Attack on Khagen Murmu

শুধু ‘দিদি’ নন, গোটা ‘ইন্ডিয়া’র অস্বস্তি বাড়াতে দেশের বিভিন্ন জনজাতি এলাকায় খগেন মুর্মুর রক্তাক্ত ছবি দেখাবে বিজেপি!

এই ঘটনার জের যে বিজেপি অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চায়, তা সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমাজমাধ্যম পোস্ট থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বুধবার সকাল থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও সমাজমাধ্যম বিভাগ নিবিড় প্রচার শুরু করেছে খগেনের উপরে হামলার ঘটনা নিয়ে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৫
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের। কিন্তু তা নিয়ে গোটা দেশে প্রচার শুরুর তোড়জোড় করছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গের দুর্গত এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে গত সোমবার আক্রান্ত হন বিজেপির এক সাংসদ ও এক বিধায়ক। সাংসদ খগেন মুর্মুর আঘাত যে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের তুলনায় বেশি, তা সোমবার দুপুরে খগেনের রক্তাক্ত মুখমণ্ডলের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই বোঝা গিয়েছিল। সেই ছবিকেই এ বার ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ করে তুলতে চাইছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, ভিন্‌রাজ্যেও বিভিন্ন জনজাতি প্রধান এলাকায় জনজাতি সাংসদের রক্তাক্ত মুখের ছবি বড় করে দেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল নয়। লক্ষ্য কংগ্রেস-সহ গোটা ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে ‘জনজাতি বিরোধী’ হিসাবে চিহ্নিত করা।

Advertisement

নাগরাকাটায় গত সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ খগেন এবং শঙ্করের উপরে যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের ছবি বিজেপি গত দু’দিনে বার বার তুলে ধরেছে। কিন্তু সাংসদ-বিধায়কের উপরে হামলার ৪৮ ঘণ্টা পরেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। শিলিগুড়ির হাসপাতালে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা মঙ্গলবার খগেনের সঙ্গে দেখা করে ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখনও কাউকে গ্রেফতার কেন করা হয়নি, সে প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলকে খানিক ‘রক্ষণাত্মক’ ভূমিকাই নিতে হচ্ছে। ভোটমুখী বঙ্গে বিজেপি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়।

জখম খগেনের ছবি সোমবার থেকেই প্রচারে আনতে শুরু করেছিল বিজেপি। ‘জনজাতি সাংসদের উপর হামলা’ সংক্রান্ত ভাষ্যকে জোর দিয়ে তুলে ধরা শুরু হচ্ছিল। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় ফিরে সে সুর আরও চড়ান রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে গিয়ে ওই হামলার নিন্দায় বার বার সরব হন। ওই ঘটনাকে যে বিজেপি অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চায়, তা সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমাজমাধ্যম পোস্ট থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। বুধবার সকাল থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও সমাজমাধ্যম বিভাগ নিবিড় প্রচার শুরু করে দিয়েছে খগেনের উপরে হামলার ঘটনা নিয়ে।

Advertisement

তৈরি করা হয়েছে জখম খগেনের ছবি সম্বলিত ‘ডিজিটাল পোস্টার’। গোটা দেশে তা দেখানোর জন্য ইংরেজিতে পোস্টার লেখা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার জন্য বাংলায়। কোনও পোস্টারে শুধু খগেনের ছবি। কোনওটিতে জখম খগেনের মুখের পাশে মমতার মুখ। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘ছিঃ! রক্তপিপাসু তৃণমূলের রোষানলে জনজাতিরাও!’ বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি ও সমাজমাধ্যম বিভাগের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালবীয় সেই পোস্টার নিজের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘জাতের বিষয়ে জ্ঞান দেওয়ার কোনও সুযোগ যাঁরা হাতছাড়া করেন না, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে খুনি ভিড় কর্তৃক বিজেপির জনজাতি সাংসদের উপরে হামলার পরে সুবিধাবাদীর মতো নীরব।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী এবং বাম বাস্তুতন্ত্রের কাছে জনজাতি জীবনের কি কোনও মূল্য নেই? না কি তাঁদের চয়নাত্মক আক্রোশের রাজনীতিতে জনজাতিরা গুরুত্বহীন?’’

পোস্টের এই ভাষ্য থেকেই স্পষ্ট যে, খগেনের উপরে হামলার ঘটনাকে গোটা দেশের সামনে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। কংগ্রেস-সহ গোটা ‘ইন্ডিয়া’ যেহেতু বিজেপিকে ‘উচ্চবর্ণের দল’ বা ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, সেহেতু পাল্টা চালে এ বার বিরোধী জোটের ‘জনজাতি দরদ’কে প্রশ্নের মুখে ফেলতে তৎপর বিজেপি।

বিজেপির এই প্রচারের প্রাথমিক প্রয়োগশালা স্বভাবতই পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যের জনজাতি প্রধান এলাকাগুলিতে পাওয়া সমর্থন পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে কিছুটা হারিয়েছিল বিজেপি। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে আবার তা ফিরে পেতে বাংলার সব জনজাতি প্রধান এলাকায় জখম খগেনের ছবি ব্যানার আকারে ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা পরিকল্পনা করছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।

বাংলার বাইরেও ওই ঘটনাকে বড় করে প্রচারে আনার নেপথ্যে বিজেপির দু’টি উদ্দেশ্য। প্রথম, জাতীয় রাজনীতিতে মমতার ভাবমূর্তিকে ধাক্কা দেওয়া। দ্বিতীয়, কংগ্রেস বা জেএমএমের মতো দলকেও অস্বস্তিতে ফেলা। বিজেপি নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলতে চান, দলিত এবং জনজাতিদের ‘স্বার্থরক্ষা’র নাম করে যে সব দল সারা বছর বিজেপিকে নিশানা করে, তারা জনজাতি সাংসদ রক্তাক্ত হওয়ার পরে নীরব কেন? বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, কংগ্রেস বা জেএমএমের মতো দলগুলির জন্য বিজেপির এই প্রচার ‘শাঁখের করাত’ হবে। খগেনের উপরে হামলার নিন্দা না করলে তাদের ‘জনজাতি প্রীতি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নিন্দা করলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে ফাটল চওড়া হবে।

বিহারে ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আক্রান্ত খগেন যে আসনের সাংসদ, সেই উত্তর মালদহ ঘটনাচক্রে বিহার এবং ঝাড়খণ্ড লাগোয়া। ফলে বিহারের জনজাতি এলাকাগুলিতে এই প্রচার প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিজেপি মনে করছে। বিহারের পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডেও জনজাতি ভোটে ভর করেই বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন জেএমএম প্রধান হেমন্ত সোরেন। ঝাড়খণ্ড বিজেপির খগেন-প্রচার জোরকদমে শুরু হলে হেমন্তকেও অবস্থান নিতে হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement