বিক্ষোভ: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি ঘিরে বিজেপি কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপর বিজেপির রাজ্য দফতরের কাছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন বিজেপি কর্মীরা। বুধবার বিকেলে বেথুন কলেজে একটি অনুষ্ঠান সেরে বিধানসভার দিকে যাচ্ছিলেন মন্ত্রী। সেই সময়েই ধর্মতলার দিকে যাচ্ছিল বিজেপির একটি মিছিল। মিছিল থেকে এক দল ছুটে গিয়ে পার্থবাবুর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে। তাঁর গাড়িতে চড়-চাপড় মারা হয় এবং ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করা হয়। সবটাই ঘটে পুলিশের উপস্থিতিতে। কোনও ক্রমে মন্ত্রীর গাড়িকে জটলা থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারে পুলিশ। তবে বিজেপির মিছিল চলাকালীন মন্ত্রীর গাড়ি এসে পড়ল কেন এবং পুলিশ এ ব্যাপারে আগাম সতর্ক ছিল কি না, সে সব কোনও প্রশ্নেরই স্পষ্ট জবাব দিতে চায়নি লালবাজার। বীরভূম সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে পার্থবাবুর সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনায় ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কাঁথিতে মঙ্গলবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভার পরে সেখানে অশান্তির প্রতিবাদে এ দিন রাজ্য দফতরের কাছ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে বিজেপি। সাড়ে তিনটের পর মিছিল শুরু হয়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে কলুটোলা মোড় পার হয়ে মিছিল তখন এগোচ্ছে। হঠাৎ মিছিলের স্লোগান ভেদ করে রব শোনা যায়— ‘পার্থ পার্থ’। নিমেষের মধ্যে দেখা যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে রং সাইড অর্থাৎ দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাওয়ার পথ ধরে দক্ষিণমুখী এগিয়ে আসছে মন্ত্রীর কনভয়। ফলে দাঁড়িয়ে গিয়েছে ওই রাস্তার উত্তরমুখী গাড়িগুলি। আচমকা মিছিল থেকে এক দল যুবককে রে-রে করে ‘পার্থ চোর, পার্থ চোর’ বলতে বলতে তেড়ে যেতে দেখা যায় মন্ত্রীর গাড়ির দিকে। তাঁদের কারও কাঁধে বিজেপির পতাকা। কারও হাতে কালো সোয়েটার। কনভয়ের গাড়িগুলিও ঊর্ধ্বশ্বাসে এগোবার চেষ্টা করে। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা উত্তরমুখী গাড়িগুলির ভিড়কে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে মন্ত্রীর গাড়িকে মাঝে মাঝেই গতি কমিয়ে দিতে হচ্ছিল। আর সেই সুযোগেই মন্ত্রীর গাড়ির কাছে চলে যাচ্ছিলেন বিজেপির কর্মীরা। জটলায় পার্থবাবুর গাড়ি আটকে পড়লে তখনই চড়-চাপড় মারা হয় গাড়িতে। পুলিশ এবং মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা অবশ্য শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীর গাড়িকে রাস্তা পার করে মেডিক্যাল কলেজের সামনে দিয়ে বের করে নিয়ে যান। তখনও মন্ত্রীর গাড়ির পিছনে ধাওয়া চলছে।
পার্থবাবু পরে বিধানসভা ভবনে বলেন, ‘‘দু’-এক জন হিন্দিতে কিছু বলছিলেন। আগেও এ সব দেখেছি। এ সবের কোনও রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই।’’ সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তাকে ফোন করে ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানান শিক্ষামন্ত্রী। যুগ্ম নগরপাল (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, ‘‘একটি মিছিলের জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি ধীর গতিতে চলছিল। মেডিক্যাল কলেজের কাছে জনাকয়েক যুবক হাতে পোস্টার নিয়ে ছুটে আসার আগেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। কেউ মন্ত্রীর গাড়ি স্পর্শ করতে পারেনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ ভিআইপি’র গাড়ি আসতে দেখে পুলিশ আগে থেকে কেন সতর্ক ছিল না? এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।