বিক্রি বন্ধ হয়নি বহরমপুরে, ঈদের আগে দোকান এ বার করিমপুরেও

বিরিয়ানির খুশবু আশঙ্কা বাড়াচ্ছে

বহরমপুর প্রশ্নটা তুলে দিয়েছিল দিনকয়েক আগেই। এ বার একই প্রশ্ন তুলল নদিয়া সীমান্তের করিমপুর। গত ১২ জুলাই করিমপুরে দুটি বিরিয়ানির দোকানের উদ্বোধন হয়েছে বেশ ধুমধাম করেই। বহরমপুরের মতো এখানেও মাইকে প্রচার করা হয়েছে—‘কলকাতার বিরিয়ানি খান করিমপুরে বসেই। একই স্বাদ। দামেও সস্তা।’ ঈদের আগে এমন সুস্বাদু খবরে খুশিই হয়েছিল সীমান্তের এই জনপদ।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক ও সুজাউদ্দিন

করিমপুর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০১:৫০
Share:

বহরমপুরে জাতীয় সড়কের পাশে তৈরি হচ্ছে বিরিয়ানি। করিমপুরে বিরিয়ানি দোকানে খোঁজ খবর নিচ্ছেন স্থানীয় উপ-প্রধান। — নিজস্ব চিত্র।

বহরমপুর প্রশ্নটা তুলে দিয়েছিল দিনকয়েক আগেই। এ বার একই প্রশ্ন তুলল নদিয়া সীমান্তের করিমপুর।
গত ১২ জুলাই করিমপুরে দুটি বিরিয়ানির দোকানের উদ্বোধন হয়েছে বেশ ধুমধাম করেই। বহরমপুরের মতো এখানেও মাইকে প্রচার করা হয়েছে—‘কলকাতার বিরিয়ানি খান করিমপুরে বসেই। একই স্বাদ। দামেও সস্তা।’ ঈদের আগে এমন সুস্বাদু খবরে খুশিই হয়েছিল সীমান্তের এই জনপদ। কিন্তু উদ্বোধনের দিনেই জোর বিষম খেতে হল বহরমপুরের বিরিয়ানির খবরে! করিমপুরও জানতে চাইছে—‘কলকাতার নামী বিরিয়ানি দোকানের নাম ভাঙিয়ে এ কোন বিরিয়ানি বিক্রি হচ্ছে?’
বিষয়টি জানতে পেরে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসনও। মঙ্গলবার করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা সরেজমিনে ওই বিরিয়ানির দোকান দেখে এসেছেন। উপপ্রধান তারক সরখেল বলছেন, ‘‘ওই বিরিয়ানির দোকানগুলি পঞ্চায়েতের কাছে ট্রেড লাইসেন্স চেয়েছেন। কিন্তু ফুড ইন্সপেক্টরের অনুমতিপত্র-সহ প্রয়োজনীয় কোনও নথিই ওঁরা দেখাতে পারেননি। তাই আমরাও লাইসেন্স দিইনি।’’ তারকবাবু জানান, এই দোকানগুলি যেখানে দোকান করেছে সেখানে বিরিয়ানি রান্না হয় না। কোথায় রান্না হয়, সেখানকার পরিবেশ কেমন সব কিছুই পঞ্চায়েতের তরফে খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি বিষয়টি ব্লক ও জেলা প্রশাসনকেও জানানো হবে।
করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্ত বলেন, “খাবারের গুণমান নিয়ে কোনও রকম আপস আমরা মেনে নেব না।’’
বহরমপুরের মতোই করিমপুরের এই দোকানগুলিও কলকাতার নামী বিরিয়ানি দোকানের নাম ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই বিরিয়ানি দোকানের এক মালিক, কলকাতার বাসিন্দা মহম্মদ ছোট্টু কবুল করছেন, ‘‘না, কলকাতার নামী বিরিয়ানি দোকানের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ তাহলে ওই একই নাম ব্যবহার করে ক্রেতাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে কেন? সেই বিষয়ে অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

Advertisement

করিমপুরের বাসিন্দা তথা পেশায় শিক্ষক রানা দত্ত বলছেন, ‘‘কলকাতায় গিয়ে বহু বার ওই নামী দোকানের বিরিয়ানি খেয়েছি। সেই স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে। করিমপুরের এই দোকানগুলির নাম দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম যে, কলকাতার ওই বিরিয়ানি দোকানের শাখা বোধহয় এখন সর্বত্র খোলা হচ্ছে। কিন্তু একবার এই বিরিয়ানি চেখে দেখার পর ভুল ভেঙেছে। সস্তায় মিললেও সেই স্বাদ কোথায়?’’

রানাবাবুর মতো এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। তাঁদের বক্তব্য, করিমপুরে এর আগে শুধু বিরিয়ানির জন্য কোনও আলাদা দোকান ছিল না। ফলে বিরিয়ানির দোকান হওয়াতে স্থানীয় বাসিন্দারা খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু এ ভাবে কলকাতার নামী বিরিয়ানি দোকানের নাম ভাঙিয়ে বিরিয়ানি বিক্রির চেষ্টা কেন, সে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। ‘‘ওরা নিজেদের মতো করেই বিরিয়ানি ব্যবসা করতে পারত। কিন্তু প্রথম থেকেই এ ভাবে ঠকালে ওদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই,’’ বললেন এলাকার এক যুবক।

Advertisement

এ দিকে বহরমপুরের ওই বিরিয়ানি দোকানগুলির খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে ইতিমধ্যে সেখানে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। নামে ভুলে যাঁরা দোকানে গিয়েছেন তাঁরাও বেজায় চটেছেন। নবাবের দেশে এমন বিরিয়ানি নিয়ে বিব্রত অনেকেই। বহরমপুরের বাসিন্দা তথা পেশায় শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম সামনে কোনও একটা ছুটির দিন মেয়েকে নিয়ে বিরিয়ানি খাব। কিন্তু আর হল কই! শুনছি, এই দোকানগুলির সঙ্গে কলকাতার নামী বিরিয়ানি দোকানগুলির কোনও সম্পর্ক নেই। এরপরে স্ত্রী ও মেয়ে আর ওখানে যেতে রাজি হয়নি।’’

তবে পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী রুনা বিশ্বাস জানান, ঈদের সময় এই হঠাৎ-গজানো দোকানের খাবারের মান নিয়ে নজরদারি করার পাশাপাশি, প্রশাসনের উচিত শহরের সমস্ত খাবারের দোকানগুলিতে নজরদারি বাড়ানো।

কিন্তু বহরমপুরে রাতারাতি তৈরি হওয়া বিরিয়ানি কারবারের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এখনও পর্যন্ত কিছুই নয়। বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘আমাদের ফুড-ইন্সপেক্টর না থাকায় আমরা নিজেরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। শহরবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলেন, ‘‘ওই দোকানগুলিতে খোঁজখবর নিয়ে শীঘ্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এ দিনও বহরমপুরের গির্জার মোড়ে রাস্তার পাশেই ধোঁয়া ও ধুলোর মধ্যেই একচিলতে ঘরে রান্না হচ্ছিল বিরিয়ানি। রাস্তার নলকূপ থেকেই জল এনে রাখা হচ্ছিল খোলা প্লাস্টিকের জারে। সেই জল দিয়েই চলছিল রান্না। উস্কোখুস্কো চেহারার এক যুবক ব্যস্ত ছিলেন রান্নায়। দেখতে পেয়ে ওই যুবক বলে ওঠেন, ‘‘ক্যায়া হুয়া ভাই, ইঁহা পর কিঁউ? সওয়াদ লেনে চাহিয়ে তো উধার যাও। উহা পর কাউন্টার হ্যায়।’’

বহরমপুরের নানা শৌখিন নামের বোর্ড-লাগানো দোকানে বিকোচ্ছে ধুলোভরা রাস্তায় রান্না-করা বিরিয়ানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন