কাজী নজরুল ইসলাম
কয়েক দিন আগেই রবীন্দ্র জয়ন্তী নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি-র প্রতিযোগিতার সাক্ষী হয়েছে রাজ্য। এ বার প্রতিযোগিতা কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে। রাজ্যের শাসক তৃণমূল অনেক বছর ধরেই নজরুলের জন্মদিন পালন করে। এ বার বিদ্রোহী কবির জন্মদিন ঘটা করে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া শিবিরও।
চোখ খুলে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। একজনও মুসলিম প্রার্থী ছিল না বিজেপির। তার পরেও দেওবন্দ, সাহারানপুরের মতো আসনে জিতেছে তারা। তাই অমিত শাহদের লক্ষ্য যখন এ বার বাংলা, তখন এ রাজ্যের মুসলিমদের কাছেও পৌঁছতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবার। সেই লক্ষ্যে তাঁদের আদর্শ পুরুষ এখন নজরুল।
বিদ্রোহী কবিকে সামনে রেখেই উদারপন্থী, রাষ্ট্রবাদী মুসলিমদের মন জয় করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সে জন্য ঘটা করে নজরুলের জন্মদিন পালন যেমন হবে, তেমনই তাঁর দেশাত্মবোধক গান-কবিতা এবং শ্যামাসঙ্গীতের সংকলন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সঙ্ঘের সাংস্কৃতিক শাখা।
আরও পড়ুন: বিজেপির লক্ষ্য আজ লালবাজার
নজরুলের জন্মদিন ২৪ মে। এই উপলক্ষে কবির লেখা ২২টি গান-কবিতা হিন্দিতে অনুবাদ করে সারা দেশে প্রচার করবে আরএসএস। বাংলার মনীষীদের চোখে হিন্দুত্ব শিরোনামে একটি বইও প্রকাশ করেছে কেশব ভবন। সেখানেও ভারতীয়ত্ব এবং হিন্দুত্ব বিষয়ে নজরুলের একটি রচনা সংকলিত হয়েছে।
বিজেপি-র সাংস্কৃতিক সেলের আহ্বায়ক সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরাও অভিজিৎ, বাবুল সুপ্রিয়র মতো বিজেপি শিবিরের সঙ্গীত-তারকাদের এনে নজরুল জয়ন্তী পালন করবেন।
কিন্তু কী আছে এর নেপথ্যে?
আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মনে করছে, রাজ্যের প্রায় ৩০ ভাগ মুসলিম সমাজকে একেবারে দূরে সরিয়ে রেখে তাদের প্রভাব বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে যে অংশ শিক্ষিত, উদার মনের এবং ‘রাষ্ট্রবাদী’ তাঁদের কাছে টানতে চায় তারা।
এ রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নূর-উর রহমান বরকতি বা সিমির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আহমেদ হাসান ইমরানের মতো মুসলিম ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। যাঁদের মুসলিম সমাজের একাংশ মোটেই পছন্দ করেন না। সঙ্ঘ মনে করে, বহু শ্যামাসঙ্গীতের রয়চিতা, স্বাধীনতা সংগ্রামী, একদা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ জাতীয়তাবাদী কবি নজরুলকে রোল মডেল করলে মুসলিম সমাজের একাংশ তাদের সঙ্গে আসার জন্য উৎসাহিত হতে পারেন। সেই কারণেই এ বার রাম-হনুমানের পরে নজরুল নিয়ে আসরে নামছেন তাঁরা। একই সঙ্গে সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলি এবং সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কিছু বিশেষ রচনা তুলে ধরার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা সংগঠন।
পাশাপাশি তিন তালাকের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থানের জন্যও মুসলিম মহিলাদের ঢালাও সমর্থন পাচ্ছে বিজেপি। সঙ্ঘের রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ তিন তালাকের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে তিন হাজার কর্মশালা আয়োজন করছে। এ রাজ্যেও বেশ কয়েকটি সভা করবে রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ।
সঙ্ঘের এক নেতার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘জাতীয়তাবাদী মানুষ যে ধর্মেরই হোন না কেন, তাঁদের আরএসএসের কাজে যুক্ত করা হতে পারে। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলে নির্দেশ দিয়েছেন, পাড়ায় পাড়ায় নজরুল জয়ন্তী পালন করতে হবে। নজরুলের জীবনী এবং গান-কবিতা সংবলিত ট্যাবলো নিয়ে প্রভাতফেরী ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দলীয় কর্মীদের নজরুল স্মরণের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।