(বাঁ দিকে) আক্রান্ত শঙ্কর ঘোষ। (ডান দিকে) রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়ির সিটে শুয়ে সাংসদ খগেন মুর্মু। ছবি: সংগৃহীত।
আহত বিজেপি বিধায়ক খগেন মুর্মুকে মঙ্গলবার শিলিগুড়ির হাসপাতালে গিয়ে দেখে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের দাবি, তাঁকেও দেখতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অনুমতি দেননি। খগেনের পাশাপাশি শঙ্করের উপরেও হামলার অভিযোগ উঠেছে। তিনি কটাক্ষ করে এ-ও জানান যে, খগেনকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে আখেরে কোনও লাভ হবে না মুখ্যমন্ত্রীর। এই পদক্ষেপ তাঁর ‘রাজনীতির উদাহরণ’। হাসপাতালে বসেই কটাক্ষ করলেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেনকে শিলিগুড়ির হাসপাতালে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এই নিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করলেন শঙ্কর। তিনি জানান, এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন। তিনি এ-ও দাবি করেছেন, তাঁকে দেখতে যেতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান। কিন্তু তিনি ‘অনুমতি’ দেননি। সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘সকালে হাসপাতাল প্রশাসন আমাকে স্বল্প নোটিসে তাঁর প্রস্তাবিত সফরের বিষয়ে জানিয়েছিল। আমি অনুমতি দিইনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সাংসদ যেহেতু আইসিইউ-তে রয়েছেন এবং কথা বলতে অক্ষম, তাই তাঁর সম্মতির প্রশ্নই ওঠে না।’’
মুখ্যমন্ত্রী যে খগেনের সঙ্গে দেখা করেছেন, সেই ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘তিনি সাংসদ খগেন মুর্মুর সঙ্গে এক মিনিট দেড় মিনিটেরও কম সময় কাটিয়েছেন, এ সময় তাঁর (মমতার) মিডিয়া টিম ছবি তুলেছে এবং ভিডিও করেছে প্রচারের উদ্দেশ্যে। সাংসদ খগেন মুর্মুর সঙ্গে কোনও কথোপকথন হয়নি, কারণ তিনি কারও সঙ্গে কথা বলার অবস্থায় নেই।’’ এখানেই থামেননি শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোংরা ও কুৎসিত রাজনীতির আরও একটি উদাহরণ।’’ তাঁর আরও দাবি, এ সব করে আখেরে মমতার লাভ হবে না। বিজেপি বাংলার মানুষের পাশে থাকবে।
সোমবার বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপির দুই প্রতিনিধি। এক জন মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন এবং অপর জন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সবচেয়ে বেশি জখম হন খগেন। মারের চোটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে তাঁর মুখ থেকে। শঙ্করকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা হয়। শঙ্করের অভিযোগ, কয়েক জন ‘দিদি-দিদি’ বলতে বলতে পিছন থেকে তাঁদের আক্রমণ করেন। বর্তমানে খগেন এবং শঙ্কর হাসপাতালে রয়েছেন। খগেনের বাঁ চোখের নিচের হাড়ে আঘাত লেগেছে বলে জানা যায়। স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর তুঙ্গে ওঠে। নাগরাকাটায় ওই ঘটনার নিন্দা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার খগেনকে দেখতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “লোকসভার স্পিকার গত কাল (সোমবার) রাজ্য সরকারের কাছে নোটিস দিয়ে রিপোর্ট তলব করেছেন। রিপোর্ট দিতে দেরি করা হলে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব অনুসারে আমরা পদক্ষেপ করব।” অন্য দিকে, তাদের দলের সাংসদ এবং বিধায়কের উপর হামলার ঘটনায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-কে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। ঘটনার এত ঘণ্টা পরেও কেন কাউকে গ্রেফতার করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।