রায় মেনেই প্রেমের পাশে

প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে যে দলের অন্দরে ক্ষোভ ছিল তা জানতেন দিলীপও। কিন্তু এখনও যে তিনি প্রেমচন্দের পাশেই রয়েছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছে বিজেপি রাজ্য সভাপতির কথায়। প্রার্থী বাছাইয়ে কি কোথাও গলদ ছিল?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

রবিবার খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষের পাশে প্রেমচন্দ ঝা। নিজস্ব চিত্র

একজন এসেছিলেন জেতার পরের দিন। জনতার সামনে মাথা নত করেছিলেন। একজন এলেন হারের তিনদিনের মাথায়। জনতার রায় কার্যত মাথা পেতে নিলেন।

Advertisement

প্রথমজন শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার খড়্গপুর সদর বিধানসভা উপ-নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরের দিন, শুক্রবার যিনি পৌঁছেছিলেন রেলশহরে। আর দ্বিতীয়জন দিলীপ ঘোষ। রবিবার তিনি এসে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ২০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকারের কাছে হেরেছেন দিলীপ-ঘনিষ্ঠ প্রেমচন্দ ঝা। সেই ফল যে তিনি মেনে নিয়েছেন তা স্পষ্ট দিলীপের কথা। শনিবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে হারের কারণ হিসেবে দিলীপ কখনও সামনে এনেছিলেন কম অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ। কখনও বলেছিলেন, তাঁদের এজেন্ট হয়ে তৃণমূলের লোক বসেছিল। এ দিন বৈঠকের ফাঁকে ফলাফল সম্পর্কে দিলীপ বলেন, ‘‘ফলাফল নিয়ে আর কিছু বলার নেই। আমরা জিততে পারিনি।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতির কথায়, ‘‘কেন হার হয়েছে সেটা নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলব। যাদের কাছে আমরা ভোট চাইতে গিয়েছিলাম, তাদের সকলে কেন আমাদের ভোট দেননি, সকলের সঙ্গে কথা বলে আমরা সেই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করব।’’

প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে যে দলের অন্দরে ক্ষোভ ছিল তা জানতেন দিলীপও। কিন্তু এখনও যে তিনি প্রেমচন্দের পাশেই রয়েছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছে বিজেপি রাজ্য সভাপতির কথায়। প্রার্থী বাছাইয়ে কি কোথাও গলদ ছিল? দিলীপের জবাব, ‘‘সঠিক ভাবে প্রার্থী করতে গেলে তো দিল্লি থেকে আনতে হয়! এখানে যারা কাজ করছেন, তারাই লড়াই করবেন। তাদের দেখেই লোকে ভোট দেবেন। লোকসভা নির্বাচনেও তাই হয়েছে।’’ শনিবার সাংবাদিক বৈঠকেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি জানিয়েছিলেন, তাঁর চেয়ে প্রেমচন্দ ৮-৯ হাজার ভোট কম পেয়েছেন। উপ-নির্বাচনে এমন হয়।

Advertisement

উপ-নির্বাচন তো গেল। কিন্তু সামনেই তো পুর নির্বাচন? দিলীপের ঘোষণা, আগামী পুর- নির্বাচনে বিজেপি খড়্গপুরে পুরবোর্ড দখলের জন্যই লড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেকটা পুরসভার পরিস্থিতি আলাদা। ১৭টি পুরসভাতে ভোট আটকে রাখা হয়েছে। মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। খড়্গপুরেও আগামী বছর পুরসভা নির্বাচন রয়েছে। পুরসভা নির্বাচন ঘোষণা হলে জেতার জন্যই আমরা নামব।’’ উপ- নির্বাচনে তৃণমূল জেতায় খড়্গপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দিলীপ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা লোকসভায় জেতার পরে গুন্ডা- বদমাশরা, বিশেষ করে যারা মারপিট করে তারা গর্তে ঢুকে গিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল, তৃণমূল যাচ্ছে। উপ-নির্বাচনে তৃণমূল জেতার পরে তাদেরকে আবার উস্কানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বেরিয়ে এসো, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। তৃণমূল জেতার ফলে এখানকার রাজনীতি কেমন হবে, মানুষের সুরক্ষা কোথায় যাবে, মানুষ বুঝতে পারবেন। পুরোপুরি ব্যাপারটা আজকে গুন্ডা- বদমাশ, সমাজবিরোধীদের হাতে চলে যাচ্ছে।’’

দিলীপকে পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূল। খড়্গপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘খড়্গপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয়। ভোটের সময়েও অশান্তি হয়নি। ভোটের পরেও হবে না।’’ প্রদীপের খোঁচা, ‘‘গুন্ডাদের নিয়ে রাজনীতি তৃণমূল করে না। বিজেপিই করে।’’

এনআরসি নিয়ে যে তাঁরা মানুষকে বোঝাতে পারেননি তা মেনেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এনআরসি নিয়ে বোঝাতেও যাইনি। আন্দোলনও করিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি নিয়ে ভয় দেখিয়েছেন। অসমে কোনও গন্ডগোল নেই। এখানে মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে। এনআরসি সম্বন্ধে যে ভয় সেটা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে দূর হয়ে যাবে। তার প্রস্তুতি চলছে সংসদে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন