বিমাননগরীতে অনিচ্ছুক চাষির পাশে বিজেপি

অন্ডালে প্রস্তাবিত বিমাননগরীতে জমি আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিল বিজেপি। ইতিমধ্যেই ওই বিমানবন্দর চালু হওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গিয়েছে। অনিচ্ছুক জমিদাতা, বর্গাদার ও খেতমজুরদের দাবিদাওয়া মেটেনি। ফলে, জট কাটিয়ে বিমানবন্দর কবে চালু হবে, তা-ও অনিশ্চিত। বিজেপি-র বক্তব্য, বর্ধমানের খনি এলাকায় ওই জমির নীচে যে ভাল মানের কয়লার স্তর রয়েছে, কোল ইন্ডিয়া গোড়াতেই তা জানিয়ে দিয়েছিল। তার উপরে, ৬৩০ জন (যাঁদের হাতে প্রায় ১০৯ একর জমি রয়েছে) সরকারের দেওয়া দরে জমি দিতে অনিচ্ছুক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০০
Share:

অন্ডালে প্রস্তাবিত বিমাননগরীতে জমি আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিল বিজেপি।

Advertisement

ইতিমধ্যেই ওই বিমানবন্দর চালু হওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গিয়েছে। অনিচ্ছুক জমিদাতা, বর্গাদার ও খেতমজুরদের দাবিদাওয়া মেটেনি। ফলে, জট কাটিয়ে বিমানবন্দর কবে চালু হবে, তা-ও অনিশ্চিত।

বিজেপি-র বক্তব্য, বর্ধমানের খনি এলাকায় ওই জমির নীচে যে ভাল মানের কয়লার স্তর রয়েছে, কোল ইন্ডিয়া গোড়াতেই তা জানিয়ে দিয়েছিল। তার উপরে, ৬৩০ জন (যাঁদের হাতে প্রায় ১০৯ একর জমি রয়েছে) সরকারের দেওয়া দরে জমি দিতে অনিচ্ছুক। বিমাননগরীর নামে জোর করে নেওয়া জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়া হচ্ছে। রাজ্য বিজেপি-র তরফে বিষয়টি সবিস্তারে দিল্লিতে জানানো হচ্ছে। অন্ডাল বিমাননগরী নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বেঙ্গল এরোট্রোপলিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ ঘোষ অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

গত শনিবার অন্ডালের সুরভি প্রেক্ষাগৃহে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল ‘অন্ডাল ব্লক কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’। রাজ্য বিজেপি-র সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, রাজ্য কমিটির সদস্য নরেশ কোনার এবং আসানসোল জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার সেখানে গিয়ে কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সুভাষবাবুর কটাক্ষ, “তৃণমূল সিঙ্গুরে এক কথা বলল, আর এখন অন্ডালে তারাই জোর করে জমি নিচ্ছে। অন্ডালের জমি আন্দোলনে বিজেপি পূর্ণ সহযোগিতা করবে।” নরেশবাবুর বক্তব্য, “সরকারি উদ্যোগ হলে কথা ছিল। বেসরকারি উদ্যোগের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমি নেওয়া চলবে না।” অনিচ্ছুক চাষিদের পাশে দাঁড়াতে একগুচ্ছ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁদের দাবি।

অন্ডালে প্রস্তাবিত বিমাননগরীর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল বাম আমলে। জমিদাতাদের অভিযোগ, ২০০৭ থেকে কার্যত জোর করেই অনেকখানি জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ৬৩০ জন জমি দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। কমিটির সম্পাদক সুশীল ঘোষ বলেন, “জাতীয় সড়কের ধারে জমির দাম অন্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। অথচ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় সে কথা না ভেবেই জমির দাম ঠিক করা হয়। তাই অনেকে চেক নেননি।” ক্ষতিপূরণ পাননি প্রায় হাজার তিনেক খেতমজুর এবং বর্গাদারও। সিপিএম নেতা তথা আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী অবশ্য দাবি করেন, জোর করে জমি নেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি। বর্গাদার ও খেতমজুরদের নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও কোনও ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতা আছে বলে তিনি জানেন না।

রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে জমিদাতাদের একটা বড় অংশ আশা করেছিলেন, এই বার পরিস্থিতি বদলাবে। কেননা মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর সরকার কারও জমি অধিগ্রহণ করবে না। যে কারণে কাটোয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার জন্য এনটিপিসি-কেই জমি কিনতে নামতে হয়েছে। অনিচ্ছুক চাষিদের অন্যতম পার্থ পান্ডে বলেন, “বাম জমানায় যখন জোর করে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়, তখন জমি বাঁচাতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। সরকারে এসে তৃণমূল ডিগবাজি খেয়েছে। তারাই এখন জোর করে জমি হাতাচ্ছে।” পার্থবাবুদের মতো অনিচ্ছুক জমিদাতারা অনেকেই তাই বিজেপি-র শরণাপন্ন হয়েছেন।

জমিদাতাদের আক্ষেপ, প্রাথমিক অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিমাননগরী হবে ভেবে ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ অনেকে জমি দিয়েছিলেন। তা চালু হয়নি। অথচ সেখানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছে। বাম আমলে কাঠা প্রতি মাত্র ১২,৫০০ টাকায় ওই জমি তাঁদের কাছ থেকে কিনেছিল সরকার। এখন সেই জমিই ৬.৮০ লক্ষ টাকা কাঠা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, ‘জমি কিনলে দামি গাড়ি ফ্রি’। পার্থবাবুর প্রশ্ন, “এটা কোন ধরনের ব্যবসা?” সুভাষবাবুরও অভিযোগ, “ওই জমিতে বিমানবন্দর গড়ার কথা হলেও সেখানে কার্যত আবাসন প্রকল্প গড়ার কাজ হচ্ছে।”

যাঁর আমলে এই প্রকল্পের কাজ গতি পেয়েছিল, রাজ্যের সেই প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করছেন, বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সস্তা রাজনীতি করছে। তাঁর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়ন করতে চান, কিন্তু তা কাউকে অসন্তুষ্ট করে নয়। মন্ত্রী থাকাকালীন আমিই ওঁদের কমিটি গড়ে দিয়েছিলাম। বিজেপি-কে তখন দুরবিন দিয়ে খুঁজতে হত। সেই সময়েও আমরা চাষিদের আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম, আজও সরে আসব না।”

বিজেপি কি তবে রাজ্যের উন্নয়নের বাধা দিতে চাইছে?

বিজেপি-র নির্মল কর্মকারের দাবি, “উন্নয়নবিরোধী তো নই-ই, বরং আমরা যে কতটা উন্নয়নপন্থী, প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজিই তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত।” সুভাষবাবুর আরও ব্যাখ্যা, “আসলে এটা তো শুধু জমির বিষয় নয়। অন্ডালে প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পের নীচে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। তাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বিমাননগরী বা আবাসন গড়াকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।”

আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র বক্তব্য, উন্নয়ন বলতে আগে তিনি পানীয় জল, ভাল রাস্তাঘাট, পরিচ্ছন্নতা বোঝেন। বিমাননগরী নয়। রাতে মুম্বই থেকে তিনি বলেন, “উন্নয়ন করতে হলেই কি চাষিদের শোষণ করে শিল্প গড়তে হবে? আমরা সেই উন্নয়নের পক্ষপাতী নই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন