হোয়াটস্অ্যাপ-এ দোর খুলে স্মার্ট পুলিশ

বাইরে থেকে জেলায় এসে কোনও সমস্যায় পড়েছেন? স্কুল-কলেজ থেকে ফেরার পথে ইভটিজারদের খপ্পরে পড়েছেন? কিংবা রাতের অন্ধকারে নির্জন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায়? আর গা উজিয়ে পুলিশের কাছে ছুটতে হবে না। তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করুন বীরভূম জেলা পুলিশের নতুন হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ নম্বরে। বিপদ থেকে রক্ষা করতে এ বার পুলিশই পৌঁছে যাবে আপনার কাছে! এমনই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। যার নেপথ্য কাণ্ডারী স্বয়ং জেলার নতুন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:০৯
Share:

বাইরে থেকে জেলায় এসে কোনও সমস্যায় পড়েছেন? স্কুল-কলেজ থেকে ফেরার পথে ইভটিজারদের খপ্পরে পড়েছেন? কিংবা রাতের অন্ধকারে নির্জন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায়?
আর গা উজিয়ে পুলিশের কাছে ছুটতে হবে না। তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করুন বীরভূম জেলা পুলিশের নতুন হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ নম্বরে। বিপদ থেকে রক্ষা করতে এ বার পুলিশই পৌঁছে যাবে আপনার কাছে!
এমনই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। যার নেপথ্য কাণ্ডারী স্বয়ং জেলার নতুন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তিনি জানান, অভিযোগ জানানোর জন্য দু’টি মোবাইল হেল্পলাইন নম্বর থাকছে। একটি শুধু মাত্র মহিলাদের অভিযোগ জানানোর জন্য। দ্বিতীয়টি সর্বসাধারণের। পুলিশ সুপারের নজরদারিতে ওই দু’টি নম্বরে জেলা পুলিশের অন্য কর্তারা, সমস্ত থানার ওসি এবং আরও কিছু পুলিশকর্মী নিয়ে হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। ওই নম্বরে কোনও অপরাধের ঘটনা জানালে বা সাহায্য চেয়ে কেউ বার্তা পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে তা সবার নজরে চলে আসবে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকেই পোস্টার সেঁটে হেল্পলাইন নম্বর দু’টি সম্পর্কে সকলকে জানানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য জেলা বা পড়শি ঝাড়খণ্ড থেকে বীরভূমে ঢোকার মুখেই শুধু নয়, ওই নম্বর থাকবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও। যিনি সমস্যায় পড়েছেন, তিনি ফোন করেও সমস্যার কথা জানাতে পারেন।’’ তিনি আরও জানান, বহু মানুষ এখন যোগাযোগের জন্য মোবাইল বা স্মার্টফোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। পুলিশের হোয়াটস্আ্যাপ নম্বরে তাঁরা মেসেজ করে, এমনকী ছবি বা ভিডিও পাঠিয়েও অভিযোগ বা বিশেষ কোনও তথ্য জানাতে পারেন। মুকেশ কুমারের আশ্বাস, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটার নজরদারিও করা হবে। শুধু তাৎক্ষণিক অভিযোগ জানানোই নয়, কেউ কোনও থানায় কোনও বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি— ওই নির্দিষ্ট নম্বরে সে বিষয়েও অভিযোগ জানাতে পারবেন।’’

Advertisement

গত লোকসভা ভোটের সময়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে জেলার পুলিশকর্মীদের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন প্রাক্তন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে এবং দ্রুত তথ্য আদানপ্রদানের জন্য ওসি এবং ঊর্ধ্বতন সব পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে একটি পৃথক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ গড়ে তুলেছিলেন। সেই প্রযুক্তি ব্যবস্থার পরিধি আরও একধাপ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন বর্তমান পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তাই শুধু পুলিশকর্মীদের মধ্যেই নয়, ওই দু’টি নম্বর চালু করে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও আরও সুদৃঢ় করতে এই পদক্ষেপ করেছেন তিনি।

পুলিশের এই নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলার মানুষ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, থানায় গিয়ে অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয় অভিযোগকারীকে। এমনকী, কারও কারও ক্ষেত্রে এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে, পুলিশ কোনও অভিযোগ নেয়নি। আবার এফআইআর না নিয়ে জিডি করেই ছেড়ে দিয়েছে। মুকেশ কুমারের উদ্যোগে এই ছবিটা এ বার অনেকটাই পাল্টাতে পারে বলে মনে করছেন অভিযোগকারীরা। সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় পাড়ুই থানা নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষের এফআইআর নিতে চায়নি বলে অভিযোগ ছিল। সে সময় শিবানীদেবীকে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ পাঠাতে হয়েছিল ডাকযোগে। এমন অভিজ্ঞতা থাকা সেই শিবানীদেবী স্বাগত জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে। তিনি বলছেন, ‘‘ঘটনার রাতে পুলিশ অনৈতিক এবং বেআইনি কার্যকলাপ করেছিল। আমাদের অসহায় হয়ে দেখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। পরের দিন থানা অভিযোগও নেয়নি। এ বার থেকে কারও সঙ্গে এমন ব্যবহার করার আগে জেলার পুলিশ অন্তত দু’বার ভাববে।’’ এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ওই হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে বিষয়টি জানিয়ে জেলা পুলিশের নজরে আনতে পারবেন অভিযোগকারী।

Advertisement

পুলিশের একটা বড় অংশই মনে করছেন, কোনও সন্দেহ নেই যে এই উদ্যোগে পুলিশ-জনতা জনসংযোগ আরও বাড়বে। উপরমহলের নজরদারিতে থাকার দরুন পুলিশের নিচুতলাও কাজের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক ও সচেতন হবে। তবে, এই উদ্যোগের অপব্যবহার নিয়েও চিন্তায় রয়েছে জেলা পুলিশ। সিউড়ি মহকুমার একটি থানার ওসি যেমন বলছেন, ‘‘জেলা পুলিশ কর্মীর অভাবে ধুঁকছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে দেরি হয়। দু’বার ভাবতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগকারী ক্ষুব্ধ হয়ে ওই গ্রুপে নালিশ ঠুকে দিলে মুশকিল!’’ পুলিশের একাংশ আবার এমনও মনে করছেন, অনেকেই মিথ্যা অভিযোগ তুলে ব্যক্তিগত আক্রোশও মেটানোর চেষ্টা করতে পারেন। এমন সম্ভাবনার কথা অবশ্য উড়িয়েই দিচ্ছেন মুকেশ কুমার। জেলা পুলিশের কর্তাদের বক্তব্য, থানাতেও অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা অভিযোগ জমা পড়ে। সে ক্ষেত্রে নিয়ম মতো তদন্ত হলেই বিষয়টি ধরা পড়তে বাধ্য। আইন মেনে শাস্তি পাবেন অভিযোগকারীও। পুলিশ সুপার নিজেও বলছেন, ‘‘বিচার প্রার্থীর পাশে দাঁড়ানোই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। তবে, কেউ যাতে কোনও ভাবে এই উদ্যোগের অপব্যবহার না করেন, সে দিকেও আমাদের নজর থাকব। প্রয়োজনীও পদক্ষেপও করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন