দিলীপ বলেন শোনে সর্বজন

ভিডিয়ো ঘিরে বিজেপির অস্বস্তির কারণ একাধিক। প্রথমত, কবে কোথায় এই ঘটনা ঘটল, জেলার নেতাদের কাছে তা পরিষ্কার নয়।দ্বিতীয়ত, কাদের উদ্দেশ্যে দিলীপকে ধমক দিতে দেখা যাচ্ছে, তা-ও বুঝতে পারছেন না তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৪
Share:

দিলীপ ঘোষের সেই বিতর্কিত ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।

কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজয় এবং হিন্দু প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, তা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। যদিও বুধবার সন্ধ্যায় দিলীপ নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন তিনি ওই সব কথা বলেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘দলের অন্দরে কর্মীদের সঙ্গে যে কথা বলা হয়, তা তো জনসভার মতো হয় না!’’

Advertisement

এই ভিডিয়ো ঘিরে বিজেপির অস্বস্তির কারণ একাধিক। প্রথমত, কবে কোথায় এই ঘটনা ঘটল, জেলার নেতাদের কাছে তা পরিষ্কার নয়। দ্বিতীয়ত, কাদের উদ্দেশ্যে দিলীপকে ধমক দিতে দেখা যাচ্ছে, তা-ও বুঝতে পারছেন না তাঁরা। জেলাস্তরে বিশেষ চেনা নয় এই মুখগুলি। তৃতীয়ত, ভিড়ে মিশে থেকে কে ভিডিয়ো তুলে বাইরে ছড়িয়ে দিল, তা-ও আঁচ করা যাচ্ছে না। চতুর্থত, রানাঘাট কেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করে কৃষ্ণনগরকে হেয় করা এবং ‘মায়া’ দেখাতে না চাওয়া নেতাদের অনেককেই চাপে ফেলে দেবে। পঞ্চমত, হিন্দুমৃত্যুর প্রসঙ্গ।

আনন্দবাজার পত্রিকা ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ঘরোয়া পোশাকে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন দিলীপ। কৃষ্ণনগর প্রসঙ্গে এক কর্মীর কাছে জানতে চাইছেন, “হারল কেন বিজেপি ওখানে?” কর্মী বলছেন, “আটকে দিয়েছে না? সংগঠন তো ওখানে ছিল না, না?” দিলীপ: “সংগঠন কে করবে? আমি গিয়ে করব না হিন্দুরা করবে?” কর্মী: “আমরা তো করছি।” প্রসঙ্গ স্পষ্ট না হলেও দিলীপকে বলতে শোনা যায়: ‘‘...কিছু মরুক না, এত কষ্ট পাচ্ছেন কেন?’’ কাতর গলায় কর্মী বলেন: ‘‘প্লিজ় দাদা...।’’

Advertisement

তার পরেই দিলীপকে বলতে শোনা যাচ্ছে: “না, কোনও মায়া নেই। কৃষ্ণনগরের লোকের প্রতি কোনও মায়া নেই। ওরা জুলুবাবুকে (সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়) হারিয়েছে। আবার কল্যাণকে (চৌবে) হারাল। কিসের জন্য ওদের জন্য করব আমরা? আর পাশে দেখুন, আড়াই লক্ষ ভোটে জিতিয়েছে রানাঘাট।” তার পরেই ফের বলছেন, “আপনি কেন কষ্ট পাচ্ছেন? নির্মম হোন। হিন্দু অনেক মরেছে। আরও কিছু মরুক।” অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি নেতারা বলছেন, যে ভাবে তৃণমূল ও সিপিএম থেকে দলে-দলে লোক ঢুকেছে তাতে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। দিলীপ শেষ বার কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে এসেছিলেন লোকসভা ভোটের আগে প্রচারে। আর ফল প্রকাশের পর এসেছিলেন রানাঘাট কেন্দ্রে। রানাঘাট কেন্দ্রের এক বিজেপি নেতার কথায়, “কে এই কাজ করল তা চিহ্নিত করতে না পারলে কিন্তু আরও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। দলের গোপনীয়তা বলে কিছু থাকবে না।” অনেকে আবার মনে করছেন, এটা আসলে বিজেপির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের ফল। দিলীপকে বেকায়দায় ফেলতেই তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিয়েছে।

প্রবল হিন্দুত্ব হাওয়া তুলেও কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে সমস্ত হিন্দু ভোট এক করতে পারেনি বিজেপি। জিতেছেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। রানাঘাটে বিজেপির জয়ের পিছনে রয়েছে মতুয়া ভোট। কিন্তু দিলীপের মন্তব্যে সার্বিক ভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা জেলা বিজেপির অনেক নেতারই। তাঁদের মতে, রানাঘাট ও কৃষ্ণনগরের মধ্যে লড়িয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যদিও কেউই প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

সবচেয়ে বিপজ্জনক মন্তব্য রয়েছে শেষে, যার নানা ব্যাখ্যা হতে পারে। তবে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের দাবি, ‘‘কোন পরিপ্রেক্ষিতে উনি এই কথা বলেছেন, সেটা দেখতে হবে। হয়তো এই অভিমান থেকে বলেছেন যে হিন্দুরা এত মার খাচ্ছে, তার পরেও যদি তাদের হুঁশ না ফেরে, তবে মরাটাই ভবিতব্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন