জালিয়াতির অভিযোগে ধৃত নেতা

পুরসভা সূত্রে খবর, সল্টলেকের জমি লিজ-চুক্তিতে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে নগরোন্নয়ন দফতর ও স্থানীয় পুরসভা থেকে অনুমোদনের পরেই তা বিক্রি সম্ভব। দীপ্তিদেবীর দাবি, এই সব প্রক্রিয়া মধুসূদনই করিয়ে দেবেন বলেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

আদালতের পথে অনুপম দত্ত। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল সল্টলেকের বিজেপি নেতা অনুপম দত্তকে। শুক্রবার রাতে দমদম বিমানবন্দরে। অনুপম আগে তৃণমূলে ছিলেন। শনিবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

Advertisement

সম্প্রতি সল্টলেকের বাসিন্দা দীপ্তি সেন পুলিশে অভিযোগ করেন, বিডি ব্লকে তাঁর দিদি বাণী দে-র একটি বাড়ি রয়েছে। ২০১৫ সালে বাণীদেবী মারা যান। তার পরে ওই বাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে সাত নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর তথা বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্তের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দীপ্তিদেবীর দাবি, অনুপম তাঁকে স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসে যেতে বলেন এবং মধুসূদন চক্রবর্তী নামে জমি-বাড়ির এক দালালের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।

পুলিশ দীপ্তিদেবীর থেকে জেনেছে, মধুসূদনের মাধ্যমে এক কোটি দশ লক্ষ টাকায় ওই বাড়ির হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। সেই টাকার একাংশ দীপ্তিদেবী ধাপে ধাপে চেকের মাধ্যমে পেয়ে যান। কিন্তু বাকি টাকার একটা বড় অংশ তাঁকে আর দেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁকে শাসানো হয়েছে। দীপ্তিদেবী জানান, মধুসূদন তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, বাণীদেবীর উইল সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল এবং বাণীদেবী তিন বোনের নামে উইল করে গিয়েছেন। আরও অভিযোগ, মধুসূদন পরে তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, ওই বাড়ির দলিল জাল। পুলিশে কিছু জানালে উল্টে দীপ্তিদেবীকেই ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশ মধুসূদন চক্রবর্তী ও সুরজিৎ নাগ নামে দুই ব্যক্তিকে ধরে। তাঁদের জেরা করে অনুপমের নাম উঠে আসে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে খবর, সল্টলেকের জমি লিজ-চুক্তিতে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে নগরোন্নয়ন দফতর ও স্থানীয় পুরসভা থেকে অনুমোদনের পরেই তা বিক্রি সম্ভব। দীপ্তিদেবীর দাবি, এই সব প্রক্রিয়া মধুসূদনই করিয়ে দেবেন বলেছিলেন। পুলিশ জেনেছে, মধুসূদন দীপ্তিদেবীকে সব জাল নথি দেখান। ঘটনাচক্রে মধুসূদন ও সুরজিৎকে এ বছরই একটি জালিয়াতির অভিযোগে ধরা হয়। পুলিশের দাবি, বিডি ব্লকের ঘটনায় অনুপমেরও ভূমিকা রয়েছে।

যে হেতু সল্টলেকে নগরোন্নয়ন দফতর বা পুরসভাকে না জানিয়ে বাড়ি বিক্রি করা যায় না, সে ক্ষেত্রে দীপ্তিদেবীও কি বেআইনি ভাবে বাড়ি বিক্রির অপরাধে পড়বেন? পুলিশের দাবি, দীপ্তিদেবীকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেই বাড়ি বিক্রি হবে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ খাটে না।

সল্টলেকে বেআইনি বাড়ি হস্তান্তর নতুন নয়। নগরোন্নয়ন দফতর ইতিমধ্যে কিছু কড়া পদক্ষেপ করেছে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে এই বাড়ি বিক্রি সম্ভব হল? পুরসভা বা নগরোন্নয়ন দফতর কিছুই জানতে পারেনি? এ দিন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এ সব বেআইনি ভাবে হচ্ছে। আমরা বারবার সতর্ক করছি যে, নগরোন্নয়ন দফতরের শংসাপত্র ছাড়া জমি-বাড়ি কিনবেন না। তা হলে ফেঁসে যাবেন। এ নিয়ে ফের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।’’

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। পুরসভার কাছে হস্তান্তর সম্পর্কিত অভিযোগ এলে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে পৌঁছে দেওয়া হয়। যে সময়ের ঘটনা, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই কিছু বলতে পারব না।’’

তৎকালীন পুর চেয়ারম্যান ছিলেন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি মন্তব্য করেননি। সল্টলেকের বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, এত দিন বাড়ি বেআইনি ভাবে হস্তান্তরে দালালদের নাম শোনা যেত। এ বার প্রশাসনের লোকেদের নামও জড়াচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, বেআইনি হস্তান্তর চক্রের শিকড় কত গভীরে।

শনিবার অনুপমকে আদালতে তোলা হলে তাঁর আইনজীবী জামিনের আবেদনে বলেন, তাঁর মক্কেল আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। বাড়ি বিক্রিতে তাঁর ভূমিকা নেই। তাই জালিয়াতি বা প্রতারণার অভিযোগ তাঁর ক্ষেত্রে খাটে না। তবে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য হাতে এসেছে, তা যাচাইয়ের জন্য অনুপমকে হেফাজতে নেওয়া জরুরি ছিল।

এ দিন আদালতে উপস্থিত বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার-সহ আরও কিছু নেতার দাবি, এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। দল অনুপমের পাশে আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন