Rally of BJP

মমতার প্রিয় এবং পছন্দের জমিতেই মঞ্চ বাঁধতে চায় বিজেপি, লক্ষ বঞ্চিতের সমাবেশ আশু লক্ষ্য পদ্মের

তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ পাওনা টাকা থেকে বঞ্চিত রাজ্য। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, ‘যোগ্য’ লোকেরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাজ্যে। সেই দাবি নিয়েই পথে নামতে চায় তারা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪০
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)।

রাজভবনের সামনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের সময়েই শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছিলেন, নভেম্বরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের সমাবেশ হবে কলকাতায়। রবিবার রাতে রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে সেই ঘোষণা সাংগঠনিক সিলমোহর পেল। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, আগামী ২৯ নভেম্বর হবে সেই সমাবেশ। শুধু তা-ই নয়, বিজেপি ওই সমাবেশ করতে চায় ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউজ়ের সামনে। ঠিক যেখানে প্রতি বছর ২১ জুলাই তৃণমূল তাদের ‘শহিদ দিবস’ পালনের মঞ্চ বাঁধে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় এবং পছন্দের সেই জায়গাতেই লক্ষ কর্মীর জমায়েতের লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

১০০ দিনের কাজে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না বলে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ করছে নবান্ন তথা শাসকদল তৃণমূল। গত ২ অক্টোবর দিল্লিতে সেই আন্দোলন নিয়ে যান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। এর পরে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব না হওয়ায় কলকাতায় ফিরে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেন। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি কলকাতায় আসেন অভিষেকের অভিযোগের জবাব দিতে। তখন মন্ত্রীর সামনেই বিরোধী দলনেতা পাল্টা অভিযোগ তোলেন, রাজ্যের বহু যোগ্য মানুষ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাননি। সেই ‘বঞ্চিত’ মানুষদের নিয়েই কলকাতায় হবে বড় সমাবেশ। রবিবার কোর কমিটির বৈঠকে সেই সমাবেশের স্থান-কাল চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি এটাও ঠিক হয়েছে যে, ওই সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি আসবেন। চেষ্টা করা হবে যাতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহকেও উপস্থিত করানো যায়।

রবিবার বৈঠকে বসে রাজ্য বিজেপির কোর কমিটি। নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি এই সভা করার জন্য যে স্থান বেছেছে তা নিয়ে বিতর্ক অবশ্যম্ভাবী। অতীতেও বিতর্কের নজির রয়েছে। তবে রাজ্য বিজেপির আশা, রাহুল সিংহ রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে ওই জায়গায় সভা করতে পুলিশ অনুমতি না দিলেও শেষে আদালতের নির্দেশে তা সম্ভব হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও ওই বিষয়ে যত দূর সম্ভব যেতে চায় বিজেপি। তবে ওই সমাবেশের আগে রাজ্য জুড়ে পথে নামার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। ঠিক হয়েছে, নভেম্বরের গোড়া থেকেই ১০০ দিনের কাজের পাশাপাশি অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে ব্লকে ব্লকে বিডিও অফিস ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পরে রেশন দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে রেখেও আন্দোলনের ভাবনা রয়েছে বিজেপির।

Advertisement

রবিবার সন্ধ্যায় বিজেপির সল্টলেক দফতরে বসেছিল কোর কমিটির বৈঠক। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতাশুভেন্দু তো বটেই, হাজির ছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষও। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে এবং অমিত মালব্য। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি সুনীল বনসল। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় বিজেপির কমিটি নিয়ে নানা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। রাজ্য দফতরেও তার আঁচ পড়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও কোর কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কেউ কেউ কমিটিতে প্রয়োজনীয় বদল আনা দরকার বলেওঅভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা দাবি করেন, ভোটের আগে ‘কাজের লোক’ বেছে বদল আনতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বদল আনা হবে বলে সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে বিজেপির একটি সূত্রের খবর। একই সঙ্গে ঠিক হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই দল নিয়মিত পথে থাকবে। এর জন্য লাগাতার কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। তবে সেই কর্মসূচি কেমন হবে, তা রবিবার চূড়ান্ত হয়নি।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। অল্প সুদে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্পী ও কারিগরেরা। এর জন্য নির্দিষ্ট পোর্টালে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এ নিয়ে সোমবার রাজ্য বিজেপি সল্টলেকের দফতরে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। যার লক্ষ্য দলের জনপ্রতিনিধিদের এই প্রকল্পের খুঁটিনাটি জানানো। লক্ষ্য এ-ও যে, কী ভাবে দলের কর্মীদের এই প্রকল্পের সুযোগ দেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের সুবিধা দিয়ে নতুন লোকেদের কাছে টানার উদ্দেশ্যও রয়েছে বিজেপির। আবার সোমবারেই কলকাতায় এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ। উত্তর কলকাতার একটি হল ভাড়া নিয়ে সেখানে শুরু হচ্ছে দু’দিনের ‘বিস্তারক’ কর্মশালা। শুধু বাংলা নয়, পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লোকসভা ভোটে যাঁরা পূর্ণ সময়ের কর্মী হিসাবে কাজ করবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন