জেলায় আসছেন মমতা

সিসিইউ চালু হচ্ছে বিষ্ণুপুরে

মঙ্গলবার বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে প্রশাসনিক জনসভা করতে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেখান থেকেই বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি ও বোলপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিসিইউ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে তাঁর।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৭
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মহকুমা থেকে উন্নীত হয়ে জেলা হাসপাতালের তকমা কয়েক বছর আগেই পেয়েছে বিষ্ণুপুর হাসপাতাল। পরিষেবার মান বাড়াতে সেই হাসপাতালের গায়েই তৈরি করা হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালও। এ সবের পরেও পরিকাঠামোর হাল নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে রোগীদের মধ্যে। এ বার পরিকাঠামোগত ভাবে আরও একধাপ এগোতে চলেছে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য চালু হতে চলেছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)।

Advertisement

মঙ্গলবার বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে প্রশাসনিক জনসভা করতে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেখান থেকেই বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি ও বোলপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিসিইউ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে তাঁর। দু’টি সিসিইউ হচ্ছে ১২ শয্যার।

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের কর্তারা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই সিসিইউ-এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি হাসপাতালে এসে গিয়েছে। সিসিইউ পরিচালনায় নিয়োগ করা হয়েছে পাঁচ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকও। এ ছাড়া আট জন নার্সকেও সিসিইউ পরিচালনার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বিষ্ণুপুর হাসপাতালের নাম পাল্টেছে বারবার। কিন্তু রোগীদের অবস্থা একটু বাড়াবাড়ি হলেই ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকেরা বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করে দেওয়া হয় বলে প্রায়ই অভিযোগ তোলেন রোগীদের পরিজনেরা। এ জন্য চাপ পড়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালেও। বিষ্ণুপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রোগী স্থানান্তর করার কারণ হিসেবে বরাবরই পরিকাঠামোর অভাবকেই দায়ী করে থাকেন। তবে এ বার হাসপাতালের কর্তারাও জানাচ্ছেন, সিসিইউ চালু হলে বহু রোগীকেই আর স্থানান্তর করার দরকার হবে না।

বিষ্ণুপুর হাসপাতালে সিসিইউ চালু হতে চলেছে এই খবরে স্বস্তি ছড়িয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালের কর্তাদের মধ্যেও। ঘটনা হল, বাঁকুড়া মেডিক্যালে সিসিইউ থাকলেও সেটি মাত্র ১৫ শয্যার। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা তো বটেই, পড়শি রাজ্য থেকেও এই হাসপাতালে রোগী আসেন। ফলে চাহিদার তুলনায় সিসিইউ-এর শয্যা কম। বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক কর্তা বলেন, “আমরা নিশ্চিত, বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে সিসিইউ চালু হলে চাপ কিছুটা হলেও কমবে বাঁকুড়া মেডিক্যালের উপর থেকে। বহু রোগী নিজের এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারবেন।”

সিসিইউ উদ্বোধনের পাশাপাশি জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী এ বার প্রায় ৪৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৭২টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। পাত্রসায়রের মঞ্চ থেকে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের উপরে বাঁকুড়া শহরের সতীঘাট ও কেশিয়াকোলের সংযোগ গড়তে গন্ধেশ্বরী নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের শিলান্যাস করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঘটনা হল, গন্ধেশ্বরী নদীর উপরে ওই রাস্তায় একটি কজওয়ে রয়েছে। ওই কজওয়েটিতে জল নিকাশী ব্যবস্থা ভাল না হওয়ার জেরে ফি বছর বর্ষায় নদীতে জল বাড়লেই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর জল এক দিকে কেশিয়াকোলের একাংশ ও অন্য দিকে, বাঁকুড়া শহরের সতীঘাটের একাংশে উঠে আসে। নদীর চরেই গড়ে উঠেছে একটি আবাসন। বন্যার জলের তোড়ে বছর দুই আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবাসনের একাংশ। অন্য দিকে, জলের তোড়ে প্রতি বছরই কজওয়ে লাগোয়া রাস্তা ভেঙে পড়ছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে ওই এলাকায় পাকা সেতু গড়ার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় স্থায়ী সেতু গড়ার জন্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই পূর্ত দফতর সেতু তৈরির কাজ শুরু করতে চলেছে। ছাতনা থেকে দলপুর যাওয়ার রাস্তায় দ্বারকেশ্বর নদের উপরেও একটি সেতু তৈরির কাজের শিলান্যাস করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা খাতড়া স্পোর্টস আকাডেমি এ বার মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধন হওয়ার কথা। পাত্রসায়রের বেলুটে শালি নদীর উপরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ওই সেতুরও উদ্বোধন করতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে।

এ ছাড়া সারেঙ্গায় প্রায় পাঁচ হাজার টন খাদ্য শস্য মজুত রাখার পরিকাঠামো-সহ একটি গুদাম, সোনামুখীতে একটি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান ও বেলিয়াতোড় থেকে সোনামুখী, পাত্রসায়র হয়ে রসুলপুর যাওয়ার প্রশস্ত রাস্তারও উদ্বোধন করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়িতে প্রায় তিন কোটি ১৭ লক্ষ টাকা এবং জয়পুরের বাগাজোলে প্রায় এক কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি করে চেকড্যাম তৈরি করা হয়েছে। ওই দু’টি চেকড্যামেরও উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাঁটিপাহাড়ির চেকড্যাম থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ও বাগাজোলের চেকড্যাম থেকে প্রায় দেড় হাজার চাষি
উপকৃত হবেন।

বুধবার জেলার উন্নয়ন খতিয়ে দেখতে বৈঠকে বসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে তিনি কী বলেন, তা নিয়ে সর্বত্র জল্পনা তুঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন