আক্রান্ত দিলীপ ঘোষ। ভেঙে দেওয়া হয়েছে রাজ্য বিজেপি সভাপতির গাড়ির লুকিং গ্লাস। —নিজস্ব চিত্র
আবার আক্রান্ত দিলীপ ঘোষ। প্রাতর্ভ্রমণ সেরে চা চক্রে যোগ দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। বচসা, ধস্তাধস্তি গড়িয়ে গেল গাড়ি ভাঙচুর পর্যন্ত। দিলীপকে রক্ষা করতে বন্দুক উঁচিয়ে ধরতে হয় দেহরক্ষীদের, খবর এমনও। তাঁর জনসংযোগ কর্মসূচি ভেস্তে দিতে তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়েছে বলে বিজেপির অভিযোগ। তবে তৃণমূল বলছে, ‘সামান্য ঘটনা’।
সম্প্রতি দিলীপ ঘোষ নিউটাউনের জোতভীম এলাকায় নতুন একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছেন। সেখানে প্রতিদিনই মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে জনসংযোগ সারেন তিনি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি চা চক্রের মতো ছোট ছোট কর্মসূচিও করেন। বুধবারও তেমনই একটি চা চক্রের আয়োজন করা হয় ওই আবাসনের পিছনের দিকে আঠেরতলা বাজারে। দিলীপ ঘোষ সেখানে যাওয়ার আগে থেকেই সেখানে গন্ডগোল শুরু হয়। তিনি পৌঁছনোর পর তা চরমে ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকেই দিলীপের কর্মসূচি ঘিরে স্থানীয় বিজেপি নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে প্রস্তুতি চলছিল। যেখানে দিলীপ ঘোষ থাকেন, তার কাছেই থাকেন আর এক বিজেপি নেতা অনুপম ঘোষ। চা চক্রের প্রস্তুতি দেখতে দিলীপের আগেই অনুপমরা আঠের তলা বাজারে যান। সেই সময় স্থানীয় কিছু লোকজন তাঁদের বাধা দেন বলে অভিযোগ। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, এই এলাকায় বিজেপির কোনও স্থান নেই, এখানে কোনও কর্মসূচি করা যাবে না। ওই সময় অনুপমবাবুর মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের দাবি, বাধাদানকারীরা তৃণমূল সমর্থক। পরিকল্পিত ভাবেই দলের রাজ্য সভাপতির কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছেন।
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: ভাড়াবাড়ি ছেড়ে ১২ ঘরের ফ্ল্যাটে উঠে গেলেন দিলীপ ঘোষ
এর পর ঘটনাস্থলে দিলীপ ঘোষ পৌঁছতেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। সেই সময় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, দিলীপবাবুর দেহরক্ষীরা বন্দুক উঁচিয়ে ধরতে বাধ্য হন। তাঁর গাড়ির একটি লুকিং গ্লাসও ভেঙে দেওয়া হয়। ওই এলাকা ভাঙড় বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। তাই এই কর্মসূচিতে ছিলেন বিজেপির দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা পূর্বের সাংগঠনিক সভাপতি হরেকৃষ্ণ দত্ত। তাঁর উপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত অন্য একটি জায়গায় নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে চা চক্র সারেন দিলীপ ঘোষ।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমি এই বাড়িতে থাকতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূল সমস্যা শুরু করেছে। কখনও এনকেডিএ, কখনও হিডকো, কখনও পুলিশকে দিয়ে নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। আজ আমার চা চক্রে বাধা দেওয়া হল। আমাকে তৃণমূলের এত কিসের ভয় বুঝতে পারছি না।’’
পরে সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপবাবু জানান, খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘যে সব কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানাবেন। আমি নিজেও পুলিশ কমিশনারকে মৌখিক ভাবে জানাব।’’ তৃণমূলকে নিশানা করে দিলীপবাবু বলেন, আমরা প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছি। যাঁদের জনসমর্থন কমছে, তাঁরাই ভয় পেয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: রাস্তায় না নামলে বেসরকারি বাস অধিগ্রহণ করার হুঁশিয়ারি মমতার
ঘটনার নিন্দা করেছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা সরকারি দল, তাদের কক্ষমতায় টিকে থাকার মূল হাতিয়ার সন্ত্রাস, পুলিশ, দুর্নীতি। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ বা মতাদর্শগত ভাবে বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু ভারতবর্ষের কোনও স্বীকৃত দলের নেতা-কর্মী কারও উপরেই হামলা মেনে নেওয়া যায় না। আমার সঙ্গে বিজেপিরও রাজনৈতিক বিরোধ আছে। কিন্তু আমি এটা অস্বীকার করতে পারব না যে, তারা মানুষের ভোটে জিতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু একটা দলের রাজ্য সভাপতিকে মারধরের ঘটনা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। দিলীপ ঘোষের উপর আক্রমণের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করছি।’’
বামেরাও একই সুরে নিন্দা করেছে হামলার ঘটনার। বিধানসভার বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘কারও রাজনীতি পছন্দ করি না বলে তাঁর উপরে হামলা করতে হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ তবে বিজেপি-কে প্রচার পাইয়ে দিতেই তৃণমূল এই সব হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সুজনের দাবি।
তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগই নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। এ দিনের ঘটনা এমন কিছু বড় ঘটনা নয় বলে মনে করছেন লোকসভার তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টিকে ‘সামান্য ঘটনা’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। আর রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও এক ধাপ এগিয়ে কটাক্ষ ছুড়েছেন দিলীপ ঘোষের দিকেই। দিলীপ এখন নিইটাউনে যে ফ্ল্যাটে থাকছেন, সেটির প্রসঙ্গ টেনে চন্দ্রিমা বলেছেন, ‘‘তিনি তো ১২ ঘরের মালিক। এখনও আক্রমণ করার পর্যায়েই যাননি।’’
তৃণমূল যা-ই বলুক, রাজ্য সভাপতির উপরে হামলার ঘটনাকে বিজেপি কিন্তু অত্যন্ত গুরুতর হিসেবেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। হামলার খবর পেয়ে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ দিন ফোন করেন দিলীপ ঘোষকে। বিশদে খোঁজখবর নেন। রাজ্য বিজেপি-ও পথে নেমে বিক্ষোভ দেখায়। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি কর্মীরা এ দিন বিক্ষোভ দেখান, পথ অবরোধ করেন। দক্ষিণবঙ্গে হুগলি জেলার ডানকুনি, সিঙ্গুর-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভের খবর এসেছে। দিলীপ ঘোষের উপরে হামলার প্রতিবাদে হাওড়ার বিজেপি কর্মীরা এ দিন নবান্ন অভিযানের চেষ্টাও করেন। তবে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়।