসিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। সেই বিমানবাবুকেই পুজোয় বই বিক্রি করতে দেখে সিপিএমের এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, ‘‘বিমানদা দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি এমন বড় নেতা নন যে, শুধু উদ্বোধনই করতে হবে! চাইলে তিনিও সাধারণ কমরেডদের মতো বই বিক্রিও করতে পারেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বোষ্টুমি, শাপলা, উপুড় নীল গামলা আকাশ

পুজোর সময়ে কেন তাঁরা বই বিক্রিতে এত গুরুত্ব দেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিমানবাবু। তাঁর যুক্তি, কমিউনিস্টেরা ধর্ম পালনের বিরোধী নয় কখনওই। তাঁরা চান, সবাই সকলের ধর্ম পালন করুন। দেশের সংবিধানও সেই অধিকার দিয়েছে। বিমানবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু ধর্মের ভেদাভেদ কেন করা হয়, কেন অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি করা হয়, তা জানতে বই পড়তে হবে। বই তুলে রাখার জন্য নয়!’’ শুধু ধর্ম বা অসহিষ্ণুতা বলেই নয়, চার পাশে যা কিছুই ঘটছে, তার ব্যাখ্যা এবং তাৎপর্য খুঁজে পেতে বই হচ্ছে হাতিয়ার। উৎসবের সময়ে বহু মানুষের হাতে সেই হাতিয়ার তুলে দেওয়ার সুযোগ ব্যবহার করা উচিত বলে বিমানবাবুর মত।

পুজোয় বাগবাজারের মার্ক্সীয় স্টল প্রতি বছরই বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র থাকে উৎসুক জনতার কাছে। মার্ক্সীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সাহিত্য এবং ছোটদের বইও সেখানে মেলে প্রতি বার। বিমানবাবুকে পেয়ে বাগবাজারে হাজির জনতার কেউ কেউ বইয়ে সই করিয়ে নিয়েছেন। আব্দার মিটিয়েছেন বিমানবাবু। সঙ্গে কথা আদায় করেছেন— বই কিন্তু পড়তে হবে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement